নাটক দিয়েই অসুস্থ নাট্যকারকে সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়েছেন ঝাড়গ্রামের নাট্যকর্মীরা। ঝাড়গ্রামের তরুণ নাট্যকার উপল পাহাড়ি স্নায়ুতন্ত্রের জটিল অসুখে আক্রান্ত। উপলবাবুর ব্যয়সাধ্য চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও টাকা প্রয়োজন। উপলবাবুকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য আজ, বুধবার (১৯জুন) ঝাড়গ্রামের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে এক নাট্যসন্ধ্যার আয়োজন করেছে ঝাড়গ্রামের ‘কথাকৃতি’
|
উপল পাহাড়ি।
—নিজস্ব চিত্র। |
নাট্য সংস্থা। ওই নাট্যসন্ধ্যার অনুষ্ঠান করে যেটুকু অর্থ সংগ্রহ হবে তা উপলবাবুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কথাকৃতি-কর্তৃপক্ষ। বুধবারের সন্ধ্যায় কথাকৃতির প্রযোজনায় উপলবাবুর লেখা ‘এই আঁধার’ নাটকটি নতুন আঙ্গিকে মঞ্চস্থ করা হবে। প্রশাসনের দুর্নীতি ও সমাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে নিশাচর পাখির ডাকের মতো নীরব প্রতিবাদ এই নাটকটি।
বছর চল্লিশের উপলবাবুর বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। পেশায় তিনি নাট্যকার ও চিত্রশিল্পী। তাঁর লেখা একাধিক মঞ্চসফল নাটকের মধ্য উল্লেখযোগ্য হল, ‘এই আঁধার’, ‘রক্ত’, ‘ব্ল্যাকহোল’, ‘রক্তের সম্পর্ক’, ‘মহুলবনির ভোটপরব’ এবং ‘তিনটি মেয়ের গল্প’।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের বাড়িতেই হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন উপলবাবু। তাঁর সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়। হাঁটাচলার ক্ষমতা হারান। হারিয়ে ফেলেন বাকশক্তিও। ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পার্কসার্কাসের ‘ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস্’-এ তাঁকে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, উপলবাবু দুরারোগ্য ‘গুলেনবারি সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত। স্নায়ুতন্ত্রের বিরল এই অসুখে সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়। উপযুক্ত চিকিৎসা না-হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসার খরচও অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। উপলবাবুর চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। তিলে তিলে সংগৃহীত প্রায় আট লক্ষ টাকা খরচ করে মাস খানেক কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে রেখে উপলবাবুর চিকিৎসা হয়। গত ১৪ মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এখন উপলবাবু মেদিনীপুর শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। সেখানেই নিয়মিত ফিজিও-থেরাপি চলছে। ওষুধপত্রও খেতে হচ্ছে। এ জন্য প্রতিদিনই কয়েক হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এখনও স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেন না। তবে কথাবার্তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। কাঁপা হাতে অবশ্য এখন লেখালিখি করতে পারছেন। গোটা দশেক কবিতাও লিখে ফেলেছেন। উপলবাবুর কথায়, “এমন রাজার অসুখ হলে গরিব মানুষেরা কী করবেন?” এমন প্রশ্ন তুলে নিজের অসুস্থতা নিয়ে জঙ্গলমহলের আঙ্গিকে একটি রম্যরচনা লিখেছেন তিনি। বুধবার কথাকৃতির অনুষ্ঠানে নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে সেই রম্যরচনাটি পাঠ করা হবে। উপলবাবু বলেন, “চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমার ছিল না। স্বজন-বন্ধুদের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। পৃথিবীটা যে এত সুন্দর তা বোধহয় অসুখে না পড়লে জানতে পারতাম না।” কথাকৃতির কর্ণধার কুন্তল পাল বললেন, “নাটক মঞ্চস্থ করে যে টাকা উঠবে, তা একান্তই উপলের জন্য।” |