|
|
|
|
মনোনয়ন তুলতে চাপ, ফের কাঠগড়ায় তৃণমূল
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মনোনয়ন-পর্বের প্রথম থেকেই মারধর, হুমকির অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। এখন তাদের অভিযোগ, মনোনয়ন তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে শাসকদল তৃণমূল। এ ক্ষেত্রে সিপিএম, কংগ্রেস সকলেই এক সুর।
পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ১ ব্লকের ব্রজলালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তারট গ্রামের হিমাংশু পণ্ডা ও তাঁর ভাই স্বপন পণ্ডা পঞ্চায়েত সমিতি এবং হিমাংশুবাবুর স্ত্রী অসীমা পণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। শুক্রবার রাতে তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের সশস্ত্র বাইকবাহিনী। বাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে মহিলাদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার টেপর পাড়ায় তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নৈপুর এলাকার মনিনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন প্রফুল্ল গিরি ও ঝর্না গিরি। অভিযোগ শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী। মনোনয়ন প্রত্যাহার করারও হুমকি দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওই দিনই তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। অভিযোগ, ওই এলাকারই বেলদা গ্রামের সিপিআইয়ের এক পঞ্চায়েত প্রার্থী আম্ভি গ্রামের সিপিএম প্রার্থী যজ্ঞেশ্বর শ্যামল ও অমর্ষি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ধকড়াবাঁকা বুথের সিপিএম প্রার্থী সুব্রত মণ্ডলকে শনিবার সকালে অপহরণের পর মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও সিপিএমের অভিযোগ, পটাশপুর ২ ব্লকের সাউৎখণ্ড পঞ্চায়েত এলাকার মল্লিকপুর, আড়গোয়াল এলাকার ইছাবাড়ি, এড়াবাড়, পানিনালা এবং মথুরা পঞ্চায়েতের লালুয়া বুথের সিপিএম কর্মীদের মারধর ও ঘর ভাঙচুর করে শুক্রবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে তৃণমূলের সশস্ত্র বাইকবাহিনী।
এ দিকে, ভগবানপুর ১ ব্লকে ফের নান্টু প্রধানের সশস্ত্র বাহিনীকে দিয়ে সিপিএমের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের ভগবানপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক সত্যরঞ্জন দাসের অভিযোগ, শনিবার রাতে ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খাগা ও সুবুদপুর গ্রামের সিপিএম সমর্থক ভরত প্রধান, জগন্নাথ মাইতির বাড়ি ভাঙচুর করে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়।
মহম্মদপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকার উত্তর তিড়াইপুর বুথের সিপিএম প্রার্থী কল্পনা ওঝার বাড়িও ভাঙচুর করা হয়। তিরাইপুর বুথের প্রার্থী গোয়ালপুর লোকাল কমিটির সদস্য সুদর্শন সামন্ত ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও তাঁর স্ত্রী বাসন্তী সামন্তের বাড়িতে ভাঙচুর ও বোমা ফাটানো হয়। বাড়িতে লুঠপাটও চালায় তারা। মনোহরপুর বুথের প্রার্থী অসীমা দাসের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। চলে ব্যাপক বোমাবাজি।
কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক কণিষ্ক পণ্ডার অভিযোগ, “শনিবার দুপুরে কাঁথি ৩ ব্লকের ভাজাচাউলি অঞ্চলের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান মনোরঞ্জন মণ্ডলের বাড়িতে একদল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী মোটর বাইকে এসে চড়াও হয়। মনোরঞ্জনবাবুকে মারধর করার পরে তারা হুমকি দিয়ে যায় চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মনোনয়ন পত্র তুলে না নিলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।” কুমীরদা অঞ্চলের ১৩ নম্বর ও ১৪ নম্বর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী অলক নন্দ, অমৃত দাসের বাড়িতেও চড়াও হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রশান্ত পাত্রের অভিযোগ, “দেশপ্রাণ ব্লকের আঁউরাই, উমাপতিবাড়, ছনবেড়িয়া, নামালদিহা গ্রামে সিপিএম প্রার্থীদের বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী মারধর করছে। অনেকের কাছ থেকে জোর করে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের কাগজে সই পর্যন্ত করিয়ে নিচ্ছে।” অন্য দিকে, ভাজাচাউলি অঞ্চলের পরিহরা গ্রাম পঞ্চায়েতের এসইউসি প্রার্থী পূর্ণিমা দাস ও পঞ্চায়েত সমিতি আসনের প্রার্থী করুণা দাসের বাড়িতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হানা দিয়ে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ। একই অবস্থা ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-১, ২ ব্লক, দাসপুরেও। রবিবার বিকেল থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ঘাটালের মোহনপুর পঞ্চায়েতের হরেকৃষ্ণপুর বুথের সিপিএম প্রার্থী চঞ্চলা মালিকের। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। ঘাটালের সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরা বলেন, “প্রার্থী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হচ্ছে।”
তৃণমূল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “যদি সন্ত্রাসই হত, তাহলে তো কেউই প্রার্থী দিতে পারত না। প্রার্থী হওয়ার পর দেখছেন, পাশে মানুষ নেই। হারতে হবে। তাই নিজেরাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাইছেন আর আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছেন।” |
|
|
|
|
|