কংগ্রেসের অন্দরে মতভেদের ফলে ফের খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা থেকে পিছিয়ে এল মনমোহন সিংহ সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ খাদ্য সুরক্ষা বিল সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হোক।” কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানান,“অর্ডিন্যান্স জারি করার আগে সরকার আরও একবার বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। বিরোধীরা যদি সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে আলোচনার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকে, সরকার তাতেও রাজি।”
তবে সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে অর্ডিন্যান্স জারি করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে কংগ্রেসের মধ্যেই। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাস অর্ডিন্যান্সের ব্যাপারে খুব উৎসাহী নন। ঘরোয়া আলোচনায় এই মন্ত্রীদের দাবি, রাহুল গাঁধীও চান সংসদে আলোচনার মাধ্যমেই খাদ্য সুরক্ষা বিলটি পাশ করা হোক। আপত্তি জানিয়েছেন এনসিপি নেতা ও কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারও।
কংগ্রেস তথা সরকারের একটি অংশ অবশ্য এই দোলাচলের বিষয়ে অন্য একটি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, জয়রামের মতো সনিয়া-রাহুল ঘনিষ্ঠ নেতারা চাইছেন, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে সংসদে বিতর্ক হোক। তাতে অংশ নিয়ে সনিয়া এবং রাহুল বক্তৃতা দিন। দশ বছর আগে সিমলায় কংগ্রেসের চিন্তন মন্থন শিবিরে সনিয়া এই প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা কী ভাবে সরকার রূপায়ণ করল সে কথা তুলে ধরা হোক সংসদে। তাতে লোকসভা ভোটের আগে গোটা দেশে একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে।
রাহুল ঘনিষ্ঠ নেতাদের এও যুক্তি, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা হলেও তা সংসদে পাশ করাতে হবে। সেক্ষেত্রেও আলোচনা হবে ঠিকই। কিন্তু একবার অর্ডিন্যান্স জারি করে দেওয়ার পর সেই বিতর্কের বিশেষ ‘দম’ থাকবে না। ফলে তখন সনিয়া-রাহুল এ ব্যাপারে সংসদে বক্তৃতা দিলে তুলনামূলক ভাবে সংবাদমাধ্যমে কম প্রচার হবে। বরং সরকার কেন অর্ডিন্যান্স জারি করল সেই প্রশ্ন তুলে চুলচেরা বিচার করবেন বিরোধীরা। তাই সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে বা বাদল অধিবেশনে বিলটি পাশ করানোর ব্যাপারে চেষ্টা করা হোক। বিলটি সংসদে পাশ করানোর সময় বিজেপি বা বিরোধীরা বাধা দিলে, তখন বরং অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে সরকার। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের কাছে অর্ডিন্যান্স জারি করার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি থাকবে।
|