বিক্ষুব্ধদের সামলাতে পদোন্নতির কৌশল
সন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এঁদের কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও অনেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে নেমে পড়েছেন ভোট ময়দানে। এই সব বিক্ষুব্ধদের প্রতি দল যে কোনও ব্যবস্থা নেবে না, ক’দিন আগে মেদিনীপুরে এসে সে কথা স্পষ্টই জানিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্ষুব্ধদের মন গলাতে দলের অভ্যন্তরে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
কী সেই ব্যবস্থা?
তৃণমূল সূত্রে খবর, বিক্ষুব্ধদের মন গলাতে পদোন্নতিকেই হাতিয়ার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে নির্বাচিত সদস্যদের মাথার উপর কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর নাম দেওয়া হবে ‘উন্নয়ন কমিটি’। কমিটির সদস্য হবেন তাঁরাই, যাঁরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাননি বা মনোনয়ন দেওয়ার পরেও দলের নির্দেশে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মূলত, দলীয় কোন্দল এড়িয়ে ভোটে নির্বাচনে সাফল্য পেতেই নির্বাচনের আগে এই পরিকল্পনার কথা দলীয় ভাবে ইতিমধ্যে নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “আসন সংখ্যা তো সীমিত। যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা বহু। তাই সকলকে সুযোগ দেওয়া যায়নি। কিন্তু এটা ভাবার কারণ নেই যে দলে তাঁদের প্রাধান্য খর্ব হল। বরং দলে তাঁদের প্রাধান্য বাড়বে।” জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “দল যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ দখল করবে সেখানে একটি করে উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হবে। যাঁরা উপযুক্ত অথচ প্রার্থী হতে পারলেন না তাঁদের সেই কমিটিতে রাখা হবে। নির্বাচিত সদস্য ও কমিটি - আলোচনার মাধ্যমে উন্নয়ন করবেন।”
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ ত্রিস্তরেই বহু আসনে তৃণমূলের হয়ে একাধিক দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। দলীয় প্রতীক পেয়েছেন একজনই। অনেকেই দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। অনেকেই আবার নির্দল হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। যদিও জেলায় ভোটের আগেই ৫৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে চলে এসেছে। এর মধ্যে ১৮টিতে বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। ৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আবার অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। অর্থাৎ যে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬টি আসন রয়েছে সেখানে ১২টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে, ওই চারটি আসনেই তৃণমূল প্রার্থী পরাজিত হল, তবুও গ্রাম পঞ্চায়েতটি দখলে থাকবে তৃণমূলের। জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৮৪৬টি আসনের মধ্যে ৯৪৬টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৭৯৮টি আসনের মধ্যে ১৩৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে। যার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দল ৭টি ও সিপিএমের একটি, পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দল একটি বাদে সবই তৃণমূলের দখলে। কেশপুর, গড়বেতা-১ ও ৩, চন্দ্রকোনা-১ ও ২ ব্লকেই এই প্রবণতা বেশি।অনেক আসনে বিক্ষুব্ধরা লড়ছেন নির্দল হিসেবে। তাঁরা প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন। এই প্রচারে যাতে তৃণমূলের দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি না হয়, সে জন্যই তড়িঘড়ি বিক্ষুব্ধদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যে কেশপুর থেকে জেলা পরিষদ আসনে মনোনয়ন দিয়েও প্রত্যাহার করা ইমদাদুল ইসলামকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ইমদাদুলের কথায়, “উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। দল আমাকে জেলা নেতা থেকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদও দিয়েছে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ৭ থেকে ১০ জনের ‘উন্নয়ন কমিটি’ তৈরি করা হবে। এই কমিটি থাকবে পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের মাথার উপরে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করা হবে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “এই মোক্ষম চালে অনেক নির্দল প্রার্থীও আর লড়াইয়ে না গিয়ে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গেই প্রচারে যোগ দেবেন।” সেটাই হয় কিনা, তাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.