পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোর মাসুল দিতে রুটিরুজি গিয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক সদস্যার।
একটি স্কুলে মিড-ডে-মিল রাঁধতেন তিনি। গত ৫ জুন কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে এসইউসি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই তা বন্ধ।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে বিরুরি গ্রামের পাঠানপাড়ায় প্রার্থী হওয়া সাফিয়া বিবির অভিযোগ, “গরমের ছুটির শেষে ১০ জুন আমি বিরুরি প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল রাঁধতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের লোকেরা এসে প্রধান শিক্ষককে বলে যায়, আমি যেন আর রান্না না করি।”
এসইউসি-র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পড়শিরাও তাঁদের এক রকম এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে সোমবার মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবেও জানিয়েছেন সাফিয়া বিবি ও তাঁর স্বামী জান্টু শেখ। তাঁর স্বামীর অভিযোগ, “আমরা রাস্তা দিয়ে গেলে সবাই সরে যাচ্ছে। কোথাও গিয়ে বসলে সকলে উঠে যাচ্ছে। ছোট মেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না।” |
২০০৪ সাল থেকে বিরুরি প্রাথমিক স্কুলে ‘আশা প্রদীপ স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী’র প্রধান হিসেবে কাজ করে আসছেন সাফিয়া বিবি। তিনি জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারেন না। মেয়ে বিড়ি বাঁধে। দু’জনের সামান্য আয়ে কোনও মতে চলে। তাঁর কথায়, “আমায় কাজে বহাল রাখার অনুরোধ করলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি কি তোমার জন্য ওদের কাছে মার খাব!’ এর পরে আর কী করব?” প্রধান শিক্ষক বীরেন হাটুই অবশ্য বলেন, “সাফিয়া বিবি কেন স্কুলে রান্না করছেন না, তা আমার জানা নেই।”
শুধু বীরেনবাবুই নন, গ্রামের প্রায় কেউই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না। দু’এক জন বলেন, “কথা না বলার জন্য ক্রমাগত হুমকি আসছে। কে ঝুঁকি নেবে?” কেউ-কেউ বলছেন, “কী দরকার ছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার? আগ বাড়িয়ে বিপদ ডেকে আনা!” স্থানীয় সূত্রের খবর, পাঠানপাড়ার আসনে সাফিয়া বিবি ছাড়াও তৃণমূল ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী রয়েছে। ভোট কাটাকাটিতে যাতে বিক্ষুব্ধরা জিততে না পারে, তার জন্যই এসইউসি প্রার্থীর উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
১৯৮২ সালে জান্টু শেখ পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ানোয় সিপিএমও আগে একই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বলে অভিযোগ দম্পতির। এসইউসি-র কাটোয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” তৃণমূলের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “এ ধরনের বয়কট বা কাজ হারানোর বিষয়গুলি বরদাস্ত করা হবে না। তবে এ ধরনের কোনও খবর আমার কাছে নেই।” কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরেশ রানো বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। আমরা বিষয়টি দেখছি।” |