যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছিল ইজরায়েলের। কিন্তু এখন ভারত তথা গোটা দুনিয়ার কাছে ইজরায়েলের প্রধান বার্তা “আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তিপ্রিয়। সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে ভারতের সঙ্গে নয়া সাংস্কৃতিক কূটনীতি গড়ে তুলতে চাই।”
এ উদ্দেশ্যেই আগামিকাল কলকাতায় এক বিশেষ অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করতে চলেছে ইজরায়েলের নৃত্যগোষ্ঠী ‘কিন্ডলিং’। কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ কেন্দ্রের সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন ইজরায়েলের কোরিওগ্রাফার শাকেড দাগান। উপস্থিত থাকবেন ভারতের ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত অ্যালোন উশপিজও।
কলকাতা যাওয়ার আগে শাকেড বললেন, “আমাদের নৃত্যানুষ্ঠানের থিম ভারতীয় নারী। বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করতে গত দু’মাস হিমাচলের গ্রামে ছিল আমাদের দল। ওখানে মেয়েদের দৈনন্দিন জীবন কেমন, স্ত্রী স্বাধীনতা কতটা রয়েছে, নারীরা চাষের জমিতে কী ভাবে কাজ করেন, পরিবার ব্যবস্থায় তাঁদের ভূমিকা কতটা গুরত্বপূর্ণ, এই সবই নাচের উপাদন। সে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সুখদুঃখ মিলিয়ে একটি কোলাজ তৈরি করা হয়েছে।” শাকেড আরও বলেন, “দলে তিনি ছাড়াও আরও ছয় জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে, কেউ নাচের আঙ্গিক নিয়ে গবেষণা করছেন। ইজরায়েলি-মার্কিন-ডাচ-পোলিশ নৃত্য ঘরানার সঙ্গে মেশানো হয়েছে কত্থক। ইজরায়েলের ওই দলটিকে কত্থক শিখিয়েছেন সঙ্গীতা চক্রবর্তী।” |
মঞ্চে কিন্ডলিং। —নিজস্ব চিত্র |
এই মুহূর্তে দেশ জুড়েই নারী-নির্যাতন নিয়ে বিতর্ক চলছে। দিল্লি থেকে কলকাতা, শহর থেকে গ্রাম, ধর্ষণের শিকার মেয়েরা। এ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কিন্ডলিং ইজরায়েলের দূতাবাস ও আইসিসিআরের সঙ্গে যৌথ ভাবে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করছে। ইজরায়েলের নাচের ধারাটি গাগা নৃত্য বলে পরিচিত। অনুষ্ঠানে সেই গাগা নৃত্যের প্রভাব থাকবে বলে জানিয়েছেন শাকেড। দলটির কলকাতা থেকে মণিপুরে যাওয়ার কথা। শাকেড বলেন, “‘মণিপুরি নৃত্যে বৈষ্ণব প্রভাব নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্ডলিং-এর অর্থ আগুন জ্বালানো। আমাদের নাচের মাধ্যমেই ইজরায়েলের সংস্কৃতির শিখা ছড়িয়ে পড়বে গোটা ভারতে।” ভবিষ্যতে রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্য অবলম্বনে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে ওই গোষ্ঠীর। ইজরায়েলের কলকাতা কনসাল হলেন শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া। অনুষ্ঠানের আয়োজক তিনিই।
অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত উশপিজ বলেন, “১৯৯২ সালের ২৯ জানুয়ারি দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কুড়ি বছরে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। গোটা দেশের মধ্যে কলকাতাকে সব থেকে সংস্কৃতিমনস্ক শহর বলে আমরা মনে করি। তাই কলকাতাকেই অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হিসাবে বেছে নিয়েছি।”
আগেও উশপিজ কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা করেছিলেন। সে সময়ে মমতা নিজের আঁকা একটি ছবিও উপহার দেন তাঁকে। ওই ছবি এখনও দূতাবাসের দেওয়ালে টাঙানো আছে। কিছু দিন আগে একটি ইজরায়েলি সঙ্গীত গোষ্ঠী কলকাতায় গিয়ে অনুষ্ঠানও করে এসেছে। উশপিজ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন। আশা করি আগামিকালের অনুষ্ঠানে দু’পক্ষের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।”
অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ইহুদিদের সঙ্গেও দেখা করার কথা রাষ্ট্রদূতের। শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথাও আছে। কেননা কৃষি থেকে নিরাপত্তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইজরায়েল পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তাই কলকাতা সফরে রথ দেখার পাশাপাশি কলাও বেচতে চাইছেন ইজরায়েলি কর্তারা। |