|
|
|
|
প্রার্থীদের সভায় সুব্রত বক্সী |
বিক্ষুব্ধদের বোঝানোর বার্তা তৃণমূল নেতৃত্বের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দলের যে সব কর্মী প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন, কিন্তু প্রতীক না পেয়ে নির্দল হয়ে দাড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আপাতত কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটবে না তৃণমূল। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এসে এই বার্তাই দিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তাঁর কথায়, “যাঁরা প্রতীক পাননি, তাঁদেরও যথাযথ সম্মান-মর্যাদা দিতে হবে। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই বার্তা। আমি শুধু সেই বার্তা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। যাঁরা প্রতীক পেয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে ওঁদের কাছে পৌঁছন। সার্বিক ভাবেই লড়াইয়ের জায়গা তৈরি করুন।”
আগামী ২ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত নির্বাচন। মনোনয়ন পর্ব শেষ হতেই শুরু হয়েছে প্রচার। শাসক তৃণমূল ইতিমধ্যেই ১ হাজার ৭৮টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। এর মধ্যে ৯৪৬টি আসন গ্রাম পঞ্চায়েতের। বাকি ১৩৩টি আসন পঞ্চায়েত সমিতির। এর অধিকাংশই তৃণমূলের। তবে এই পরিসংখ্যান স্বস্তি দিচ্ছে না শাসকদলকে। কারণ, ব্লকে ব্লকে দলীয় প্রার্থীদেরই কাঁটা হয়ে রয়েছেন ‘বিক্ষুব্ধ’রা। এর সংখ্যাটা খুব কম নয়। গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের অন্তত ২৩৪ জন ও পঞ্চায়েত সমিতিতে অন্তত ৫৫ জন কর্মী নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ‘বিক্ষুব্ধ’ সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নীচুতলায় সংগঠনের ভিত আলগা হবে বলেই মনে করেন দলের একাংশ। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সব দিক খতিয়ে দেখেই আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে তৃণমূল। তাই তড়িঘড়ি ‘বিক্ষুব্ধ’দের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে চাইছে না তারা। |
|
বিদ্যাসাগর হলে সভায় সুব্রত বক্সী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতি আসনের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এক সভা করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল। সুব্রতবাবু ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়।
দলেরই এক সূত্রে খবর, সভাস্থলে পৌঁছনোর পরই সুব্রতবাবু তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের কাছে জানতে চান, ঠিক কতগুলো আসনে দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। কতগুলো আসনে দলেরই কর্মীরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রদ্যোৎবাবু জানান, প্রতীক না পেয়ে দলেরই যাঁরা নির্দল হয়ে নির্বাচনের ময়দানে রয়েছেন, তাঁদের সংখ্যাটা প্রায় তিনশো। পরে সভায় সুব্রতবাবু বলেন, “আমি জানি, যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের ৭০ শতাংশই আগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ৫০ শতাংশ সে ভাবে সক্রিয় রাজনীতিও করেননি।” মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্যই এই পরিস্থিতি বলে মত তৃণমূলের রাজ্য সভাপতির। তাঁর কথায়, “একটা রাজনৈতিক দল সকলকে পাইয়ে দিতে পারে না। যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, আমি বলব ভাগ্যের পরিহাস। আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন, এটাই অনেক।” এরপরই দলীয় প্রার্থীদের ‘বিক্ষুব্ধ’দের বাড়ি গিয়ে বোঝানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, “মনে রাখবেন, কাউকে দল থেকে সরিয়ে দিয়ে নয়। সকলকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। নির্বাচনে জিতলে ক্ষমতা উপভোগ করতে পারবেন।”
সুব্রতবাবুর বক্তব্যের পরই মঞ্চে উঠে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন ঝাড়গ্রামের অনিল মণ্ডল। অনিলবাবু এ বার জেলা পরিষদের আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। প্রতীক পাননি। দলের সিদ্ধান্ত জানার পর তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। সুব্রতবাবুর হাত ধরে অনিলবাবু বলেন, “জেলা পরিষদের আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। প্রতীক না পেয়ে প্রত্যাহার করে নিই। নির্বাচনে দলের সঙ্গেই থাকব।” প্রত্যুত্তরে রাজ্য সভাপতি বলেন, “আপনারাই তো দলকে দেখবেন।”
‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থীদের সঙ্গে দলের কেউ যাতে খারাপ আচরণ না করেন, সেই নির্দেশও দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। সভায় তিনি বলেন, “হাসি মুখে সকলের কাছে যাবেন। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমাদের বহু যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু, আসন নির্দিষ্ট। তাই সকলকে প্রতীক দেওয়া যায়নি।” সভা শেষে জেলা তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, “বিক্ষুব্ধদের প্রতি সুর নরম করা ছাড়া তো কোনও উপায়ও নেই। একসঙ্গে তিনশো জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে দলেরই ক্ষতি হবে। তখন নীচুতলায় সংগঠন দেখবে কে?” |
|
|
|
|
|