হার মানছে ভৌগোলিক দূরত্ব। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে সমস্বরে।
কামদুনি, গাইঘাটার সঙ্গে এ বার একই ভঙ্গিতে গর্জে উঠল রানিতলা অপরাধীর চরম শাস্তি। আর কিছু নয়। কামদুনি-গাইঘাটার মতোই প্রতিবাদে নেমেছেন গ্রামের মহিলারাও।
চার দিন ধরে নিখোঁজ মুর্শিদাবাদের রানিতলার সোনাডাঙা গ্রামের বছর ষোলোর এক কিশোরীর দেহ শনিবার সকালে মেলে গ্রাম লাগোয়া পাটখেত থেকে। পরিবারের লোকজন ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ তোলেন। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, পড়শি যুবক হকদার শেখ। তার সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল ও গত মঙ্গলবার কিশোরী বাড়ির বাইরে যেতেই হকদার তার পিছু নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর এ দিন ওই গ্রামে যান। কিশোরীর পরিবারের মহিলাদের কাছে জানতে চান, ‘তাঁরা কী চান’? তখনই কিশোরীর মা-কাকিমা থেকে গ্রামের সাধারণ মহিলা সকলেই দাবি করেন, অপরাধীর চরম শাস্তি। আর কিছু নয়। |
ঠিক এই স্বরই তো কয়েক দিন আগে শোনা গিয়েছে বারাসতের কামদুনিতে। চাকরি, ক্ষতিপূরণ-সহ ঢালাও সরকারি সাহায্যের আশ্বাস ফিরিয়ে দিয়ে কামদুনির ধর্ষিত-নিহত তরুণীর পরিবার হত্যাকারীদের চরম শাস্তির দাবি তুলেছে। শনিবার ব্লক প্রশাসনের দেওয়া চাল-শাড়ি ফিরিয়ে গাইঘাটার নিহত ছাত্রীর পরিবারের লোকও অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন। এ বার সেই সুরে সুর মেলাল রানিতলাও।
কী বলছে নিহত কিশোরীর পরিবার? কিশোরীর মা বলেন, “মেয়ের মৃত্যুর জন্য কোনও ক্ষতিপূরণের প্রয়োজন নেই। এসপি বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁকে সে কথা বলেছি।” কিশোরীর মেজদা বলেন, “ক্ষতিপূরণে কী হবে? চরম শাস্তি চাই হকদারের। কামদুনি বা গাইঘাটার বাসিন্দারা যে ভাবে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন, তা আমাদেরও সাহস দিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “হকদার ছাড়াও ওর পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে এসপি-র কাছে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এসপি ওই চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিতে চাননি।” এসপি-র পাল্টা দাবি, “হকদারের দুই ভাই এবং বাবা-কাকার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বাবা-ছেলে এক সঙ্গে ধর্ষণ করবে, এটা অবিশ্বাস্য। তাই তাদের বিরুদ্ধে শুধু খুনের অভিযোগ করা হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “ময়না-তদন্তে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে কিশোরীকে। ধর্ষণের প্রমাণ নেই।”
ঘটনার প্রতিবাদে সকালে গ্রামে মোমবাতি-মিছিল করে ছাত্রছাত্রীরা। কামদুনি থেকে যে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, গাইঘাটা হয়ে এ বার তা ছাড়িয়ে গেল জেলার সীমানাও। |