|
|
|
|
দূর হটো নেতা-মন্ত্রী, বারাসত শাসন চায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দ্বিতীয় বর্ষের এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে থাকা বারাসতের কামদুনি জনপদ ঢুকতেই দিল না মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও নেতাদের। দলমত নির্বিশেষে, রাজনৈতিক রঙের ঊর্ধ্বে উঠে স্থানীয় বাসিন্দারা সমস্বরে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা নেতা-মন্ত্রী-রাজনীতি চান না। চান নিরাপত্তা ও দোষীদের শাস্তি। এমনকী, শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এলাকায় গিয়ে ওই ছাত্রীর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা বলতেই যেন আগুনে ঘি পড়ল। ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ গলা চড়িয়ে মন্ত্রীকে পাল্টা জানিয়ে দেন, দ্বিগুণ টাকা তুলে তাঁরা মন্ত্রীকে দেবেন। তিনি যেন অবিলম্বে ফিরে যান।
ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ।
কেবল জ্যোতিপ্রিয়বাবুই নন, শনিবার দুপুরে হাজার দুয়েক মানুষের প্রবল বাধার জেরে ধর্ষিতা ও নিহত ওই কলেজছাত্রীর পাড়ায় ঢুকতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম এবং শাসক দলের ওই জেলার কয়েক জন বিধায়ক ও নেতা। ক্ষিপ্ত জনতা সাংসদের এসইউভি-ও ভাঙচুর করে। |
|
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক টাকার কথা বলতেই গ্রামবাসীদের তোপ,
দ্বিগুণ টাকা আমরাই তুলে দেব, ফিরে যান। ছবি: সুদীপ ঘোষ |
পুলিশের বিশাল বাহিনী সঙ্গে থাকলেও এ দিন জনতার বিক্ষোভে নেতা-মন্ত্রীদের নিতান্তই অসহায় লেগেছে। শুক্রবার রাতে ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পর শুরু হওয়া পথ অবরোধ শনিবার সন্ধ্যাতেও পুলিশ তুলতে পারেনি। উল্টে অবরোধকারীদের একাংশ হুমকি দেয়, মৃতদেহ নিয়ে কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাবেন। দেহ ডিরোজিও কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরে ১২৫ জনের একটি দল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে ও তাঁদের নিমতলা শ্মশান ঘাটে পাঠানো হয়।
এ দিন রাতেই পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করলেও মানুষের ক্ষোভ তাতে প্রশমিত হয়নি। অবিলম্বে দোষীদের ফাঁসির দাবি তুলে দেহ সৎকার করতে অস্বীকার করেন মৃতার আত্মীয়স্বজন ও পড়শিরা। নিমতলা ঘাটে পঞ্চাশ জনেরও বেশি পুলিশ-কর্তা ও পুলিশকর্মী তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চালান। অবশেষে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শুরু হয় অন্ত্যেষ্টি। |
|
মৃতদেহ যেখানে পড়েছিল, সেখানেই মেলে ধর্ষিতার পোশাকের অংশ। ছবি: প্রবাল ধর |
ক্ষোভের তীব্রতা বুঝতে পেরে শনিবার রাতেই বারাসত-কাণ্ডের তদন্তভার সিআইডি-কে দেওয়া হয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটলেও মহিলাদের উপর অত্যাচারের ক্ষেত্রে বারাসতের বদনাম যে কিছুতেই ঘুচছে না, শুক্রবার কামদুনির ঘটনা তা আরও এক বার দেখিয়ে দিল। যেখানে ওই ঘটনা ঘটেছে, কলকাতা থেকে সেই জায়গা ২০ কিলোমিটারের মধ্যে।
ঠিক কী ঘটেছিল ওই দিন? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, ডিরোজিও কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে একটি পাঁচিলঘেরা জায়গায় একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে অন্তত তিন-চার জন ধর্ষণ করে। তরুণীটি তাদের চিনে ফেলতে পারে এই ভয়ে প্রথমে গলা টিপে, পরে দু’পা দু’দিক থেকে চিরে ফেলে খুন করা হয়। দুষ্কৃতীরা অপরাধের পর কেরোসিন দিয়ে রক্তের দাগ মোছার চেষ্টা করে।
পুলিশের বক্তব্য, ওই ছাত্রীর উপর এতটাই পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়েছিল যে পরে তাঁর অন্তর্বাস ছিন্নভিন্ন হয়ে এ দিক ও দিক ছড়িয়ে পড়ে। বই, কাগজপত্র, ক্লিপ বোর্ড-সহ তাঁর ব্যাগটি উদ্ধার করা হয় পাশের ভেড়ি থেকে। |
|
ভেড়ির কাছে চোলাইয়ের ঠেক ভাঙছেন উত্তেজিত জনতা। ছবি: সুদীপ ঘোষ |
