কংগ্রেস এবং বাম কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে বোর্ড মিটিংয়ে মেয়র অপসারণের প্রস্তাব এনে তা পাশ করালেন তৃণমূলের কাউন্সিলররা। শনিবার শিলিগুড়ি পুরসভায় ওই ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূল কাউন্সিলররা আইন বিরুদ্ধ কাজ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মেয়র এবং তাঁর দলের কাউন্সিলররা। আলাভাবে হলেও তৃণমূলের কাউন্সিলরদের ওই প্রস্তাব পাশ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী বামেরাও। কংগ্রেস এবং বাম কাউন্সিলর উভয়েরই অভিযোগ, মেয়র অপসারণ করতে হলে নিয়ম মেনে এক তৃতীয়াংশ কাউন্সিলরের পক্ষে অনাস্থা আনতে হবে। তার পর বিশেষ সভা ডেকে ভোটাভুটি করেই তা নির্ধারণ করতে হবে। এ ভাবে বোর্ড মিটিংয়ে মেয়রের অপসারণ প্রস্তাব আনা যায় না।
এ দিন তাঁর অপসারণ প্রস্তাব পাশ করানো নিয়ে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “তৃণমূলের ১১ জন কাউন্সিলর এ ভাবে আমাকে অপসারণের প্রস্তাব আনতে পারেন না। এটা অসাংবিধানিক। প্রয়োজনে তাঁরা আইনের পথে যাবেন বলে জানান। বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “মেয়রের অপসারণের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম বিধি রয়েছে পুর আইনে। এ ভাবে তৃণমূলের কাউন্সিলররা মেয়রকে সরাতে পারেন না।” |
বাস্তবে, ৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরসভায় বামেদের ১৭ জন কাউন্সিলর। দলত্যাগী চেয়ারম্যান নান্টু পালকে নিয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর রয়েছেন ১৫ জন। কংগ্রেসের ১৪। একটি ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর পদত্যাগ করার পর থেকে সেটি ফাঁকাই রয়েছে। সে কারণে অন্তত ১৬ জন কাউন্সিলর না থাকায় পুর বোর্ডে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পরও মেয়রের বিরুদ্ধে সরাসরি অনাস্থা আনতে পারছেন না তৃণমূল।
চেয়ারম্যান নান্টু পালের দলত্যাগ ঘিরে পুরসভায় জোট শরিকদের কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে তিক্ততা বাড়ে। নান্টুবাবুকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করার প্রক্রিয়া নিয়ে কংগ্রেসের কাউন্সিলর এবং বাম কাউন্সিলররা আলাদা ভাবে একটি মামলা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পুরসভার বাজেট অধিবেশনের আগে লিখিত ভাবে মেয়রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় তৃণমূল। বোর্ড না ভাঙলেও ১৪ জন কাউন্সিলর নিয়ে কংগ্রেস পুরসভায় সংখ্যা লঘু হয়ে পড়ে। বাজেট পাস নিয়ে বিতর্কের জেরে রাজ্য পুর দফতর থেকে পুর কমিশনারকে ১৬ টি জরুরি কাজ চালানোর নির্দেশ দেয়। নান্টুবাবু চেয়ারম্যান পদে থাকায় বামেরা বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছেন না। কংগ্রেসের কাউন্সিলররাও বোর্ড মিটিংয়ে আসছেন না। তাতে শহরের উন্নয়ন কাজ ব্যহত হচ্ছে অভিযোগ তুলে মেয়র এবং পুর বোর্ডের বিরুদ্ধে সরব হয় তৃণমূল।
তৃণমূল কাউন্সিলরদের অন্যতম তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “আমরা কোনও অনাস্থা প্রস্তাব আনিনি। বোর্ড মিটিংয়ের নিয়ম মেনে প্রস্তাব এনেছি। প্রস্তাবের বিষয় ছিল পুরসভায় কংগ্রেসের সংখ্যা লঘু বোর্ড কোনও উন্নয়ন কাজ করতে পারছেন না। তাই মেয়রের বিরুদ্ধে নিন্দা এবং তাঁর অপসারণ।” তাঁর কথায়, “নিয়ম মেনে বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। চেয়ারম্যান এবং পুর কমিশনারকে তা রাজ্য পুর দফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত।” পুর কমিশনার নির্বাচের কাজে বাইরে থাকায় দায়িত্বে রয়েছেন পুরসভার সচিব কাজলকান্তি সাহা। তিনি বলেন, “আইন মেনেই সব করা হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ মে পুরসভার বোর্ড মিটিং ডাকা হয়েছিল। কোরামের অভাবে ওই বৈঠক মুলতুবি হয়। এ দিন মুলতুবি সভায় কংগ্রেস এবং বাম কাউন্সিলররা ছিলেন না। মেয়রের অপসারণ নিয়ে প্রস্তাব আনেন তৃণমূল কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দী। এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানান উপস্থিত তৃণমূলের ১১ জন কাউন্সিলর। কিন্তু প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়রের জবাবদিহির প্রয়োজন রয়েছে বলে চেয়ারম্যান নান্টুবাবু মত দিতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। এর পরেই নান্টুবাবু জানিয়ে দেন, “প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তা পুর দফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হবে সেই মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” |