কুকুরপ্রেমী হিসেবে অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়কে সবাই চেনেন, কিন্তু চেনেন না বড়বাজারের দুধ বিক্রেতা সঞ্জয় যাদবকে।
কোনও কুকুরছানার মা হারিয়ে গিয়েছে। কোনও কুকুরছানার আবার অপুষ্টিতে ভুগে শীর্ণকায় চেহারা। কেউ আবার দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়েছে। রাস্তার এমন বিপন্ন কুকুরছানাদের কাছে এক জনই ভরসা। বড়বাজারের দুধ বিক্রেতা সঞ্জয় যাদব। রাস্তায় দুধ ফেরি করার সময়েই তিনি ক্যান থেকে দুধ নিয়ে এই সব বিপন্ন কুকুরছানাদের মুখে তুলে দিচ্ছেন। তা খেয়ে বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে ছানারা।
শহরের আর পাঁচ জন দুধ বিক্রেতার মতোই বছর কুড়ির সঞ্জয় ভোরবেলা সাইকেলে দুধের ক্যান চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েন শহরের রাস্তায়। অলিগলি দিয়ে দুধ ফেরি করার সময়ে তাঁকে দেখে কুকুরছানারা ছোটে সাইকেলের পিছনে পিছনে। সাইকেল থেকে নেমে সঞ্জয় ক্যান থেকে দুধ ঢেলে ওই কুকুরছানাদের খাওয়ান। তিনিই এখন ওদের পরম সহায় ও বন্ধু। |
সঞ্জয়ের বাড়ি বড়বাজারে। দুধ বিক্রির জন্য তিনি যশোহর রোড ধরে চলে আসেন লেকটাউন, বাঙুর, দমদম পার্ক অঞ্চলে। সঞ্জয় জানালেন, বাড়ি ও দোকান মিলিয়ে ওই অঞ্চলে রোজ ৪০ লিটার দুধ বিক্রি করেন তিনি। এর মধ্যে দেড় লিটার দুধ বরাদ্দ থাকে রাস্তার কুকুরছানাদের জন্য। শুধু লেকটাউন বা বাঙুরই নয়, বড়বাজার এলাকার কুকুরছানারাও এখন সঞ্জয়ের ভক্ত হয়ে উঠেছে। সঞ্জয়ের এই কাজে অভিভূত অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ও। তিনি বলেন, “কুকুর বা জীবজন্তুর উপরে মানুষের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। সঞ্জয়ের কাজ নজিরবিহীন। এমন মানুষের সংখ্যা বাড়লে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর হবে।”
লেকটাউন সুইমিং পুলের ধারে সকাল সাতটা নাগাদ কয়েকটি কুকুরছানাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন সঞ্জয়। একটি বড় গাছের পাতাকে খোলার মতো করে দুধ ঢেলে দিতেই দু’টো কুকুরছানা চোঁ চোঁ করে খেতে শুরু করল। সঞ্জয় বললেন, “গত দু’মাস ধরে ওদের দুধ খাওয়াচ্ছি। একটা ছানার
মা হারিয়ে গিয়েছিল। আমার দেওয়া দুধ খেয়ে ওর স্বাস্থ্য ফিরেছে।” |
চলছে ভোরের খাওয়া।—নিজস্ব চিত্র। |
বড়বাজারে বংশ পরম্পরায় দুধের ব্যবসা সঞ্জয়দের। তাঁর এক আত্মীয় জানালেন, ছোট থেকেই কুকুর ভালবাসতেন সঞ্জয়। পাড়ার কুকুরদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়ে যেত সহজে। দুধ বিক্রি করতে বেরিয়েও যে সঞ্জয় কুকুরছানাদের দুধ খাওয়াতে শুরু করবেন, ভাবতে পারেননি আত্মীয়েরা। তাঁরা জানালেন, যে কুকুরছানাদের সঞ্জয় দুধ খাওয়ান তাদের ছবিও তিনি মোবাইলে তুলে রাখেন। কার কী সমস্যা, এক মুহূর্তে বলে দিতে পারেন। সঞ্জয়দের দেশের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদের কাছে একটি গ্রামে। তিনি জানালেন, দিন কয়েকের জন্য তাঁকে দেশে যেতে হবে। রাস্তার ওই কুকুরছানাদের সঙ্গে সেই ক’দিন তাঁর দেখা হবে না। খাওয়ানো হবে না দুধ। তাই দেশের বাড়ি যাওয়ার আগে তাঁর মন উচাটন। ভোরবেলা গাছের পাতায় দুধ ঢেলে ওই কুকুরছানাদের খাওয়ানোর কেউ তো থাকবে না। |