একটি কৃষি সমবায়ের ভোটে পুলিশকর্মীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের ৯ মাস পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের ৩ সিপিএম নেতাকে শুক্রবার গ্রেফতার করল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে সুবল বসাক গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান, বলরাম ঘোষ প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান এবং অচিন্ত্য চক্রবর্তী সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য। পুলিশের দাবি এই তিন জনেই ‘ফেরার’ ছিলেন। তল্লাশি চলছে ‘ফেরার’ প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরীর খোঁজেও। সিপিএম দাবি করেছে, কোনও নেতাই ফেরার নন। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’-র জন্যই শাসক দল পুলিশ বাহিনীর অপব্যবহার করছে। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। |
এই দিন সকাল ১১টা নাগাদ র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স নিয়ে গঙ্গারামপুরে সিপিএমের দলীয় অফিসে ঢুকে ওই তিন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরে তাঁদের হরিরামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ, শনিবার ধৃতদের গঙ্গারামপুর আদালতে তোলার কথা। নারায়ণবাবু ও মানবেশবাবুর খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়েছে জেলা পার্টি অফিস, তাঁদের বাড়ি এবং একটি অনাথ আশ্রমেও। তবে তাঁদের ‘খোঁজ মেলেনি’। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “যে ভাবে তল্লাশি ও গ্রেফতারি পরওয়ানা ছাড়াই নারায়ণবাবুর বাড়ি এবং গঙ্গারামপুরের পার্টি অফিস তছনছ করা হয়েছে এবং দলের তিন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতেই এমন অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ করা হচ্ছে।” মানবেশবাবুর দাবি, “ভোটের আগে পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়ে বিরোধীদের হয়রানি করছে।” নারায়ণবাবু, মানবেশবাবু ও ধৃত তিন নেতাই নিয়মিত প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতেন। সুবলবাবু বলেন, “আমি তো পুরসভায় যাই। সরকারি অফিসেও যাতায়াত করতে হয়। কে ঠিক করল আমি ফেরার?” নারায়ণবাবুরও বক্তব্য, তাঁরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের অবশ্য বক্তব্য, “আইনের চোখে অপরাধী হলে ভেদাভেদ হবে না। পুলিশ আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিয়েছে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, আইন মেনে সব কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে ফেরার আসামিদের ধরতে অভিযানে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। দমদমা কৃষি সমবায়ের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিযোগের মামলায় অভিযুক্তরা অনেকে ফেরার। তাঁদের মধ্যে ৩ জনকে গঙ্গারামপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” তিনি দাবি করেন, গ্রেফতারি পরওয়ানা দেখিয়েই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই তিন নেতাকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে দমদমা কৃষি সমবায় সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’দফায় তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের গণ্ডগোল ও মারামারি হয়। পুলিশও আক্রান্ত হয় বলে অভিযোগ। তারপরেই একাধিক জামিন অযোগ্য ফৌজদারি অভিযোগে পুলিশ সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। |