কামদুনির বাসিন্দা ওই ছাত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলছিল। সিট পড়েছিল লেক টাউনের ইস্ট ক্যালকাটা গার্লস কলেজে। এমনিতে বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে কামদুনি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ওই ছাত্রী সাইকেলে যেতেন। স্ট্যান্ডে সাইকেল রেখে সেখান থেকে বাস ধরতেন। কিন্তু শুক্রবার এক পরিচিতকে পেয়ে যাওয়ায় তাঁর মোটরবাইকে করে তিনি সকালে বাড়ি থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলে যান। পরীক্ষা দিয়ে দুপুরে বাসস্ট্যান্ডে নেমে ওই ছাত্রী টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, কামদুনি-বিডিও অফিস-মধ্যমগ্রাম সড়ক এমনিতেই সুনসান। বৃষ্টির জন্য তা আরও ফাঁকা ছিল। তারই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা। বাসস্ট্যান্ড থেকে সাড়ে তিনশো মিটার মতো এগোতেই একটি কারখানার জন্য নেওয়া আট ফুট উঁচু পাঁচিল ঘেরা আট বিঘা জমি। ভিতরে তিনটি পাকা ঘর, একটি শৌচাগার। একটি পাকা ঘরে একটি তক্তপোশ। ওই ঘরেই থাকত জমির কেয়ারটেকার আনসার আলি মোল্লা। কারখানার জন্য নেওয়া ওই ঘেরাটোপে বাইরে থেকে মহিলাদের এনে দেহব্যবসাও চলত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
ধৃত তিন জনের মধ্যে এক জন ওই আনসার আলি মোল্লা। সে স্থানীয় কীর্তিপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সাইদা বিবির আত্মীয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। সাইদা বিবি এই ব্যাপারে কোনও কথা বলেননি। তবে তাঁর স্বামী, তৃণমূলের কীর্তিপুর-২ নম্বর অঞ্চলের সভাপতি আসরাফ আলি মোল্লা বলেন, “আনসার মোটেই আমাদের আত্মীয় নয়, তবে সে আমাদের গ্রামের ছেলে।” কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে এত কাণ্ডের পরেও পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর স্বামী, কাউকেই এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়নি। এই ব্যাপারে আসরাফের বক্তব্য, “অনেক নেতা-মন্ত্রী গিয়েছিলেন। আমাদের কিছু কাজও ছিল।” |
|
বারাসতের ঘটনার পর শনিবার রাতে কলকাতা শহর পরিদর্শনে পুলিশ কমিশনার। —নিজস্ব চিত্র |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, আনসারের আত্মীয় বলে বিক্ষোভের মুখে পড়ার ভয়েই ওই দম্পতি শুরু থেকে দূরে থেকেছেন। আনসার ছাড়াও ওই ঘটনায় মহম্মদ নুর ও আমিন নামে লাগোয়া মাটিয়াগাছা গ্রামের দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতীতেও পুলিশ ওই দু’জনকে তোলাবাজি, মারধর, লুঠপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। আরও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আনসারের ঘরের অবস্থান এমনই যে, সেখানে বসলে বাইরের রাস্তা দিয়ে কে যাতায়াত করছে, তা পরিষ্কার দেখা যায়। জনমানবশূন্য এলাকায় ওই ছাত্রীকে জবরদস্তি ওই জমির চৌহদ্দির ভিতর ঢুকিয়ে নিতে দুষ্কৃতীদের বেগ পেতে হয়নি। পুলিশ জেনেছে, ভিতরের ঘরে তক্তপোশের উপর ওই ছাত্রীর উপর যখন নারকীয় অত্যাচার চলছে, সেই সময়েই তাঁর ছোট ভাই দিদির খোঁজে ওই রাস্তা ধরে জমির সামনে দিয়ে ছোটাছুটি করছেন। কিন্তু তাঁর পক্ষে কিছু টের পাওয়া সম্ভব ছিল না। তদন্তকারীরা মনে করছেন, আনসারকে চিনে ফেলার কারণেই ওই ছাত্রীকে খুন করা হয়। তার পর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে পাঁচিলের বাইরে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু সেটা না-পেরে শেষমেশ পাঁচিলের নীচে গর্ত দিয়ে দেহ বার করে পাশের জমিতে ফেলে দেওয়া হয়।
সন্ধের পরেও মেয়ে ফিরছে না দেখে তরুণীর বাবা-জ্যাঠা-ভাই এবং আত্মীয়রা বাড়ি থেকে কামদুনি-মধ্যমগ্রাম সড়ক ধরে কামদুনি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এমনকী, খুঁজতে খুঁজতে ওই পাঁচিল ঘেরা জমিতে গেলে কেয়ারটেকার আনসার নিজে তালা খুলে তাঁদের ঢুকতে দিয়ে জানায়, সেখানে কিছুই নেই। বাড়ির লোকজনও সেই সময়ে কিছু পাননি। পরে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে জমির অন্য ধারে ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত, অধর্নগ্ন দেহ খুঁজে পান তাঁর ছোট ভাই। তখন রাত আটটা। |
|
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তখনই রাজারহাট থানার পুলিশকে ফোন করে খবর দেওয়া হয়, কিন্তু ও প্রান্ত থেকে দায়সারা ভাবে বলা হয়, ‘দেখছি’। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল যে তাঁদের এলাকার মধ্যে পড়ছে না, সেটা জেনেই দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে রাজারহাট থানার পুলিশ। গত ৫ জুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ হলে অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে সংবেদনশীল ও সচেতন হতে হবে। কিন্তু সেটা যে কিছুতেই হচ্ছে না, বারাসতের ঘটনা ফের তা দেখাল।
