|
|
|
|
ডাকে চিঠি পাঠিয়েই ভোটে ডাক অমলদের |
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জনীয়...
খুব চেনা এই শব্দগুলো এখনও বোধ হয় বিয়ে-অন্নপ্রাশনের কার্ডের নীচে দেখা যায়। আর প্রায় সেটাই সিপিএম লিখেছে পোস্টকার্ডে।
এ অবশ্য বিয়ের নয়, পঞ্চায়েত ভোটের নিমন্ত্রণ। ডাকের মন্থর যাত্রা বাতিল করে আধুনিক দুর্গাপুর ই-মেলে অভ্যস্ত, ভোটারের কাছে পৌঁছতে প্রাক্তন শাসকদল ফিরেছে পোস্টকার্ডের প্রায় প্রাক্তন অভ্যেসে। তা-ও আবার ওই ‘ক্ষমাপ্রার্থনা’ সুদ্ধু।
তৃণমূলের সন্ত্রাসে তারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে না পারছে না বলে গোড়া থেকেই অভিযোগ তুলে আসছিল সিপিএম। এ বার সংঘাত এড়াতে প্রচারের ঢঙও বদলে ফেলা হচ্ছে। ভোটারদের দোরে-দোরে ঘোরার চেনা পন্থা ছেড়ে দুর্গাপুর শহর লাগোয়া জেমুয়ায় সম্বল হয়েছে পোস্টকার্ড। |
|
জেমুয়ায় সিপিএমের সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র। |
চিঠির শুরুটা এ রকম: ‘মাননীয় মহাশয়/ মহাশয়া, আপনার বাড়ির দরজায় গিয়ে আমাদের পার্টির প্রার্থীরা সমর্থন চাইতে পারছেন না বলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’ সন্ত্রাসের কারণে ‘অসহনীয় ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে দাবি করে চিঠির শেষে ভোটভিক্ষা করা হয়েছে। ছাপানো চিঠি নয়, প্রিন্ট আউট নয়, ফটোকপি নয়, প্রতিটি চিঠি হাতে লেখা। পার্টিকর্মীরাই ভাগাভাগি করে চিঠিগুলি লিখছেন। কিছু পোস্টকার্ড ডাকে ফেলাও হয়ে গিয়েছে।
সিপিএমের বিধাননগর-জেমুয়া লোকাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার জানান, প্রায় পাঁচ হাজার পোস্টকার্ড কেনা হয়েছে। একটি ডাকঘরে অত পোস্টকার্ড পাওয়া যায় না। তাই বিধাননগর, এবিএল, দুর্গাপুর স্টেশন এবং ‘বি’ জোন ডাকঘর ঘুরে পোস্টকার্ড জোগাড় করা হয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোন আসনে কে প্রার্থী হয়েছেন, তার তালিকা দিয়ে ভোটের আর্জি জানানো হচ্ছে। সাধারণত বাড়িতে স্লিপ দিয়ে ভোটারের বুথ নম্বর, সিরিয়াল নম্বর, পার্ট নম্বর জানায় রাজনৈতিক দলগুলি। সে সবও ওই চিঠিতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই জেমুয়ায় কৃষকসভার কার্যালয় বন্ধ। জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে চারটিতে সিপিএম প্রার্থী দিতে পারেনি। পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও তাদের প্রার্থী নেই। লোকাল কমিটির অভিযোগ, প্রার্থীদের লাগাতার চাপ ও হুমকি সহ্য করতে হচ্ছে। তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখার ঘটনাও ঘটছে। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অদ্ভুত সব উপায় বের করতে হচ্ছে।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার পাল্টা বলেন, “মানুষের কাছে পৌঁছনোর সব রাস্তা বন্ধ। যেখানেই জেমুয়ার মতো সন্ত্রাস হবে, আমরা এই পন্থা নেব।”
কিন্তু এত ভোটারের ঠিকানা জোগাড় করা কি সহজ কাজ?
সিপিএম সূত্রের খবর, এলাকার পার্টিকর্মীরাই আশপাশের বাসিন্দাদের ঠিকানা জেনে আসছেন। গ্রামের দিকে ঠিকানা পাওয়া শক্তও নয়। নাম, গ্রাম, ডাকঘর ও জেলার নাম দিলেই চিঠি পৌঁছে যায়। সিপিএমের এক নেতার কথায়, “পুর এলাকা হলে পোস্টকার্ডে এত তাড়াতাড়ি চিঠি পৌঁছনো হয়তো সম্ভব ছিল না। ”
রবি ঠাকুরের ‘ডাকঘর’-এ রাজার চিঠির অপেক্ষায় বসে থাকত অমল। এখানে অমলেরাই চিঠি পাঠাচ্ছেন। হঠাত্ সেই চিঠি পেয়ে টেটিখোলার দিশাঙ্ক ভট্টাচার্য, আদিবাসী পাড়ার লক্ষ্মণ মুর্মু, কালীগঞ্জের সাধন বাগেরা যেমন বলছেন, “এমন হতে পারে, ভাবতে পারিনি!”
অপেক্ষাতেও আছেন কেউ-কেউ। নাম গোপন রাখার শর্তে শঙ্করপুরের বাউড়িপাড়ার এক ভোটার যেমন বলেন, “আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম প্রার্থী নেই। শুধু জেলা পরিষদে ভোট হবে। আমাদের কি আর চিঠি আসবে?” |
|
|
|
|
|