মাঝে একটা সাংবাদিক সম্মেলনে স্পট ফিক্সিং নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। শিল্পা শেট্টি আর রাজ কুন্দ্রার নাম তখন খবরের শিরোনামে। বাজিগর বিরক্ত গলায় বলেছিলেন, “নিজের সিনেমার টিকিট কেউ নিজে ব্ল্যাক করে? আমি তো করি না!”
শুক্রবার রাতে নিজের নতুন ছবি চেন্নাই এক্সপ্রেসের প্রচারের ফাঁকে আনন্দবাজারের কাছে ফের মুখ খুললেন স্পট ফিক্সিং নিয়ে। তাতেই বোঝা গেল, গোটা বিষয়টি ঠিক কতখানি বীতশ্রদ্ধ শাহরুখ খান!
আগের বার কেকেআর আইপিএল জেতার পরে আনন্দে ভেসে গিয়েছিলেন তিনি। কলকাতায় বিশাল বিজয়োৎসব হয়েছিল। এখন একটাই প্রশ্ন মাঝে মাঝেই ঘাই দিয়ে যাচ্ছে শাহরুখের মনে, “ম্যাচটা ফিক্সড নিশ্চয়ই ছিল না, কী বলুন?”
বৃষ্টিভেজা মুম্বইয়ে তাজ ল্যান্ডস এন্ডের ব্যাঙ্কোয়েট। সেটাই শাহরুখ-দীপিকার ছবির প্রচার অনুষ্ঠান। তার ফাঁকেই আনন্দবাজারকে আলাদা করে সময় দিলেন শাহরুখ। ক’দিন আগেই কাঁধে অস্ত্রোপচার হয়েছে! পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আট নম্বর সিগারেটে টান মারতে মারতে শুক্রবার এটাই তাঁর প্রথম বোমা “গত বছর কেকেআর ফাইনাল জেতার পর ও রকম ভাবে ডিগবাজি খেলাম! সেই ডিগবাজি খেতে গিয়ে পিঠে-কাঁধে আরও ব্যথা লাগল! মাঝেমধ্যে মনে হয়, সব ঠিকঠাক ছিল তো? কেউ নিশ্চয়ই আমাদের ম্যাচটা ছেড়ে দেয়নি!”
শাহরুখের মতে, স্পট ফিক্সিং ক্রিকেটের ক্ষতি তো করেইছে, কিন্তু তার থেকেও বেশি ক্ষতি করেছে ভারতের ভাবমূর্তির। “বিবিসিতে দেখলাম একটা হেডলাইন, ‘স্পট ফিক্সিং ইন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’। আমার দেখে ভীষণ বিরক্ত লাগল। এটা নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলো ইয়ার্কি মারবে, টিটকিরি দেবে, এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। ইন্ডিয়াকে নিয়ে এ রকম কথা হজম করাটাই খুব কঠিন।” চিয়ারলিডারদের উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়েও যথেষ্ট আপত্তি আছে শাহরুখের। “আই ডোন্ট সাপোর্ট ইট অ্যাট অল। ওরা কী ভাবে স্পট ফিক্সিং করতে পারে, আমার অন্তত জানা নেই। এই সিদ্ধান্তটার কী মানে হয়?”
স্পট ফিক্সিং নিয়ে শাহরুখকে কি কখনও ফোন করেছিলেন শ্রীনিবাসন? “কই, না তো। আমার সঙ্গে কারও কথা হয়নি, কেউ ফোনও করেনি। আসলে ক্রিকেটীয় বিষয়ে আমার মনে হয় ইনভল্ভড হওয়া উচিত নয়। আমি রাজীব শুক্লকে চিনি, নিরঞ্জন শাহকে চিনি, ডালমিয়া সাবকে চিনি। মিটিংয়েও গিয়েছি। ওই পর্যন্তই। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেনি কিছু।” কথার পিঠে কথা বলা তাঁর বহুদিনের অভ্যেস। তার বদল এ বারেও হল না। আগের কথার রেশ টেনে বললেন, “আর আমাকে ডেকে কী কথা বলবেন বলুন তো? সিনেমায় শাহরুখের ভ্যালু আছে। ক্রিকেটে নেই!”
এত ক্রিকেটারকে নিয়ে এত কথাবার্তা, এত বিতর্ক! শাহরুখের কি কখনও মনে হয়েছে, কেকেআর-এর কোনও ক্রিকেটার স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত কি না? “আমার তো মনে হয় কেউ নেই। অন্তত আমি তাই বিশ্বাস করি। যে ভাবে কেকেআর-এর সবাই ইনভল্ভড থাকে, যে ভাবে তাদের আমরা দেখভাল করি, যে ভাবে টিম মালিক হিসেবে আমার ইনভল্ভমেন্ট থাকে, আমার তো অন্তত মনে হয় কেকেআর-এর কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়!” সর্বতো ভাবে নিজের টিমের পাশে দাঁড়ালেন টিমমালিক।
সংবাদমাধ্যমে, আলাপ-আলোচনায় একটা মত অনেক বারই উঠে আসছে, এক বছর আইপিএল বন্ধ রাখা উচিত। শাহরুখ কিন্তু তার পক্ষপাতী নন। “না না, বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না। এক বছর বন্ধ করে দিলে আইপিএল-এর মোমেন্টামটাই চলে যাবে। একটা এত বড় ব্র্যান্ডকে এ রকম ভাবে স্পিডব্রেকারের সামনে ফেলে দেওয়ার কী যৌক্তিকতা?” তা হলে এত বড় কলঙ্ক মাথায় নিয়েই আইপিএল চলবে? শাহরুখের জবাব, “কিছু ক্রিকেটার ধরা পড়েছে। এ বার সুযোগ এসেছে পুরো সিস্টেমটাকে পরিষ্কার করার।”
মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে না পারা নিয়ে কোনও ক্ষোভ? শাহরুখ বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাতেই চান না। “আমি ওদের ‘সরি’ বলেছিলাম। কিন্তু আমি এটাও মনে করি, আমার বাচ্চাদের সঙ্গে ওরা যে খারাপ ব্যবহার করেছিল সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ছিল। ওরা কিন্তু ‘সরি’ বলেনি আমায়। তাই ওই ব্যাপারটাই জীবন থেকে ভুলে যেতে চাই।”
শাহরুখ আবার ফিরে গেলেন ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’য়ের অনুষ্ঠানে। ব্যাঙ্কোয়েট থেকে বেরিয়ে লিফ্টের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে দেখলাম, লবিতে কলার তুলে হেঁটে চলে যাচ্ছেন আজহারউদ্দিন। শাহরুখের সঙ্গে দেখা হয়নি ওঁর। হলে স্পট ফিক্সিং নিয়ে কী আলোচনা হত কে জানে! |