ব্লক অফিসের পিছনের ফাঁকা জায়গা, স্কুলের উল্টো দিকের মাঠ, এপাশ ওপাশ ছড়ানো আমবাগান, সব জায়গা থেকে ভেসে আসছে সদ্য রান্না করা মাংসের ঝোলের গন্ধ।
আমতলা বাজারের গা ঘেঁসেই মুর্শিদাবাদের নওদা ব্লক অফিসের আশেপাশে দিন কয়েক থেকে রীতিমতো ম্যারাপ বেঁধে চলছে রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া। পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসছেন বহু প্রার্থী। ১০টা গ্রাম পঞ্চায়েত ও ২৮টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের জন্য মনোনয়ন জমা পড়ছে এই ব্লক অফিসেই। প্রার্থীদের সঙ্গী-সাথীর সংখ্যাও অনেক। সব মিলিয়ে রীতিমতো মেলার মতো পরিবেশ। যানজটও হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল, অত লোকের রোজ খাবার মিলবে কোথায়? তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতো করে তাঁবু ফেলে নিজেরাই রান্নাবান্না করে কর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
আরএসপি-র জেলা পরিষদ সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, অনেক দূর দূর গ্রাম থেকে আসছেন প্রার্থী ও তাঁর সঙ্গীরা। মনোনয়ন জমা দিয়ে ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। তাই দুপুরের খাওয়াদাওয়াটা সারতে হচ্ছে ব্লক অফিসের কাছেই। তিনি বলেন, “ওই ব্লক অফিসের কাছে আমরা দশটা শিবির খুলেছি। সেখানে দলীয় কর্মীরাই রান্না করছেন। রোজ এক একটি শিবিরে সাতশো থেকে আটশো জন খাচ্ছেন।” |
আমতলা বাজারটি বেশ বড়। ৯টি ভাতের হোটেল, ৮টি বড় মিষ্টির দোকান। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে যত লোক রোজ আসছেন, তাতে ওই ক’টা দোকানে কুলোচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা নীলাঞ্জনা ভৌমিকের কথায়, “আমাদের এখানে ক্ষীরমালাই, কালাকাঁদ, জলযোগ এই তিনটি মিষ্টি প্রসিদ্ধ। এ ক’দিন সে সব তো মিলছেই না, রসগোল্লা, ছানাবড়া, সন্দেশও নেই।” ওই বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী বাবলু কুণ্ডু, করুণাময় সাহা, বাপ্পাদিত্য সাহা, প্রহ্লাদ ঘোষ, গণপতি মণ্ডলেরাও জানাচ্ছেন, ছানার জোগান বাড়িয়ে, বাইরে থেকে কারিগর আনিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। দুপুরের আগেই দোকান ফাঁকা। হোটেল মালিক মুসারফ হোসেন, মইনুল হক, অসীম মণ্ডলদেরও বক্তব্য, তাঁদের জায়গা কম। রোজ এই ভিড় সামাল দেওয়া অসম্ভব।
মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সে কথা বুঝে যান রাজনৈতিক দলের নেতারাও। তাঁরা তখন ঠিক করে নেন, কর্মীদের জন্য নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই মতোই শুরু হয়ে যায় রান্নাবান্না। নওদা ব্লক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক উত্তম বিশ্বাসের কথায়, “আমাদের দলের তরফে ৮টি তাঁবু করে প্রায় ৮০০ লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাত, ডাল, তরকারির সঙ্গে কোনওদিন থাকছে মুর্গির, কোনওদিন পাঁঠার মাংস।” মাথা পিছু খাওয়ার আনুমানিক খরচ হচ্ছে ৮০ টাকা করে। উত্তমবাবু বলেন, “খরচটা তোলা হচ্ছে চাঁদার টাকা থেকে।” তবে সিপিএম তেমন কোনও ব্যবস্থা করেনি। দলের নওদা জোনাল কমিটির সম্পাদক শমীক মণ্ডলের বক্তব্য, “আমাদের কর্মীরা হোটেলেই খাচ্ছেন।”
এলাকার মানুষ এই ঘটনায় প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে সোমবারই মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন শেষ হওয়ায় তাঁরা এখন স্বস্তিতে। বেগুনবাড়ি হাইস্কুলের শিক্ষক স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল মণ্ডলের কথায়, “এই ক’দিন সারাক্ষণ বিশাল ভিড় ছিল এলাকায়। সেই সঙ্গে সারা দুপুর ধরে খাবারের গন্ধ। মনে হয় মঙ্গলবার থেকে কিছুটা রেহাই পাব।” |