গত ২৫ মে প্রকাশিত ‘বুদ্ধশাক্ত’ পত্রের প্রেক্ষিতে আমার এই পত্রলেখা। অমলেন্দু মিত্রের লেখা ‘রাঢ়ের সংস্কৃতি ও ধর্মঠাকুর’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাঢ়ের বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধ পূর্ণিমার সময় ধর্মঠাকুরের পুজো হয়। বিভিন্ন পণ্ডিতদের মতে ধর্মঠাকুর হল বৌদ্ধদের দেবতা। সেন যুগের প্রাক্কালে শৈবরা বৌদ্ধদের অপসারিত করে ধর্মঠাকুরের থানের উপর অধিকার বিস্তার করে। পূর্বস্থলী ব্লকের জামালপুর গ্রামের ধর্মঠাকুরের উপর একই রকম ঘটনা ঘটে। শৈবরা পাঁঠা বলি দিয়ে থানের পবিত্রতা নষ্ট করে অধিকার ন্যাস্ত করে। মধ্যযুগীয় ওই চিন্তা-ভাবনা এখনও কিছু গ্রামীণ অর্ধ, বা অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিরাজিত। লাঠি, টাঙি, রামদা, সার্টার ইত্যাদি নিয়ে নৃত্য করতে করতে প্রকাশ্য রাজপথ দিয়ে পাঁঠা নিয়ে যাওয়া কিছু মানুষ নিজেদের ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করে। |
সমাজের উচ্চস্তরের মানুষদের এ দলে দেখা যায় না। মিহির চৌধুরি কামিল্যা তাঁর ‘আঞ্চলিক দেবতা লোকসংস্কৃতি’ বই-এর ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, “জামালপুরের গ্রাম দেবতা ‘বুড়োরাজ’। প্রচলিত বিশ্বাস তিনি শিবও, ধর্মও। পুজোর সময় প্রধান নৈবেদ্য থালাটির ঠিক মাঝখান দিয়ে একটি কাঠি ছুঁইয়ে কল্পিত ভাবে দু’ ভাগ করা হয়। যার এক ভাগ ধর্মের, অন্য ভাগ শিবের। অনেকে বলেন বুড়োশিবের ‘বুড়ো’ আর ধর্মরাজের ‘রাজ’ মিলিয়ে তিনি ‘বুড়োরাজ’। বুড়োরাজের কাছে পাঁঠা নিয়ে ও অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বাসে ট্রেনে যাওয়াটা এক শ্রেণির লোকের কাছে পবিত্রকর্ম মনে হতে পারে কিন্তু সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতে এটা একটা বর্বরোচিত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। যাঁরা এটাকে ধর্মীয় ভাবাবেগ মনে করেন তাঁরা আসলে ভাবের ঘরে চুরি করেন। জামালপুরে পাঁঠাবলির পর রক্তাক্ত দেহ নিয়ে বীভৎস নৃত্য সভ্যসমাজের রুচিতে বাধে। ওই বীভৎসতা বন্ধ হওয়া দরকার। রাজনৈতিক নেতারা ভোটের ভয়ে এগিয়ে আসবেন না তা জানা কথা। ফলে ওই বীভৎসতা বন্ধ করতে সচেতন মানুষদের এগিয়ে আসা দরকার।
লোকেশচন্দ্র বিশ্বাস, কড়ুইগাছি |