দিন চারেক আগে এক হস্তিনীকে মনে ধরেছিল তার। সে দিন থেকে দলটির পিছু নেয় দলছুট দাঁতালটি। প্রেমিকাকে দাঁতালের থেকে আড়াল করে রেখেছিল দলের প্রেমিক মাকনাটি। হস্তিনীকে পেতে গিয়ে বাধা দেয় মাকনা। ‘পরপুরুষের’ হাত থেকে প্রেমিকার মান বাঁচাতে দাঁতহীন মাকনাটি রীতিমত মস্ত দাঁতালের সঙ্গে যুদ্ধে নেমে পড়ে। টানা চার ঘণ্টা ধরে চলে সে যুদ্ধ। দাঁতের আঘাতে ঘায়েল হলেও পালায়নি প্রেমিক মাকনাটি। গলায় ও বুকে দাঁতালটি দাঁত দিয়ে আঘাত করায় শেষে প্রাণ খোয়াতে হল বছর পঁচিশের ওই মাকনা হাতিকে। ‘পথের কাঁটা’ মাকনাকে পরাস্ত করে ৪৫টি হাতির দলে থাকা প্রেমিকাকে পেতে উঠেপড়ে লেগেছে বহিরাগত ওই দাঁতাল।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর টর্চ ও সার্চ লাইটের আলো ফেলে এই যুদ্ধের পরিণতির সাক্ষী হলেন ডুয়ার্সের মাকরাপাড়া চা বাগানের শ্রমিক-সহ বন কর্মীরা। শুঁড় উঁচিয়ে চিৎকার করতে করতে দুই হাতির মধ্যে যখন সংঘর্ষ হচ্ছে, সে সময় ঘটনাস্থলের কিছু দূরে দাড়িয়ে থাকা হাতির দলের কোনও সদস্য মাকনাটিকে বাঁচাতে না আসার মত স্বাভাবিক ঘটনাও উপলব্ধি করলেন বাগানবাসী। জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “মাকনাটির শরীরে অন্তত ২৫টি ক্ষত হয়েছিল। গলায় ও বুকে দাঁতের পুরো অংশ ঢুকে যাওয়ায় অত্যধিক রক্তক্ষরণে মাকনাটি প্রাণ হারায়। দলটির উপর আমরা নজর রাখছি।’’ |
দলের এক সদস্যকে মারার পরেও অচেনা এক বহিরাগত দাঁতালটিকে ওই হাতির দলটি কেন আশ্রয় দিল? তা নিয়ে বিস্মিত বন কর্তারা। তবে এরমধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না হস্তি বিশেষজ্ঞ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। তাঁর কথায়, “এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। দাঁতালটি ‘মস্তি’তে রয়েছে। পথের কাটা মাকনাটিকে মেরে সে এখন ওই মনে ধরা যুবতীকে হাসিল করবে। তাই দুই জনের বিবাদে বাকিরা জড়তে চায়নি। সঙ্গিনীকে পাওয়ার দিন ১৫-র মধ্যে দাঁতালটি দল থেকে বার হয়ে যাবে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, দলটি বান্দাপানি জঙ্গল থেকে মাকরাপাড়া চা বাগান হয়ে ধুমচির জঙ্গলের দিকে যাচ্ছিল। বান্দাপানি জঙ্গলের ওই দলটির কিছু দূরে দাঁতালটিকে ঘোরাফেরা করছিল। শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ শ্রমিক বস্তি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে মাকরাপাড়া বাগানের ৫৭ নম্বর সেকশন থেকে এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি হাতির চিৎকার শুনতে পান বাসিন্দারা। হাতির হানা ভেবে সার্চ লাইট নিয়ে বার হন সবাই। তার পরেই তাঁরা দেখেন প্রচুর হাতি দাড়িয়ে চিৎকার করছে। আর পাশে দু’টি হাতি লড়াই করছে। চিৎকার থামলেও লড়াই থামেনি।
বাগান কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর ও ট্রাক নিয়ে এসে হেড লাইটের আলো ফেলে, হর্ন বাজিয়ে হাতিগুলিকে বাগান থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। লড়াইয়ে মত্ত হাতি দুটি বাগানের ৫৭ নম্বর সেকশন থেকে লড়াই করতে করতে গমটু ভুটান যাওয়ার রাস্তা পার হয়ে ফের বাগানের ৫৩ নম্বর সেকশনে ঢুকে পড়ে। বন কর্মীরা ছুটে এসে আলো ফেলে, পটকা ফাটালেও যুদ্ধ বিরতি হয়নি। দলগাঁ রেঞ্জের বনকর্মী দিলীপ শর্মার কথায়, “এত বছর চাকরি করছি। দুই হাতির মধ্যে এই রকম সংঘর্ষ দেখিনি। মাকনাটি ঝিমিয়ে পড়তেই লড়াই থামে।”
শনিবার সকাল সাড়ে নটা পর্যন্ত দলটি বাগানের পাশে দলমোড়ের জঙ্গলে দাঁড়িয়ে ছিল। ‘যুদ্ধজয়ী’ দাঁতালটি দলটির মধ্যে ঢুকে নিজের জায়গা করে নিয়েছে বলে বনকর্মীরা জানান। মাকরাপাড়া বাগানের সহকারি ম্যানেজার দীপেশ কর্ণে বলেন, “যা দেখেছি তা সারা জীবন মনে থাকবে।” |