এ যেন সেই কুমিরছানা দেখানোর পুরনো গল্প! এবং সেই ফাঁদে ফেলেই দু’কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরে একাধিক থানার অফিসারদের ঘোল খাওয়ানোর পরে রবিবার মিতালি চট্টোপাধ্যায় নামে ওই মহিলা গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ শহরতলির বোড়াল মেন রোডে। বিশ্বজিত্ নন্দী নামে ওই মহিলার এক সঙ্গী এখনও ফেরার।
কী অভিযোগ রয়েছে মিতালিদেবীর বিরুদ্ধে?
পুলিশ জানিয়েছে, বছর দশেক আগে পূর্ব সন্তোষপুরে একটি সমবায়ের চার কাঠা জমির দলিল জাল করেছিলেন মিতালিদেবী। এর পরে সেই ফাঁদে ফেলেই প্রায় ৫০ জনকে তিনি প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই জমি দেখিয়েই ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যেতেন মিতালিদেবী। কী ভাবে? |
আলিপুর কোর্টে অভিযুক্ত মিতালি চট্টোপাধ্যায়। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বজিত্ নামে ওই ব্যক্তি নানা এলাকা থেকে ক্রেতাদের নিয়ে আসতেন মিতালিদেবীর কাছে। তার পরে দূর থেকে পূর্ব সন্তোষপুরের জমিটি দেখিয়ে ক্রেতার বিশ্বাস অর্জন করতেন তাঁরা। এখানেই শেষ নয়। তদন্তকারীদের দাবি, তুরুপের তাসটি মিতালিদেবী খেলতেন বিশ্বাস অর্জনের পরেই। সেটা কী?
তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, মিতালিদেবী প্রথমে জমির দাম ৩০ লক্ষ টাকা বললেও মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক ধাপে তা ১৫ লক্ষ টাকায় নামিয়ে আনতেন। এ জন্য এক বৃদ্ধাকে ‘মা’ সাজিয়ে বোড়ালের বাড়িতে শুইয়ে রাখতেন তিনি। কম দামে জমি পাওয়ার এই লোভ ছাড়তে পারতেন না ক্রেতারাও। এবং সেই টোপ দিয়েই জমির অগ্রিম বাবদ লাখ পাঁচেক টাকা হাতিয়ে নিতেন মিতালিদেবী। তার পরেই এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিতেন। এর মাসখানেক পরে ফের অন্য এক ক্রেতাকে একই কায়দায় তিনি প্রতারণা করতেন হলে অভিযোগ। এ নিয়ে সোনারপুর, বারুইপুর, বাঁশদ্রোণী, কসবা, রিজেন্ট পার্ক একাধিক থানায় ওই মহিলার নামে অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তাঁর টিকিটি ছুঁতে পারেনি। কিন্তু মাস আটেক আগে বেলঘরিয়ার বাসিন্দা, তপন দাস নামে এক ব্যক্তিকে একই ফাঁদে ফেলতে গিয়ে জালে ফেঁসে যান মিতালিদেবী। কী রকম?
পুলিশ জানায়, তপনবাবুর কাছ থেকেও অগ্রিম টাকা নিয়ে উধাও হয়েছিলেন মিতালিদেবী। বাকি টাকা দিতে গিয়ে সে কথা জানতে পারেন তপনবাবু। এর পর খোঁজ নিতে গিয়ে, ওই জমির আসল মালিকের সন্ধান পান তিনি। বুঝতে পারেন, তাঁকে ঠকিয়ে টাকা হাতানো হয়েছে। এর পরেই পূর্ব যাদবপুর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন তপনবাবু। তদন্তকারীরা প্রথমে মিতালিদেবীর সন্ধান না পেলেও পরে একটি সূত্রে জানা যায়, তিনি রাতে বাড়ি ফেরেন। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, এ বার ক্রেতা সেজে জমি বিক্রির টোপ দেন তাঁরাই। এবং তাতেই ফেঁসে যান মিতালিদেবী। পুলিশের এক কর্তা জানান, শনিবার রাতে বাড়িতে টাকা নেওয়ার সময়ে ধরা পড়ে যান ওই মহিলা। কিন্তু রাতে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করার আইন না থাকায় তাঁর বাড়ি সারা রাত ঘিরে রাখে পুলিশ। রবিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বেলায় তাঁকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়।
|