সম্পাদকীয়...
অমরত্বের আশা
ংল্যান্ডের ‘ফিউচার অব হিউম্যানিটি ইনস্টিটিউট’-এর তিন দর্শন-অধ্যাপক একটি মার্কিন সংস্থাকে বরাত দিলেন, তাঁহাদের শরীরকে কৃত্রিম উপায়ে, অতি শীতল পরিবেশে সংরক্ষণ করিতে। ভবিষ্যতে কখনও উপযুক্ত প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হইলে, সেই শরীরগুলিকে সঞ্জীবিত, জাগ্রত করা হইবে। তখন তাঁহারা এই সময়ের হৃদয় ও মস্তিষ্ক লইয়া ওই সময়ের বিশ্বটিকে অবলোকন ও উপলব্ধি করিবেন। অবশ্য সম্পূর্ণ শরীরটিকে এই ভাবে সংরক্ষণের ব্যয় খুবই অধিক, প্রায় এক লক্ষ আটত্রিশ সহস্র পাউন্ড, এক জন অধ্যাপক সেই অর্থ ব্যয় করিলেও, অন্য দুই জন কেবল মাত্র তাঁহাদের মস্তক সংরক্ষণ করিতে উত্‌সাহী। কেবল মস্তক লইয়া জীবন ধারণ খুব সুবিধাজনক হইবে না, কিন্তু সেই সময় হয়তো এমন উপায় থাকিবে, যাহার সাহায্যে সেই মস্তিষ্কটির স্মৃতি ও প্রজ্ঞা সকলই একটি কম্পিউটারে ডাউনলোড করিয়া লওয়া যাইবে এবং মানুষটি কম্পিউটার হিসাবে বহু যুগ বিদ্যমান থাকিবেন। বরং সম্পূর্ণ শরীরময় মানুষটির বিপদে পড়িবার সম্ভাবনা, ওই ভাবী কালের ভাইরাসগুলিকে ঠেকাইবার যথেষ্ট ক্ষমতা তাঁহার দেহের থাকিবে কি না, সন্দেহ। অবশ্য সেই সময়ের ঔষধের উপর ভরসা রাখাই বুদ্ধিমানের কর্ম। তবে তত্‌কালীন মানুষের শরীর-গঠন যদি সম্পূর্ণ বদলাইয়া যায়, যদি তাহারা হইয়া পড়ে বারো ফুট দীর্ঘকায় বা অতিশয় পৃথুল, তাহা হইলে এই ব্যক্তি কেবল শরীরের কারণে তাহাদের মধ্যে বড় বিসদৃশ হইয়া বিরাজ করিবেন। তিন জনকেই দূরদর্শনে বহু সাক্ষাত্‌কার দিতে হইবে। ইতিহাসবিদগণ তো তাঁহাদের ছাড়িয়া নড়িতেই চাহিবেন না। যে সংস্থা এই দায়িত্বটি লইয়াছে, তাহাদের মক্কেল কেবল এই তিন জনই নহেন। ৯৭৪ জন তাঁহাদের সদস্য, আরও ১১৭ জন রোগীকে আত্মীয়েরা সদস্য করাইয়াছেন, ইহা ব্যতীত ৪৪টি পোষ্যও এই ব্যবস্থার গ্রাহক হিসাবে রহিয়াছে।
নিজ কালকে অতিক্রম করিয়া এই বাঁচিবার মধ্যে খোদকারির অস্বস্তি আসিয়া পড়িতেছে। বহু শিল্পে মানুষের একটি রক্ষণশীলতা ধরা পড়ে: মানুষ যখনই তাহার প্রকৃতিদত্ত নিয়তিকে লঙ্ঘন করিয়া নিজ হস্তে সমগ্র ভাগ্যটি লইতে চায়, চরম দুর্দশা নামিয়া আসে। রূপকথা বা কল্পবিজ্ঞানের মোড়কে মানুষের এই উদ্বেগ বারংবার বিবৃত। কিন্তু অজানার ভীতি কখনওই মানবসমাজকে সমৃদ্ধ করে নাই, বরং সকল আশঙ্কা ও সাধারণ জ্ঞানকে দূরে সরাইয়া প্রায় উদ্ভট কল্পনায় ভর দিয়া যাঁহারা বিপদের সাগর পাড়ি দিবার জন্য উন্মত্ত ঝাঁপ দিয়াছেন, তাঁহারাই প্রগতির ভিত্তি প্রস্তুত করিয়াছেন। চকমকি ঠুকিয়া যেই মানুষ প্রথম অগ্নি জ্বালাইয়াছিল, তাহাকেও নিশ্চয় শুনিতে হইয়াছিল: উহা কী অদ্ভুত, ভয়াল, ওটি নির্বাপণ করিলেই মঙ্গল। অথচ মিশরীয় মমি গোত্রের শরীর-অবিনাশী বন্দোবস্ত বহুচর্চিত আত্মার সংজ্ঞার সহিত সমঞ্জস। সেই আত্মাকে কিছুই নাশ করিতে পারে না, মৃত্যুতেও তাহার লোপ নাই। এই সংস্থা সেই অনন্ত চেতনার সম্ভাবনাকে একটি বাস্তবতার বৃত্তে আনিয়া দিতেছে মাত্র। ভাবীকালে প্রযুক্তি কোন স্তরে উপনীত হইবে কেহই জানে না, হয়তো ভয়াবহ এক বিশ্বযুদ্ধে সকলই ধ্বংস হইয়া যাইবে, কিন্তু যদি তাহা প্রত্যাশিত হারে উন্নতি করিতে থাকে, তবে শতাধিক বত্‌সর পরে মানুষ বাঁচাইবার রহস্য তাহাদের আয়ত্ত হইতেই পারে। তখন বাঁচিয়া উঠিলে হয়তো ক্রমে অস্বস্তির ভার অসহ হইবে, হয়তো স্মৃতিমেদুরতার বেদনা বা ভিনগ্রহী-সদৃশ অনাত্মীয়দিগের মধ্যে জীবন ধারণ বরং মৃত্যু-প্রার্থনা ডাকিয়া আনিবে, কিন্তু আজ যাঁহারা সকল দিক ভাবিয়াও ইতিবাচকতাকে আলিঙ্গন করিতেছেন, তাঁহাদের দর্শন-অধ্যাপনা সার্থক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.