ভোগান্তি চরমে
সেতুতে ফাটল
পাঁচমাথার মোড়। বাসের জন্য অপেক্ষায় যাত্রীরা। ওপরে সেতু। আর সেখান থেকেই অঝোরে পড়ছে বৃষ্টির জল। কারণ সেতুর স্ল্যাবের জোড় মুখে ফাটল। এই অবস্থা হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ বঙ্কিম সেতুর। প্রতি দিন এই সেতু দিয়ে কয়েক হাজার যান চলাচল করে। বিপদের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ। আর সেতু থেকে অনবরত জল পড়ায় যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে মহাত্মা গাঁধী রোডেরও।
বালি ও উত্তর হাওড়া বাদে প্রায় গোটা হাওড়া জেলার মানুষের প্রধান ভরসা দীর্ঘ এই বঙ্কিম সেতু। ধর্মতলা থেকে শিবপুর ট্রামডিপো, বটানিক্যাল গার্ডেন, সাঁকরাইল, রামরাজাতলা, হাওড়া ময়দান, কদমতলা, রানিহাটির পাশাপাশি এগরা, দিঘা ও নন্দীগ্রামের মতো দূরপাল্লার রুটের বাসের ভরসা এই সেতুটিই। এ ছাড়া হাওড়া ময়দান থেকে শিয়ালদহ, পার্কস্ট্রিট, ধর্মতলা, সখেরবাজার, তেঘরিয়া, সল্টলেক ও ডায়মন্ড পার্কের বাসও এই সেতু দিয়েই যায়।
সেতুটিতে দু’টি লেন রয়েছে। একটি হাওড়া স্টেশন থেকে হাওড়া শহরে ঢোকার। অন্যটি বিপরীতমুখী। তবে ফাটলটি রয়েছে দু’টি লেনের মাঝখানে ডিভাইডারে। হাওড়া ময়দানের ঠিক এই অংশ থেকেই শুরু হয়েছে দু’টি লেন। সেতুর ওপর দিয়ে একটি সোজা চলে গেছে হাওড়া স্টেশনের দিকে। অন্যটিতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বাস, ট্যাক্সি। পুরসভার নতুন ভবনটির কাছ থেকে এই লেনটিকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। কারণ হাওড়া স্টেশন থেকে আসা লেনটি ঠিক এই অংশ থেকেই বাঁ দিকে জেলাশাসকের দফতরের দিকে চলে গিয়েছে। ফলে এই অংশ দিয়ে কোনও যান চলাচল করে না। স্থানীয়রা একে বলেন ‘অলিখিত বাসস্ট্যান্ড’। ফাটল রয়েছে এই অংশেই।
হাওড়া পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, সেতুর দু’টি স্ল্যাবের জোড় অংশ হল এই ডিভাইডার। সেখানে কোনও ফাটল দেখা গেলে বুঝতে হবে যে সেই নির্দিষ্ট স্ল্যাবটি তুলনামূলক ভাবে দুর্বল হয়েছে। পিচ বা সিমেন্টের প্রলেপও ক্ষয়ে যেতে পারে। তার ওপর ক্রমাগত বৃষ্টি পড়ায় স্ল্যাবের ভিতরের লোহার খাঁচায় জল ঢুকে মরচে পড়বে। পুরনো পদ্ধতিতে এই সেতু তৈরি হওয়ার ফলে কোনও স্ল্যাব ভেঙে পড়লে সেই টানে সেতুর পাশের অংশটাও ভেঙে পড়তে পারে।
স্ল্যাবের ফাটলের ঠিক নীচেই মহাত্মা গাঁধী রোডের পাঁচমাথার মোড়। এক দিকে শরৎ সদন যাওয়ার রাস্তা, এক দিকে জেলা হাসপাতাল ও হাওড়া থানা। অন্য দিকে জেলাশাসকের দফতর ও পুরসভা। এবং দু’টি রাস্তা চলে গিয়েছে হাওড়া বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজের দিকে। ঠিক এই মোড়েই অঝোরে জল পড়ছে। বাসের জন্য যাঁরা অপেক্ষা করছেন তাঁদের চরম ভোগান্তি। মঙ্গলবারে হাট বসলে এই ভোগান্তি আরও চরমে ওঠে। স্থানীয় তপন রায় বলেন, “একেই তো হাটের দিন দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। তার ওপরে অঝোরে জল পড়ে। রাস্তায় জল জমে যায়। রাস্তার মধ্যে গর্তও হয়ে গিয়েছে। তার ওপর দিয়েই কাদাজল ছিটিয়ে গাড়ি যায়।” স্থানীয় মানুষের আশঙ্কা, সেতু থেকে চাঙড় খসে পড়েও বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।
এ প্রসঙ্গে হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “পুরসভা থেকে এ বছরে বর্ষা আসার আগেই এইচআইটি-কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম সমস্যাটি। কিন্তু ওরা কিছু করেনি।” এইচআইটি-র মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার মৃণ্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভা থেকে এ রকম কোনও চিঠিই আমরা পাইনি।”
তবে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “বিগত সরকারের আমলে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক ভাবে করা হয়নি। সে কারণেই এমন অবস্থা। আমি শীঘ্রই হাওড়ার জেলাশাসককে বঙ্কিম সেতু মেরামতের জন্য পদক্ষেপ করতে বলব।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.