অতীতে কলকাতা-সহ বাংলার বেশ কিছু পুরনো বাড়ির নেপথ্যে হাত ছিল ইহুদি স্থপতিদের। এ বার খাস ইজরায়েলি বিশেষজ্ঞদের কাছে সব্জি চাষের পাঠ নেবেন বাংলার কৃষক ও কৃষিবিজ্ঞানীরা। কৃষি ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিনিময়ের পথে বৃহস্পতিবার আরও এক কদম এগিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ ও ইজরায়েল।
মহাকরণে কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে ভারতে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালন উশপিজ এ দিন সেই অগ্রগতির কথা জানান। তিনি বলেন, “বাংলার চাষিদের দক্ষতা ও উন্নত প্রযুক্তির মিশেলে এখানে উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী।” ইজরায়েলের কলকাতা কনসাল, শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়াও বৈঠকে ছিলেন।
ন্যূনতম জলের জোগানে বা টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে নানা ধরনের সব্জি চাষের সাফল্যে ইজরায়েল গোটা বিশ্বেই দৃষ্টান্ত গড়েছে। এ দেশে হরিয়ানা, রাজস্থান, তামিলনাডু, কর্নাটক প্রভৃতি রাজ্যে চাষ-আবাদের প্রসারে কাজ শুরু করেছে তারা। এ বার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পূর্ব ভারতে পা রাখছে ইজরায়েল। এর আগে যখন উশপিজ কলকাতায় এসেছিলেন, তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে কৃষির উন্নয়নে এই ধরনের উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার বিষয়ে কথা হয়েছিল তাঁর। |
ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালন উশপিজ। —নিজস্ব চিত্র। |
কৃষিমন্ত্রী এ দিন বলেন, “হুগলির আদিসপ্তগ্রামে দুই একর জমি দিচ্ছি আমরা। সেখানে সরকারি কৃষিখামারের বিকাশ ঘটিয়ে উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।” মন্ত্রীর বক্তব্য, এ
দেশের বিশেষজ্ঞদের বিদেশে প্রযুক্তি শেখাতে পাঠিয়ে এত দিন তেমন লাভ হয়নি। তার থেকে ইজরায়েলের বিশেষজ্ঞদের এ রাজ্যে নিয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ও কৃষকদের সরাসরি যোগাযোগ ঘটালে তা বেশি কার্যকর হবে।
রাজ্যের কৃষি দফতর সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্রের বিষয়ে সরকার সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট পাঠিয়েছে। ইজরায়েলের তরফে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উশপিজের আশা, সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বছরের মধ্যেই কেন্দ্রটি চালু হয়ে যাবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্যান্য রাজ্যেও কৃষিতে সাহায্য করতে চায় ইজরায়েল। বিকেলে সিআইআই-এর এক সভায় উশপিজ জানান, গোটা দেশে ১১টি রাজ্যে ২৯টি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। তাঁর কথায়, “কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
পশ্চিমবঙ্গের সুগন্ধি চাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৃষিপণ্য ইজরায়েলে রফতানির ইচ্ছাও এ দিন সে-দেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রকাশ করেছে রাজ্য। গুণমান খতিয়ে দেখার জন্য বাংলার সুগন্ধি চাল, আলু, আম, লিচু, আনারস, কলার নমুনা ১০ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলেছে ইজরায়েল।
কৃষি নিয়ে বৈঠক ছাড়াও এ দিন কলকাতাবাসী কিছু ইহুদির সঙ্গে দেখা করেন উশপিজ। সিআইআই-এর সভাতেও তাঁর বক্তৃতায় কলকাতা নিয়ে আগ্রহের কথা ফুটে ওঠে। তাঁর বক্তব্য, এই শহর যে-ভাবে ইহুদিদের দেখে, অন্যত্র তা যায় না। এ শহরের ইহুদিদের অভিভাবকপ্রতিম ডেভিড নাহুম (নিউ মার্কেটের কেক বিপণির কণর্ধার)-এর প্রয়াণের পরে এই প্রথম কলকাতায় এলেন উশপিজ। তিনি নারকেলডাঙায় ইহুদিদের সমাধিস্থলে গিয়ে নাহুমের সমাধিতে ফুলও দেন।
|