যৌন নিগ্রহের অভিযোগে কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শনিবার গ্রেফতার করেছে প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানাল সাউথ রোডের ওই স্কুলের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির তিন ছাত্রীর অভিভাবক অভিযোগ করেন, গত সাত দিন ধরে বিভিন্ন সময়ে বিজয় সাহু (৫৪) নামে ওই শিক্ষক স্কুলের অফিস ঘরে তিন ছাত্রীকে আটকে রেখে যৌন নিগ্রহ করেন। ওই ছাত্রীদের বয়স ছয়, আট এবং দশ বছর। অভিযোগ, এ দিনও দুই ছাত্রীকে অফিস ঘরে আটকে রাখেন ওই শিক্ষক। এক ছাত্রী স্কুলের বাইরে পালিয়ে এসে স্থানীয় লোকজনকে ঘটনাটি জানালে তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পরে অভিভাবকেরা থানায় গিয়ে বিজয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় ওই শিক্ষককে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংলগ্ন চিংড়িহাটার কাছে অবস্থিত ওই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা সাকুল্যে জনা কুড়ি। ক্যানাল সাউথ রোড এলাকার ছেলেমেয়েরা ছাড়াও ধাপা মাঠপুকুর, বিবেকানন্দ পল্লি থেকে কিছু ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে ওই স্কুলে। বিজয় ছাড়া স্কুলে রয়েছেন আরও তিন জন শিক্ষক। এক জন শিক্ষক এখন বিহারে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। বাকি দু’জন কয়েক দিন ধরে স্কুলে আসছেন না। ফলে বিজয়কেই প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে হচ্ছিল।
দশ বছরের ছাত্রীটির মা এ দিন জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে কয়েক দিন ধরেই জানাচ্ছিল, ওই শিক্ষক তার ও স্কুলের আরও কয়েক জনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ স্কুল ছুটির পরে তাঁর মেয়ে বাড়িতে এসে জানায়, এ দিনও তাকে এবং আরও দুই ছাত্রীকে অফিস ঘরে আটকে রেখে অশালীন আচরণ করেন ওই শিক্ষক। মহিলা বলেন, “মেয়ে জানিয়েছে, অভিভাবকদের কিছু জানাতে নিষেধও করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। তিনি ভয় দেখিয়েছিলেন, বাড়িতে বললে স্কুলে আটকে রেখে দেবেন। ভয়ে মেয়ের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। দুপুরে খেতেও পারেনি।”
ক্যানাল সাউথ রোডের বাসিন্দা আট বছরের ছাত্রীটির মা বলেন, “ওই শিক্ষক এ দিন সকালে আমার মেয়েকেও অফিস ঘরে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। রবার ব্যান্ড কেনার অছিলায় মেয়ে স্কুল থেকে পালিয়ে এসে পাড়ার লোকজনকে সব জানায়। বাড়ি ফিরে আমাকে বলে। স্কুলে গিয়ে দেখি পুলিশ প্রধান শিক্ষককে থানায় নিয়ে যাচ্ছে।” ওই মহিলা আরও বলেন, “পুলিশের সামনে ভয়ে কাঁপছিল আমার মেয়ে। সাহস দেওয়ার পরে সব বলেছে।”অভিযুক্তের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে এ দিন স্থানীয় লোকজন প্রগতি ময়দান থানায় বিক্ষোভ জানান। স্থানীয় যুবকেরা অভিযোগ করেন, স্কুলে অন্য শিক্ষক না থাকার সুযোগ নিয়ে বিজয় ছাত্রীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করছিলেন। প্রয়োজনে স্কুলটি তুলে দেওয়ার দাবিতেও তাঁরা সরব হবেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিভাবকদের অভিযোগ পাওয়ার পরে তিন ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পড়ুয়ারা তাদের অভিভাবকদের সামনেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। এর পরেই গ্রেফতার করা হয় বিজয়কে। |