রাজ্যের সঞ্চয় প্রকল্পে জনতার মত
শুক-শারি, দেবযানী ট্যাক্স, টিপ্পনীতে হতাশ সরকার

• খুব ভাল! আরও একটা সারদা হবে!
• যত্ত আজগুবি কারবার! সরকারের কি আর কাজ নেই?
• মন্দ কী? উত্তম প্রস্তাব। গরিবের সামাজিক সুরক্ষায় সরকার সঞ্চয় প্রকল্প চালু করলে তো ভালই হবে।
• ২৮% ডিএ বাকি। সেই টাকা মেরে দিয়েই এখন সারদার টাকা মেটানো হচ্ছে!
• দু’টি পাখির ছবি। যেন শুক-শারি। একটির মুখে সিগারেট। তা দেখে অন্যটির প্রশ্ন, তুমিও সিগারেট টানছ? জবাব: সরকার দেবযানী ট্যাক্স বসিয়েছে। সিগারেট টেনেই ট্যাক্স দিতে হচ্ছে!

সারদার মতো লগ্নি সংস্থার হাত থেকে আমজনতাকে বাঁচাতে পাল্টা সঞ্চয় প্রকল্প চালুর কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য। তা নিয়ে ওয়েবসাইটে মতামত চেয়েছিল অর্থ দফতর। তার ঠিক এক মাস পরে ওয়েবসাইটে যে সাড়া মিলেছে, উপরের মন্তব্যগুলি তারই কিছু নমুনা। পরামর্শের বহর দেখে রীতিমতো হতাশ মহাকরণের কর্তারা।
গত ৩০ দিনে সাকুল্যে ৭০টি বক্তব্য এসেছে ওয়েবসাইট মারফত। তাতে এমন কোনও প্রস্তাব নেই, যা সরকারকে দিশা দেয়। উল্টে সিংহভাগ মন্তব্য এমন যে, তাতে সরকারের এ ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প চালুর অভিপ্রায় নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, সারদার মতো কারবারিদের আড়াল করতেই কি এখন এ সব করা হচ্ছে?
মহাকরণের খবর, অর্থ দফতর এ নিয়ে দু’বার অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পাঠিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। একটি রিপোর্টে থাকা কিছু বক্তব্য দেখে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও হাসি চাপতে পারেননি। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “১৫-২০টি বক্তব্যের তবু কিছু সারবত্তা রয়েছে। বাকিগুলি অবিবেচকের মতো লেখা। মতামতের বদলে সারদা কাণ্ড নিয়েই ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়েছে সেখানে।” মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক কর্তা বলেন, “আশা ছিল, কিছু আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা, বিশিষ্ট নাগরিক, অর্থনীতিবিদ এ ব্যাপারে মতামত দেবেন। কিন্তু যা এসেছে, তা দেখে আমরা হতাশ।”
কেন এমন হল? সরকারি কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, গোড়াতেই গলদ রয়েছে। সরকার কী করতে চায়, সেটা তো আগে প্রস্তাব আকারে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার যখন কোনও নতুন আইন করতে চায়, তখন প্রথমে তা প্রস্তাব আকারে পেশ করে মতামত চায়। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনও প্রস্তাব দেয়নি। এই কারণে অনেকেই সারদা প্রসঙ্গ টানলেও সরকারের প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে কোনও মত জানাননি।
অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে না হলেও তাঁদের অনেকেই প্রকাশ্যে মত জানিয়েছেন। অর্থনীতির অধ্যাপক সুগত মারজিৎ বলেন, “সরকার এই ধরনের কাজ করবে কেন? সরকারের বরং কাজ হওয়া উচিত স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে আমানতকারী এবং ব্যাঙ্কের সেতু হিসেবে কাজ করা। যেখানে এখনও ব্যাঙ্ক পৌঁছয়নি, সেই সব জায়গা থেকে আমানত সংগ্রহ করে সরকার তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে রাখার ব্যবস্থা করুক।” তিনি জানান, দেশের কোথাও সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প বড় ধরনের সাফল্য পায়নি। তা ছাড়া, সারা দেশে যে ভাবে অর্থ লগ্নি সংস্থার জাল ছড়িয়েছে, তাতে এর ঝুঁকি এড়ানো বড়ই কঠিন কাজ।
উল্টো মত অর্থনীতির আর এক অধ্যাপক অভিরূপ সরকারের। তিনি বলেন, “এমন একটি প্রকল্প হওয়া উচিত এবং তা সম্ভব।” কী ভাবে সম্ভব? অভিরূপবাবুর ব্যাখ্যা, “রাজ্যকে প্রতি মাসে বাজার থেকে টাকা ধার করতে হয়। সেই কারণেই রাজ্যের ক্রেডিট রেটিং ভাল নয়। অর্থাৎ, বেশি সুদ দিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলতে হয়। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পও ঠিক মতো চলছে না। সরকার যদি এমন প্রকল্প করে বাজার থেকে টাকা তুলতে পারে, তা হলে সরকারের ঋণভার কিছু কমবে। আমানতকারীদেরও কিছু বাড়তি সুদ দেওয়া যাবে। তাই আমানত সংগ্রহকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র আদায় করতে হবে সরকারকে।”
কিন্তু সরকার তো ওয়েবসাইটে মতামত আহ্বান করেছিল। তাতে তো কার্যত সাড়া মেলেনি। এখন তা হলে অর্থ দফতর কী করবে? ওয়েবসাইটে মতামত পাঠানোর সময়সীমা বাড়বে?
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। তাঁর দফতরকেও এই নিয়ে কোনও নির্দেশ দেননি বলেই খবর। এই অবস্থায় ফের মতামত চাওয়া হবে, নাকি সারদার পাল্টা সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পটিই ঠান্ডা ঘরে পাঠানো হবে, নিশ্চিত নন সরকারি কর্তারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.