গ্রামীণে ৪৫, শিল্পাঞ্চলে ১০
বিনা যুদ্ধেই পঞ্চায়েত দখল তৃণমূলের
শিল্পাঞ্চলে ততটা দাঁত ফোটাতে না পারলেও, বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় কার্যত বিনা যুদ্ধে অনেকখানি রাজত্ব দখল করে ফেলেছে তৃণমূল।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর্ব মিটে যাওয়ার পরে পরিষ্কার, জেলার ২৭৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৫টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে শাসকদল। তার ৪৫টিই আবার গ্রামীণ এলাকায়। বেশ কয়েকটি ব্লকে যত গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, তার একটা বড় অংশই দখল করেছে তারা।
যেখানে গোড়া থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছে তৃণমূল, সেই রায়না-২ ব্লকে আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সব ক’টিই তৃণমূল দখল করেছে। তার মধ্যে পালিটা-১ ও ২, আরুই ও বড়বৈনানের সমস্ত আসনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। তবে পাশের রায়না-১ ব্লকে তারা কোনও পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি। এমনকী সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া বামদেব মণ্ডলের হিজলনাতেও ২২টির ভিতরে মাত্র সাতটি আসন তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়েছে।
যে মঙ্গলকোট-কেতুগ্রামে এক সময়ে বামবিরোধীদের খুঁজেই পাওয়া যেত না, সেখানেই চিত্রটা অনেকটা এক। মঙ্গলকোটের পালিগ্রামে ১৩টি আসনের মধ্যে ১২টি, চানকে ১৫ মধ্যে ১১টি, গোতিষ্ঠায় ১১-য় ১১, মঙ্গলকোটে ১৮টির মধ্যে ১৩টি আসন তৃণমূলের ঘরে গিয়েছে। কেতুগ্রাম-১ ব্লকে আটটির মধ্যে সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতও তা-ই। আনখোনা, জ্ঞানদাস কান্দরা, রাজুর, মোরগ্রাম-গোপালপুর ও পালিটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সমস্ত আসন দখল করেছে তৃণমূল। অধিকাংশ আসনে জিতে পেয়েছে পাণ্ডুগ্রাম ও আগরডাঙা পঞ্চায়েতও। তবে বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টি আসনের ভিতরে মাত্র দু’টি পেয়েছে তারা।
ভাতারে এরুয়ার, সাহেবগঞ্জ-১, বনপাশ ও বামুনাড়ায় অর্ধেকের বেশি আসনে জিতেছে তৃণমূল। বর্ধমান-১ ব্লকে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটিতেও তা-ই। তার মধ্যে বাঘাড়-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনই তারা পেয়েছে। বর্ধমান-২ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টিতে জিতেছে তৃণমূল। এর মধ্যে বণ্ডুল-২ পঞ্চায়েতে সব ক’টি, গোবিন্দপুরে ১৮টির ভিতরে ১২টি, নবস্থা-১ পঞ্চয়েতে ১৩টির মধ্যে সাতটি, বড়শূল-১ পঞ্চায়েতে ১১টির মধ্যে ৯টি এবং বৈকুন্ঠপুরে ১৮টির মধ্যে ১৭টি আসনই তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে। এই ব্লকগুলির প্রতিটিতেই ২০০৩ ও ২০০৮ সালে আরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল সিপিএম।
তৃণমূলের বিজয়রথ অবশ্য অনেকটাই থমকে গিয়েছে শিল্পাঞ্চলে। পাণ্ডবেশ্বর, অন্ডাল বা সালানপুরে তারা কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতের আগাম দখল পায়নি। সালানপুরে কোনও আস্ত পঞ্চায়েত জিততে পারেনি। বারাবনিতে পেয়েছে মাত্র একটি পঞ্চায়েত। সেটি তাদের বরাবরের শক্ত ঘাঁটি পাঁচগেছিয়া। ২০০৩ সালে যখন জেলা জুড়ে প্রচুর আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল বামফ্রন্ট, সে বারও এই পাঁচগেছিয়ায় পাঁচটি আসনে তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। রানিগঞ্জ ব্লকে এগরা গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪টির ভেতর ১২টি পেয়েছে তারা।
জামুড়িয়া ব্লকেও শ্যামলা পঞ্চায়েতে ১৪টির মধ্যে ১৩টি তাদের দখলে গিয়েছে। এই ব্লকে তিনটি পঞ্চায়েত তারা পেয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুর-ফরিদপুরে ছ’টির মধ্যে এক মাত্র লাউদোহা পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৮টি ভিতরে ১১টি আসনে জিতেছে তারা। কাঁকসার সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে বিদবিহারে ১২টি আসনের সব ক’টিও পেয়েছে। গলসি-১ ব্লকের শিরোরাই পঞ্চায়েতে ১৬টির মধ্যে ১৬টি আসন পেলেও অন্য ৯টি পঞ্চায়েতের একটিও দখল করতে পারেনি তৃণমূল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “গ্রামাঞ্চলের যে এলাকাগুলিতে আমরা শতকরা ৬০ ভাগ বা তারও বেশি ভোট পাই, পুলিশের মদতে সেখানেই তীব্র সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। শিল্পাঞ্চলে ওরা এত দিন কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারত। হয়তো ওদের আশা, ওখানে লড়ে জিতবে। তাই ভোটের আগে পঞ্চায়েত দখলের চেষ্টা করেনি।” তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাসের বক্তব্য, “শিল্পাঞ্চলে আমাদের দিক থেকে নজরদারিতে দুর্বলতা ছিল। স্থানীয় নেতাদেরও কিছুটা গাফিলতি ছিল। ভোটের সময়ে আমরা এই খামতি পুষিয়ে নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.