শ্বশুরের দিনমজুরি বন্ধ
প্রার্থী একঘরে, কাঠগড়ায় তৃণমূল
দিন আনি দিন খাই পরিবার। সামাজিক বয়কটের ফতোয়ায় সকলে বাড়িতে বসে। সংসার চালাবে কে?
জানেন না ঘাটালের মোহনপুর পঞ্চায়েতের মূলগ্রামের বাসিন্দা মামণি বেগম। গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ‘অপরাধে’ মামণি ও তাঁর পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। “স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করতেন শাশুড়ি। তাঁকে স্কুলে যেতে বারণ করা হয়েছে। দিনমজুরের কাজ পাচ্ছেন না শ্বশুর। স্বামীর যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশা কে বা কারা রাতারাতি চুরি করে নিল! গ্রামের নলকূপ থেকে পানীয় জল নিতে হচ্ছে রাতের অন্ধকারে চোরের মতো। ফিরিয়ে দিচ্ছে পাড়ার মুদি দোকান। কী এমন অপরাধ করেছি, বলতে পারেন?”প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন মামণি। তাঁকে আরও কুরে কুরে খাচ্ছে, বাড়ির ছোটদের সঙ্গে পাড়ার খুদেরা খেলছে না বলে।
মামণি বেগম।
—নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের লোকেরাও প্রকাশ্যে বয়কট নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে গ্রামে। ভোটের প্রচার তো দূরের কথা, পড়শিদের সঙ্গে কথা বলারও অধিকার হারিয়েছেন মামণি বেগম। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের অত্যাচারের কথা ব্লক অফিস, থানায় গিয়ে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। বলেছিল, কোনও অসুবিধা হলে ফোনে জানাতে। সেদিনটা সাহস করে গ্রামের নলকূপে জল আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, তৃণমূলের লোকজন তা দেখতে পেয়ে বালতি ছিনিয়ে জল ফেলে দিল।” পুলিশকে ফোন করে সেটা জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ মামনির। স্বামী শেখ জাহাঙ্গিরের কাঁচা বাঁশ বোঝাই ভ্যান রিকশা চুরিরও কিনারা করে দিতে পারেনি পুলিশ।
ওই গ্রামেই বাড়ি ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের। সামাজিক বয়কটের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে কবুল করেছেন, “দলের লোকেরা ওই প্রার্থীর শাশুড়িকে স্কুলের রান্নায় বাধা দিয়েছিল বলে শুনেছি। উনি যাতে কাজে যোগ দিতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি।” বিধায়ক এই দাবি করলেও ঘটনা হল, মামণির শাশুড়ি কুলসমা বিবি স্কুলে যেতে পারছেন না। স্থানীয় মূলগ্রাম প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার কাজ করা কুলসমা বলেন, “এই গ্রামেই তো থাকতে হবে! তাই ভয়ে
স্কুলে যেতে পারি না। স্বামী, ছেলেরাও বাড়িতে বসে। সংসার কী ভাবে চলবে ভেবে পাচ্ছি না।” গ্রামেরই কিছু সহানুভূতিশীল পরিবার অবশ্য লুকিয়ে-চুরিয়ে সাহায্য করছে। রাতের অন্ধকারে কেউ জল এনে দিচ্ছেন, কেউ বাজার করে দিচ্ছেন। এক পড়শি বলেন, “পাশেই থাকি। এ সব চোখে দেখা যায় না। তাই যতটা পারি সাহায্য করি।”
ভোটে সমর্থন করলেও হাত গুটিয়ে বসে সিপিএম। মোহনপুর পঞ্চায়েত তাদের দখলে থাকা সত্ত্বেও। অবশ্য দখল নামেই। এলাকাবাসী জানান, পালাবদলের পর পঞ্চায়েতের ক্ষমতা বকলমে তৃণমূলেরই। তাই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। পঞ্চায়েত প্রধান স্বপন মাইতি বলেন, “বয়কটের কথা শুনেছি। প্রশাসনকেও জানিয়েছি।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “বিষয়টি প্রশাসনকেও জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি।”
ঘাটালের বিডিও দেবব্রত রায় ওই প্রার্থীর পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশও। মামনি ও তাঁর পরিবার কিন্তু এখনও নলকূপ থেকে জল তুলতে পারছেন না। বাড়ির বাচ্চাদের পাড়ার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা বারণ। আশ্বাসে তাই আস্থা নেই মামনির। তাঁর কথায়, “আমরা সিপিএম সমর্থক। কিন্তু, নির্দল প্রার্থী হয়েও যে এমন দুর্দশা হবে, ভাবিনি। নইলে কি আর প্রার্থী হতাম?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.