সম্পাদকীয় ১...
ভুল অস্ত্র
খাদ্য নিরাপত্তা আইন লইয়া তর্ক চলিতেছে। কী ভাবে এই আইন বলবৎ হইবে, তর্ক আপাতত তাহা লইয়াই। দুইটি গভীরতর প্রশ্ন আড়ালে চলিয়া গিয়াছে। এই আইন কি জরুরি? ইহা কি যথেষ্ট? স্পষ্টতই, এই আইনটি ২০১৪ সালের নির্বাচনী বৈতরণী পার হইবার জন্য কংগ্রেসের প্রধান ভরসা। অন্তত সনিয়া গাঁধীর দল তেমনটাই ভাবিতেছে। ক্ষমতাসীন দল পরবর্তী নির্বাচনের জন্য যত দূর সম্ভব ঘর গুছাইবার চেষ্টা করিবে, তাহা নেহাত অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু যে কর্মকাণ্ডের বাৎসরিক খরচ এক লক্ষ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা, তাহার প্রধান উদ্দেশ্য যদি নির্বাচনী ফসল হয়, তবে সেই প্রকল্প লইয়া প্রশ্ন তোলাই কর্তব্য। ইউপিএ সরকার বলিবে, দরিদ্র মানুষের মুখে খাদ্যের জোগান দেওয়াই তাহাদের প্রধানতম লক্ষ্য। তাহার জন্য যে খরচ পড়িবে, সরকার তাহার ব্যবস্থা করিবে। খাদ্য নিরাপত্তা বিল লইয়া এই তর্কটিই চলিতেছে। তর্কটি ভ্রান্ত। মূল প্রশ্ন খরচের নহে। খাদ্য নিরাপত্তা বিলের মাহাত্ম্য বিষয়ে ইউপিএ যাহা বলিতেছে, প্রশ্ন সেখানে। এই আইনটি যাহা করিবার নিশ্চয়তা দাবি করিতেছে, তাহা করিতে সমর্থ নহে। খাদ্য নিরাপত্তার প্রকৃত অর্থ পুষ্টির নিরাপত্তা। যথেষ্ট পুষ্টির ব্যবস্থা না হইলে খাদ্যের নিরাপত্তা অর্থহীন। সুতরাং প্রশ্ন হইল, এই আইন পুষ্টির নিরাপত্তা দিতে পারিবে কি না।
উত্তর: না। দরিদ্র মানুষের অপুষ্টি রোধ করিতে জরুরি নহে, যথেষ্টও নহে। বিলটির মূল উদ্দেশ্য, পাওয়াইয়া দেওয়া। তাহা রাজনৈতিক ভাবে উৎপাদনশীল হইতে পারে, অর্থনৈতিক ভাবে নহে। যাহারা কোনও মতেই নিজের খাদ্যের ব্যবস্থা করিতে পারে না, যেমন স্বাস্থ্যভঙ্গ বৃদ্ধ অথবা অনাথ শিশু, রাষ্ট্র তাহাদের খাদ্যের সংস্থান করিবে, এই দাবি অন্যায্য নহে। কিন্তু যাহারা প্রকৃত প্রস্তাবে উপার্জনক্ষম, তাহাদের বিনাশ্রমে খাদ্য না জোগাইয়া উপার্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া দিলে আখেরে সকলের লাভ। তাহাই রাষ্ট্রের কর্তব্য। সরকার আর্থিক বৃদ্ধির হার উঁচু করিবার কাজে মনোনিবেশ করুক। প্রত্যেকে যাহাতে নিজের যোগ্যতা অনুসারে কাজের সুযোগ পান, তাহা নিশ্চিত করুক। ইহাই যথার্থ সর্বজনীন উন্নয়নের প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়া সচল থাকিলেই খাদ্য নিরাপত্তার জরুরি সোপান রচিত হইবে। তাহার জন্য গরিবের মুখে সরকারের খাদ্য তুলিয়া দিবার প্রয়োজন হইবে না।
এই আইন যথেষ্টও নহে। প্রধানমন্ত্রী ভারতের অপুষ্টির চিত্রকে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলিয়াছেন। স্থানীয় চরিত্র বিস্মৃত হইয়া আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে পুষ্টি মাপিবার পদ্ধতিটি কতখানি যুক্তিগ্রাহ্য, সেই প্রশ্ন ব্যাপকতর গবেষণার দাবি করে। কিন্তু তর্কের খাতিরে আপাতত ধরিয়া লওয়া যাউক, প্রধানমন্ত্রী-বর্ণিত পরিস্থিতিই বাস্তব। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সেই অপুষ্টির প্রতিকার হইবে না। সরকারের নজর খাদ্যশস্যের দিকে চাল, গম, জোয়ার-বাজরা ইত্যাদি। অর্থাৎ, প্রচলিত ধারায় মানুষ যাহাকে খাদ্য বলিয়া ভাবিতে অভ্যস্ত, সেই দিকে। নির্বাচন পাখির চোখ হইলে এই দৃষ্টিভঙ্গিই স্বাভাবিক। শুধু চাল-গম অপুষ্টি দূর করিতে পারিবে না। তাহার জন্য বিবিধ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস অর্থাৎ পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বা খনিজ-খাদ্যগুণ প্রয়োজনীয়, প্রোটিন প্রয়োজন। সরকারি কর্মসূচি সেই ধার ধারে নাই। নির্বাচনী জনসভায় তো আর ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস’ বলা চলে না তাহার জন্য চাল-গমের আবেগ প্রয়োজন। শুধু পুষ্টিকর খাদ্য নহে, অপুষ্টি দূর করিতে হইলে জনস্বাস্থ্যনীতিকে গুরুত্ব দিতেই হইবে। নিকাশি ব্যবস্থায় জোর দেওয়া প্রয়োজন। যে দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনও ৭০ শতাংশ মানুষের শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ নাই, সে দেশে অপুষ্টি দূর করা অসম্ভব। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়াছে, শিশুদের নিয়মিত কৃমির ঔষধ সেবন করাইলে তাহাদের স্বাস্থ্যের প্রভূত উন্নতি হয়। কাজটি বিশেষ ব্যয়বহুল নহে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এত দিনেও সেই কর্মসূচি গ্রহণ করিতে পারে নাই। অপুষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভুল অস্ত্র বাছিয়া তাহার জন্য বৎসরে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করিলে তাহাকে অপব্যয় না বলিয়া উপায় নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.