কর্মী-সমর্থকদের অনেক আগে সভায় ডেকে অপেক্ষা করানোর জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মৃদু ধমক খেলেন দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। মানবাজারের ঝাড়বাগড়া কলেজ ময়দানে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার কিছু পরেই শ্রোতাদের একাংশ সভা ছাড়তে শুরু করেন। তা নজরে যেতেই বক্তৃতা থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পিছনে মুখ ফিরিয়ে বলেন, “হলটা কী শান্তি? আমি তো তোমাকে পাঁচটায় সভার সময় দিয়েছিলাম। তোমরা বেলা ৩টেয় লোককে টাইম দিয়েছে। অনেক ক্ষণ ধরে ওঁরা বসে রয়েছেন। ওঁদের বাড়ি যেতে দাও।” এরপরেই শান্তিবাবু-সহ দলের নেতারা মঞ্চ থেকে বাড়ির পথ ধরা কর্মীদের হাত নেড়ে বসার জন্য অনুরোধ করা বন্ধ করে দেন।
মুখ্যমন্ত্রী সভা ছেড়ে যাওয়া শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যাঁরা বাড়ি ফিরতে চান, ধীরে ধীরে বেরোন। আমার আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আপনারা তো জানেন, রাস্তার মানুষ আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আমাকে তো অনেকগুলো কথা বলতে বলতে আসতে হয়।”
এরপরেই ক্যামেরার মুখ মাঠ ছেড়ে যাওয়া দর্শকদের দিকে ঘুরতেই মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট হন। তিনি বলেন, “যাঁরা চলে যাচ্ছেন, তাঁদের ছবি তুলছে ২৪ ঘণ্টা, আনন্দবাজার আর আকাশ বাংলা। ওরা এটাই দেখাবে, আপনারা আমার মিটিং না শুনে চলে গিয়েছেন। কিন্তু ওরা এটা জানে না যে আপনারা পাঁচ ঘণ্টা আগে এসে বসে রয়েছেন। অত প্ল্যানিং করবেন না। এ বার থেকে দরকার হলে আমার মিটিংয়ে আপনারা আসবেন না ভাই। আমি জোড় হাত করছি। আমি ক্ষমা চাইছি। দয়া করে কভার করবেন না। আমার চোখ খুব তীক্ষ্ন। চক্রান্ত করছেন করুন।” |
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো তাঁর সরকারের বড় সাফল্য। (কিছু আগেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “ভাবতে পারেন সাড়ে ৬টায় সভা ভাঙবে, অথচ অত মানুষ এখানে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। সভার শেষে তাঁরা বাড়ি ফিরে যাবেন। আগে এ কল্পনা করা যেত না।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শান্তি ফিরে এসেছে বলেই মাওবাদীরা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। কংগ্রেস-সিপিএম-মাওবাদীরা প্ল্যান করেছে মমতা ব্যানার্জ্জীকে খুন করবে। ক্ষমতা থাকলে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, চালাও গুলি। আমি খুন হলে, এক কোটি মমতা ব্যানার্জ্জী রুখে দাঁড়াবে। তাঁরা এখন আমার সামনে রয়েছে।”
তিনি জানান, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে নিয়ে সার্কিট ট্যুরিজম করতে চান। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তাঁর দু’দিনের জন্য অযোধ্যাপাহাড়ে আসার ইচ্ছের কথাও তিনি জানিয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমার ইচ্ছা রয়েছে, অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে যেখানে আগে রক্ত ঝরেছে, সেখানে উন্নয়ন করা হোক।” জঙ্গলমহলের শান্তি বজায় রাখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী দলের কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কাপুরুষের দল হঠাৎ একজনকে খুন করে যাবে। এই তো ছিল ওদের কাজ। কেউ কেউ তিন জেলায় আবার অশান্তির আগুন জ্বালাতে চাইছে। রাত জেগে গ্রুপ করে করে আপনারা পাহারা দেবেন। প্রশাসনকে সহায়তা করবেন।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে এসে প্রত্যাশিত ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী এই জেলায় তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জেলার যুবকদের দাবি মেনে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে রূপান্তর করা হবে বলেও তিনি জানান।
এ ছাড়া জেলায় আইটিআই কলেজ থেকে কিষানমাণ্ডি তৈরির পরিকল্পনার তালিকা তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি জেলায় শিল্পস্থাপন ও কর্মসংস্থান তৈরির কাজ এগোচ্ছে বলেও সভায় দাবি করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরি করছি। দু’টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কও সেখানে গড়া হচ্ছে। তিনটি কোম্পানিকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া পাওয়ার প্রোজেক্ট তৈরি করা হবে।” তাঁর আশা, রঘুনাথপুরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পুরুলিয়া শহরে একটি আইটি হাব তৈরি করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। লাক্ষা শিল্পের উন্নয়নের জন্য এই জেলায় তাঁরা লাক্ষা ইন্সটিটিউট তৈরির চেষ্টা করছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে যান। |