নির্দেশ পুরুলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষকদের নিকটাত্মীয়েরাও প্রাইভেটে পড়াবেন না
লেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো বটেই, তাঁদের নিকটাত্মীয়েরাও স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে ‘প্রাইভেট টিউশন’ করতে পারবেন নাএমন নির্দেশিকা জারি করে বিতর্কের মুখে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়। নিকটাত্মীয় বলতে শিক্ষক-শিক্ষিকার স্ত্রী বা স্বামী এবং ছেলে-মেয়ে প্রভৃতির কথা বোঝানো হয়েছে। এই ‘প্রভৃতি’ কারা, তা অবশ্য জানাতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, “এমন কোনও নির্দেশিকার কথা আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন আছে। আমি তাতে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।”
মন্ত্রী এ কথা বললেও গত ৩০ মে জারি করা ওই নির্দেশিকা নিয়ে পুরুলিয়ার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনে থাকা কলেজগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরনের নির্দেশ ‘তুঘলকি’। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন অধিকারে তাঁদের নিকটাত্মীয়দের পড়ানোর ব্যাপারে খবরদারি করতে পারেন? উল্টো দিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগী করার উদ্দেশ্যেই ওই নির্দেশিকা। একই সঙ্গে কোনও শিক্ষক যাতে তাঁর নিকটাত্মীয়কে ঢাল করে ‘প্রাইভেট টিউশনি’ বা ‘কোচিং সেন্টার’ চালাতে না পারেন, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে নির্দেশিকার মাধ্যমে। নচিকেতাবাবুর ব্যাখ্যা, “শিক্ষকেরা যাতে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যাপারে ‘এনার্জি’ পান, তা দেখা হয়েছে।”
তাঁদের অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোনও সংগঠন করতে পারবেন না, কিছুদিন আগেই এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করে বিতর্কে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই নতুন নির্দেশিকাটিও ত্রুটিমুক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শমিতা মান্না বৃহস্পতিবার বলেন, “এই নির্দেশিকাকে ঘিরে খানিকটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষক ও তাঁদের নিকটাত্মীয়েরা প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং করাতে পারবেন না। বিষয়টি আসলে তা নয়। আমরা বলছে চেয়েছি, যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক বা অধ্যাপক, তিনি ও তাঁর কোনও নিকটাত্মীয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের টিউশন করাতে পারবেন না। অন্য বিষয় তিনি পড়াতেই পারেন।” যে সমস্ত জায়গায় ওই নিদের্শিকা পাঠানো হয়েছিল, সেখানে শীঘ্রই সংশোধিত নির্দেশিকা যাবে বলে তিনি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিকটাত্মীয়ের প্রাইভেটে পড়ানোর ব্যাপারে এমন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি কার্যত নজিরবিহীন, বলছেন শিক্ষা মহলের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। ওয়েবকুটার (ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন) পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক বাবর আলি মির্ধা বলেন, “এ রকম কোনও নির্দেশিকা দেওয়া যায় নাকি? কোনও শিক্ষক বা অধ্যাপকের নিকটাত্মীয়ের উপরে এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ জারি করা যায় না। আমরাও চাই প্রাইভেট টিউশন বন্ধ হোক। কিন্তু এটা পদ্ধতি নয়। এ জন্য সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।” এসকেবুটার (সিধো-কানহো-বীরসা ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন) সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোটা জেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিবারবর্গকে অপমান করার এমন নজির বোধহয় পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশেই বিরল। এই নির্দেশ বিধি বহির্ভূতও। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার (ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসার্স অ্যাসোসিয়েশন) আহ্বায়ক সাধনা খাওয়াস অবশ্য উপাচার্যের সুরেই বলেছেন, “একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি ততটা গুরুতর নয়।” যাদবপুর বিশ্বব্যিালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষও এই নির্দেশিকা জারিতে কোনও অন্যায় দেখছেন না। তাঁর কথায়, “হতে পারে, কোনও শিক্ষক নিকটাত্মীয়ের নামে বকলমে নিজে গৃহশিক্ষকতা করছেন। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে এমন নিয়ম করতেই পারেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.