|
|
|
|
ধর্ষণ প্রমাণ হলেই মৃত্যুদণ্ড চান মমতা, দাবি আইন সংশোধনের |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
ধর্ষণ রুখতে অপরাধীকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়ার দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে পরিবর্তন এনেছিল কেন্দ্র। সংশোধিত ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের মতো অপরাধে দ্বিতীয় বার দোষী প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বারাসতের কামদুনির ঘটনার পর এখন ওই সুপারিশও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন মমতা। তাঁর দাবি, মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে দু’বারের মাথায় নয়, কোন ব্যক্তি যদি প্রথম বার ধর্ষণের ঘটনাতেই দোষী প্রমাণিত হন, তা হলেই তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম শাস্তি দেওয়ার আইন আনুক কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ধর্ষণ একটি গর্হিত অপরাধ। তাই একবার না দু’বার এই বিতর্কে না ঢুকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হলেই তাঁকে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক।
যৌন প্রতিরোধ আইনে পরিবর্তন করার জন্য দ্রুত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য, ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে গেলে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর সাজাই একমাত্র পথ। তা ছাড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি একাধিক বার অভিযুক্ত হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। রাজ্যের যুক্তি, ওই আইন ব্যাখ্যায় দেখা যাচ্ছে, কোনও ব্যক্তি যদি একের বেশি বার ধর্ষণ করেন তবেই তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ওই ব্যক্তিকে কেন দ্বিতীয় বার ধর্ষণ করার মতো জায়গা দেওয়া থাকবে আইনে? এতে আরও একটি নারীর জীবন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তার চেয়ে প্রথম বারেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজা দেওয়ার মতো কড়া আইন আনুক কেন্দ্র।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের বক্তব্য, যে কোনও পরামর্শই স্বাগত। তবে ওই আইনে আবার কোনও পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে তা মন্ত্রিসভায় এবং পরে সংসদে সেটিকে সর্বসম্মত ভাবে পাশ করাতে হবে। তার পরেই তা চালু করা সম্ভব। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী মাস থেকে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনে ওই আইনে পরিবর্তনের দাবিতে সংসদের উভয় কক্ষে সরব হবেন দলীয় সাংসদরা। তৃণমূলের বক্তব্য, এক মাত্র মৃত্যুভয়ই ধর্ষণ ও মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা কমাতে পারে। |
ধর্ষণ একটি গর্হিত অপরাধ। তাই এক বার না দু’বার এই বিতর্কে না ঢুকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হলেই তাঁকে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক। |
|
তৃণমূল মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সরব হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে যে ভাবে একের পর এক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ,ফ্রান্স, জার্মানির মতো উন্নতশীল দেশ, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকার মতো দেশ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড তুলে দিয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ওই পথে হেঁটেছে ভূটানও। ভারতেও মৃতুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে বহু দিন ধরেই সওয়াল করছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। বছর কয়েক আগে বামফ্রন্টের শাসনকালে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসি দেওয়া হলেও সম্প্রতি বহু দিন ধরে চলা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সিপিএম-ও এ দেশ থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মমতার ওই দাবি নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
ধর্ষণের শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের দাবি অবশ্য এ দেশে নতুন নয়। এনডিএ জমানায় লালকৃষ্ণ আডবাণী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে যুক্তিতে বলা হয়, কোনও নারী যখন ধর্ষিত হন, তখন তিনি মানসিক ভাবে যে গ্লানির শিকার হন, তা তাঁকে সারাজীবন ধরে বইতে হয়। অথচ অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হলেও কয়েক বছর জেলে কাটিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। তাই দীর্ঘ দিন ধরেই একাধিক সংগঠন ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছিল। নির্ভয়া কাণ্ডের পরে জনমতের চাপে অবশেষে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় কেন্দ্র। মৃত্যুদণ্ড-বিরোধী শিবিরের অবশ্য বক্তব্য, ধর্ষণ একটি সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যার শিকড় রয়েছে সমাজের মানসিকতায়। তাই সবার আগে মহিলাদের প্রতি পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। মৃত্যুদণ্ড-বিরোধী শিবিরের যুক্তি, হত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড হবে এ কথা সকলেই জানে। তা সত্ত্বেও খুনের ঘটনা থামেনি। একই ভাবে মৃত্যুদণ্ডের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা আদৌ কমানো সম্ভব নয়। এক মাত্র পুরুষ সমাজের মানসিকতার বদলই ওই সমস্যা মেটাতে পারে।
|
পুরনো খবর: ধর্ষণের উচিত শাস্তি কি ফাঁসিই, দোটানায় সরকার |
|
|
|
|
|