ধোনিরা রোববার বার্মিংহ্যামেই থেকে গেলেন। কার্ডিফ পৌঁছবেন সেমিফাইনালের জন্য সোমবার। প্রাক্তন অধিনায়ককে কিন্তু এ দিন কার্ডিফেই পাওয়া গেল। তাঁর পুরনো কাউন্টির শহরে। ধারাভাষ্য দিতে আসা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বৃষ্টিতে খেলা শুরু হতে দেরি হওয়ার সময় ফোনে সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: বার্মিংহ্যামের উত্তেজিত কিছু পাকিস্তানি ট্যাক্সিচালক আজ সকালে বলছিল, মিসবা-উল-হকের উপযুক্ত পুরস্কার লাহৌর বিমানবন্দরের বাইরে ডিমের খোসা নয়। ওকে বার্মিংহ্যামের খালে ফেলে দেওয়া উচিত।
সৌরভ: হাঃ হাঃ। কেন?
প্র: এদের অভিযোগ হল নিজে ক্যাপ্টেন হয়ে মিসবা এত স্লো খেলবেন কেন? ২৩৫ বলে মাত্র ১৭৩ রান!
সৌরভ: মিসবা আর কী করবে? যখন নামে তখন দেখে ধড়াধ্বড় উইকেট পড়ে যাচ্ছে। মারবেটা কী করে?
প্র: শনিবারের পাকিস্তান ম্যাচ এত একপেশে হবে ভেবেছিলেন? বিশেষ করে যেখানে মিসবাদের কোনও চাপ ছিল না!
সৌরভ: আমি জানতাম। আগের রাত্তিরেই টিভি শোয়ে বলে দিয়েছিলাম। ওদের কোনও টিমই নেই। মিসবাও পাঁচ-ছ’ বছর আগের পাকিস্তান টিমে চান্স পেত না।
কোথায় নেমে গেছে ওদের ব্যাটসম্যানদের কোয়ালিটি। ইনজি-মিয়াঁদাদদের দেশ ১৭০ করতে পারে না জিতবে কী করে? শোয়েব মালিকের স্ট্যাটস দেখুন। গত দু’বছর পঞ্চাশ করেনি। ওদের প্রেশার ছিল না ঠিক আছে। রানটা তো করতে হবে। সেই কোয়ালিটিই নেই।
প্র: দু’দেশ মিলিয়ে এখনই ওয়ান ডে ইলেভেন করলে পাকিস্তান থেকে ক’জন চান্স পাবে?
সৌরভ: ব্যাটসম্যান কেউ চান্স পাওয়ার প্রশ্নই নেই। বোলিংয়ে আমি রাখব সঈদ আজমল আর জুনেইদ খান।
প্র: মহম্মদ ইরফান?
সৌরভ: না, না ভুবনেশ কুমার আছে।
প্র: ভুবনেশ আপনার পুণে টিমে ছিলেন। ওর উন্নতিটা কেমন দেখছেন?
সৌরভ: আগেও ভাল বল করত। ও-ই এই টুর্নামেন্টের বেস্ট সিমার। পেসটাও বেড়েছে।
প্র: ভুবনেশের এখন কী করা উচিত?
সৌরভ: এ রকমই পারফর্ম করে যেতে হবে। স্রেফ একটা টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সে কিছু হয় না। টানা ভাল খেলতে হবে। কেউ কি গত বছরও ভেবেছিল বীরেন্দ্র সহবাগ ওয়ান ডে-তে এগারো জনের মধ্যে থাকবে না? কেউ জানত যুবরাজ সিংহ বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়ে দু’বছরের মধ্যে টিম থেকে বাদ চলে যাবে?
|
প্র: টিম এত ভাল খেলার পর কি যুবরাজের প্রত্যাবর্তন সম্ভব?
সৌরভ: কেন সম্ভব নয়? সামনে অনেক ক্রিকেট আছে। টাফ ক্রিকেট রয়েছে।
প্র: এই যে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি বিদ্ধ টিম ইন্ডিয়া এত ভাল খেলছে দেখে কি কোথাও নিজের ২০০০ সালের টিমের কথা মনে পড়ছে? যারা ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এ রকমই দুর্ধর্ষ খেলেছিল।
সৌরভ: হ্যাঁ মনে পড়ছে। কিন্তু তুলনায় আমাদের টিমে সিনিয়র প্লেয়ার বেশি ছিল। আমি। সচিন। রাহুল। অনিল। বেঙ্কটেশ প্রসাদ।
প্র: সে বারও নতুন ছেলেরা মাতিয়ে দিয়েছিল। যুবরাজ। জাহির।
সৌরভ: সেটা ঠিক। এ বার যেমন জাডেজা দারুণ করছে। শিখর ধবন তো খুব ইম্প্রেসিভ। যুবরাজ যখন এসেছিল, এ রকমই ছিল।
প্র: শিখরের ইংলিশ কন্ডিশনে নিয়মিত রান করে যাওয়ার ব্যাখ্যা কী?
সৌরভ: পুরো ইংলিশ কন্ডিশন বলব না। আকাশ যতই মেঘলা থাক, উইকেট ফ্ল্যাট। বলও পড়ে ঘুরছে।
তবে শিখরের এবিলিটি নিশ্চয়ই আছে। যেটা ও বুঝিয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে আছে বেপরোয়া সাহস। চাপে ঘাবড়ায় না। রোহিত-দীনেশরাও দারুণ ব্যাট করছে।
প্র: সেমিফাইনালে কে সামনে পড়লে ইন্ডিয়া খুশি হবে বলে মনে হয়?
সৌরভ: যে ইচ্ছে পড়ুক কিছু আসে যায় না। যে ফর্মে টিম খেলছে, তাতে ধারে কাছে কেউ নেই।
প্র: নতুন নিয়মে এ বার ওয়ান ডে হচ্ছে। প্রতি ২৫ ওভারে নতুন বল। তার সঙ্গে সিমিং কন্ডিশন। দুটোই তো ভারতের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা! তাতেও টিমটা এত ভাল খেলছে কী করে?
সৌরভ: ফর্ম। ফর্ম তফাত করে দিচ্ছে। এরাই তো অনেকে ২০১১-র সিরিজে এসে খেলতে পারেনি। এ বার ভাল খেলছে। একটা টিমকে জাজ করার জন্য সময় দিতে হয়। এরাই যখন টানা ২/৩ টুর্নামেন্ট ভাল খেলে দেবে, তখন অন্য মর্যাদা পাবে।
প্র: ধোনির ক্যাপ্টেন্সি সম্পর্কে কী বলবেন?
সৌরভ: খুব ভাল। দারুণ!
প্র: বিদেশে আপনার দেখা ধোনির সেরা ক্যাপ্টেন্সি?
সৌরভ: নিশ্চয়ই। সবচেয়ে সিগনিফিকেন্ট হল, ধোনির নিজের ব্যাটিং-ই আসছে না। তার আগেই টিম জিতে যাচ্ছে। অথচ ও হল কিনা ওয়ান ডে-তে টিমের এক নম্বর ব্যাটসম্যান! |