মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের মিঠিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়া মুকুন্দপুরে শনিবার নাম প্রত্যাহারের দিন পেরুতেই রবিবার থেকে পথে নেমে প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের তসলিমা বিবি, সিপিএমের রোকিয়া বিবি ও কংগ্রেসের কমেলা বেওয়া। তিন ভাইয়ের বৌ-এর এ ভাবে ভোটে নামার ঘটনার কথা জানতে পেরে মেদিনীপুর থেকে ব্যবসা ফেলে ছুটে এসেছেন মেজ ভাই বাসেদ শেখ।
|
তিনি বলেন, “রাজনীতির ঝান্ডা যাতে পরিবারের ভাইদের মধ্যে মনের বিভাজন না ঘটাতে পারে তা দেখতেই আমি ছুটে এসেছি গ্রামে। আমি থাকলে হয়তো জায়ে জায়ে এ ভাবে লড়াইটা আটকানো যেত। তা যখন হয়নি তখন চেষ্টা করব যাতে রাজনীতির বিভাজনের প্রভাব না পড়ে নিজেদের সংসারে।”
|
তসলিমা বিবি |
নয়া মুকুন্দপুর গ্রামে ঢুকতেই লুত্ফল হকের চার ভাইয়ের পরিবার। শিক্ষক লুত্ফল হক মারা গেছেন। কংগ্রেসি পরিবার হিসেবেই পরিচিত এই পরিবারে সরাসরি রাজনীতি করেন না কেউই। লুত্ফল হক জীবনে একবারই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, ’৭৮ সালে। ১১ ভোটে হারেন। সেই থেকে আর কেউ কখনও ভোটের লড়াইয়ে যাননি। কিন্তু এ বার, শুধু লড়াই নয়, ঘরে ঘরে লড়াই। মা গোলেজান বেওয়া বলেন, “ছেলেরা সকলেই আমার কাছে সমান। স্বামী মারা যাওয়ার দিন পর্যন্ত কংগ্রেস করে গেছেন। তাঁর পথেই আমরাও এখনও কংগ্রেসকেই ভোট দিয়ে এসেছি। কিন্তু এ বার জায়ে জায়ে লড়াই রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছে আমাকে।”
তিনি বলেন, “ছোট বৌমা মমতার ভক্ত। কালকেই ওর মুখে শুনলাম মমতার জনপ্রিয়তার কথা। গ্রামে মমতার দল
জিতলে অনেক উন্নতি হবে। আজ সকালে সেজ বৌ বলল, গ্রামের উন্নয়নে সিপিএমের বিকল্প কেউ নেই।
|
রোকেয়া বিবি |
সুশাসনের জন্য বৌমার আর্জি সিপিএমকে ভোট দেওয়ার জন্য। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার জন্য বড় বৌমা এখনও আসেনি। তিন বৌমার কাকেই বা ফেরাব, খুবই মুশকিলে পড়েছি আমি।”
মেজ ভাই বাসেদ শেখ বলছেন, “শুধু মা কেন, অস্বস্তিতে পড়েছেন সকলেই। সকলেই নিজের ভাই। কাকে ফেরাব। তাই শেষ পর্যন্ত হয়তো অনেকেই ভোট কেন্দ্রেই যাবেন না। মা-তো নয়ই।” ছোট বৌ তৃণমুলের তসলিমা বলছেন, “লড়াইটা তো জায়ে জায়ে নয়। লড়াইটা রাজনীতির।
|
কমলা বেওয়া |
সিপিএম ৩০ বছর মিঠিপুর পঞ্চায়েত
চালিয়েছে। কংগ্রেস ১০ বছর। তবু গ্রামের রাস্তাটা পাকা হয়নি। পানীয় জলের সংকট কাটেনি। দুর্নীতি বন্ধ হয়নি।
এর পরিবর্তন চাই বলেই
তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছি।”
সেজ বৌ রোকেয়া বিবি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও জায়ে জায়ে লড়াই নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে।
তার স্বামী ফারুক শেখের কথা, “আমরা কংগ্রেসি পরিবার সেটা তো সবাই জানে।
কিন্তু আজীবন কংগ্রেসকে ভোট দিয়েও এলাকায় উন্নয়ন হল কই? তাই সিপিএমের প্রতীকে দাঁড়িয়েছে স্ত্রী।
আমি তার পাশেই আছি।” বড় বৌ কমেলা বেওয়ার দাবি, “গ্রামের মানুষ আমাকে দাঁড় করিয়েছে। কংগ্রেস তাকে সমর্থন করেছে। তবে ভোটে হার-জিত যারই হোক, পরিবারের মিলমিশটা যেন থাকে, সে দিকেই লক্ষ্য সকলের।”
মা গোলেজান বেওয়ার মনে কিন্তু সংশয় কাটছে না। তার কথায়, “রাজনীতি বড় গোলমেলে ব্যাপার। আলাদা হাঁড়ি থাকলেও বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়ায় ভাইয়েরা। রাজনীতি সেই শান্তির পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাবে না তো?” |