নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বৃহস্পতিবার সকাল সওয়া ১০টা। মিনিট ১৫ আগেই খুলেছে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের এয়ারভিউ মোড় এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাটি। ব্যাঙ্কে তখন হাজির জনা ১২ কর্মী। সকলে তৈরি হয়ে বসতে না বসতেই একে একে ঢুকে পড়ে ৬ যুবক। ব্যাঙ্কে তখন আর কোনও গ্রাহক নেই। ব্যাঙ্কের তিনটি কাউন্টারের কর্মীদের নানা প্রশ্নে ব্যস্ত রাখে তারা। অভিযোগ, সেই সুযোগে এক জন ক্যাশিয়ারের ক্যাবিনে ঢুকে ট্রাঙ্ক থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে সরে পড়ে। ক্যাশিয়ারের ক্যাবিন থেকে এক যুবককে হামাগুড়ি দিয়ে বেরোতে দেখে চিৎকার করেন এক ব্যাঙ্ক-কর্মী। পরে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে, দুষ্কৃতীরা কী
কাণ্ড করেছে।
ফুটেজ দেখে পুলিশের অনুমান, অন্তত ছ’জন দুষ্কৃতী ঘটনায় জড়িত। রাত পর্যন্ত পুলিশ তাদের ধরতে পারেনি। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন বলেন, “ছক কষেই ওই কাজ হয়েছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।” তবে পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে তারা ব্যাঙ্ক-কর্মীদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও ধন্দে রয়েছে। অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, বেলা ১০টা নাগাদ ব্যাঙ্ক খুললে ম্যানেজার নিজের ক্যাবিনে ছিলেন। বাইরে লেনদেনের জন্য তিনটি কাউন্টারে তখন তিন জন কর্মী বসেছেন। তিন জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দৈনন্দিন কাজের নানা জিনিস গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনটি কাউন্টারের পরে একটি ক্যাবিনেই ভল্ট। ক্যাশিয়ার সেখানে ঢুকে ভল্ট খুলে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা বার করে একটি ট্রাঙ্কে রেখেছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্কে ঢুকে একটি কাউন্টারে দুই দুষ্কৃতী ব্যাঙ্ক ড্রাফ্ট করার জন্য একটি কাগজে কিছু লিখে দুই ব্যাঙ্ক-কর্মীকে দেয়। পাশের কাউন্টারে গিয়ে আর এক দুষ্কৃতী জানায়, তার মায়ের নামে অ্যাকাউন্ট। অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে না পারায় জরুরি কারণে সে টাকা তুলতে এসেছে। সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে, সেটাই তার জিজ্ঞাস্য। তৃতীয় কাউন্টারেও এক জন গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করে। |
ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ক্যাশিয়ার টাকা বার করে ভল্ট বন্ধ করে ট্রাঙ্কে রাখার মুহূর্তেই এক যুবক কাউন্টারের বাইরে থেকে একটি কাগজ এগিয়ে দিচ্ছে। ওই যুবককে ক্যাশিয়ারের কাছে পরামর্শ চাইতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাশিয়ারের ক্যাবিনের দরজা খোলা ছিল। সেখানে বসেছিলেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী গীতা হেলা। তিনি বলেন, “আমাকে ডেকে একটা ছেলে বলল, ওর মায়ের শরীর খারাপ বলে তিনি টাকা তুলতে আসতে পারবেন না। সে জন্য কোথায়, কী করতে হবে জানতে চাইল। আমি উঠে ওকে জায়গা দেখাতে নিয়ে যাই।”
ফুটেজে দেখা গিয়েছে, গীতাদেবী সরতেই হামাগুড়ি দিয়ে এক যুবক ক্যাশিয়ারের ক্যাবিনে ঢুকে ট্রাঙ্ক থেকে পাঁচটি নোটের বান্ডিল তুলে নিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে ভরে। এক-একটি বান্ডিলে ১,০০০টি ৫০০ টাকার নোটে পাঁচ লক্ষ করে টাকা ছিল। ইতিমধ্যে বাইরের কাউন্টারের সামনে থেকে একে একে পাঁচ যুবকই প্রায় ছুটে বেরিয়ে গিয়েছে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে যুবকটি ক্যাবিন থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরনোর সময়ে দেখে ফেলেন ব্যাঙ্ককর্মী অমূল্য সিংহ। তিনি চিৎকার করে ওঠেন। ততক্ষণে ক্যাশিয়ার দেবল দত্তের সম্বিত ফিরেছে। তিনি বলেন, “আমাকে একটি ছেলে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে নানা প্রশ্ন করে ব্যস্ত করে তুলেছিল। হঠাৎ সে সরে যায়। দেখি, ট্রাঙ্কে যে ছ’টি বান্ডিল তুলেছিলাম, তার মধ্যে পাঁচটি নেই। তখনই অমূল্যের চিৎকার। ছুটে বেরোই। কিন্তু হিলকার্ট রোডের ভিড়ে কাউকে খুঁজে পাইনি। লাগোয়া ট্রাফিক পুলিশের কন্ট্রোল-রুমে খবর দিই।”
ঘটনার পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিপদসঙ্কেত সূচক সাইরেন বাজাননি কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ম্যানেজার অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা রক্ষী নেই। তবে অসাবধানতা কিছুটা রয়েইছে। যেহেতু কর্মীরা দৌড়ে কাছাকাছি কর্তব্যরত পুলিশকে জানিয়েছেন তাই সাইরেন বাজানো হয়নি।” ব্যাঙ্ক লাগোয়া এলাকার রিকশাচালকদের অনেকেরই দাবি, টাকার থলি হাতে এক যুবককে অটোয় প্রধাননগরের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে। |