পুলিশে প্রথম ফোন যাওয়ার তিন ঘণ্টা পরে, রাত ১১টা নাগাদ বারাসত থানার অন্তর্গত আমিনপুর তদন্তকেন্দ্র থেকে পুলিশের একটি দল এলাকায় পৌঁছায়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের ছোঁড়া ইটবৃষ্টির মুখে পড়ে তখনকার মতো হটে যায় পুলিশ। এক ঘণ্টা পরে, রাত ১২টা নাগাদ বারাসত ও রাজারহাট থানার পুলিশ এবং র্যাফের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। রাস্তায় ততক্ষণে অবরোধ শুরু করে দিয়েছে ক্ষিপ্ত জনতা। গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ার রেখে ওই পথ অবরোধে সামিল হন এলাকার অনেক মহিলাও।
অবরোধকারীদের এক জনের কথায়, “সিপিএম-তৃণমূল বুঝি না। আমরা দোষীদের ফাঁসি চাই আর আমাদের নিরাপত্তা চাই।” রাতের ওই ক্ষোভ সকালে নেতা-মন্ত্রীদের এলাকায় ঢোকার চেষ্টা দেখে আরও বেড়ে যায়। সকাল ৯টা নাগাদ সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামকে নিয়ে ক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। কারণ, বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাংসদ পুলিশকে লাঠিচার্জ করে অবরোধ হটিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। ওই ক্ষোভের জেরেই তাঁর গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চলে। সাংসদ অবশ্য দাবি করেন, “আমি এ রকম কোনও কথা বলিনি। সিপিএম কৌশলে এ সব করে আমাদের বদনাম করছে।”
বেলা ২টো নাগাদ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গেলে তাঁর কাছেও সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বিক্ষুব্ধ মানুষ। জ্যোতিপ্রিয় বোঝানোর চেষ্টা করেন, সাংসদ যদি এ রকম বলে থাকেন, তবে তিনি ভুল করেছেন। মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি আর্থিক সাহায্যের কথা বলতে এসেছি। তা ছাড়া, ওই ছাত্রীর পরিবারের এক জনকে চাকরিও দেওয়া হবে।” ব্যস। আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়ে। ক্ষুব্ধ জনতা চিৎকার করে মন্ত্রীকে বলে দেয়, “আপনার অর্থসাহায্য আপনি নিয়ে যান। এর দ্বিগুণ টাকা আমরা তুলে আপনাকে দেব। আপনি এখান থেকে চলে যান। কত টাকা লাগবে বলুন? আপনি তো মেয়েটাকে ফেরত দিতে পারবেন না। আমরা নিরাপত্তা চাই। দোষীদের শাস্তি চাই। নেতা-মন্ত্রী-রাজনীতি চাই না।” ১৫ মিনিট চেষ্টা করার পরেও ঢুকতে না-পেরে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন জ্যোতিপ্রিয়।
ঘুরপথে অবশ্য সিপিএমের মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে রেখা গোস্বামী, রমলা চক্রবর্তীরা ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান। ডিরোজিও কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা প্রীতম ধর, এসএফআইয়ের পৌলোমী সেনগুপ্তরাও যান। তাঁরা জানান, কলেজে এ দিন কালো ব্যাজ পরে ধিক্কার দিবস পালন করা হয়েছে। মহিলা সমিতির নেত্রীরা ওই ছাত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে বারাসত থানা ঘেরাও করেন এবং তাঁদের হাতে আইসি-কে হেনস্থা হতে হয় বলেও অভিযোগ। বিজেপি এবং এসইউসি-ও থানায় এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
রাতে ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি নিহত ছাত্রীর মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন। পরে সূর্যবাবু বলেন, “নিহত ছাত্রীর পরিবার মনে করছেন, দোষীদের কাউকে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু সেটা যাতে না-করা হয়, তার জন্য আমরা যত দূর যাওয়ার প্রয়োজন, যাব।”
ওই ছাত্রীর প্রাণ ও সম্মানের বিনিময়ে কামদুনিতে একটি পুলিশ ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও স্বীকার করেন, এলাকায় নোংরা কাজকর্ম বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল, মহিলাদের অপমান করা হত। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? মন্ত্রী অবশ্য এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
বারাসতে গণধর্ষণের পরে ছাত্রীকে খুনের ঘটনা নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “বারাসতে যা ঘটেছে, তার নিন্দার ভাষা নেই। কী হচ্ছে রাজ্যে? যে মারা গিয়েছে, তার বাবা রাজমিস্ত্রি। প্রথম প্রজন্মের ছাত্রী ছিল। তাকে নৃশংস ভাবে খুন হতে হল। এর বিহিত হওয়া দরকার।” এই ঘটনার পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তাঁর মতামত কী? জবাবে বিমানবাবুর কটাক্ষ, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব সুন্দর। কলেজ থেকে ফেরার পথে ছাত্রীকে খুন হতে হয়। মিষ্টি মিষ্টি কথা না বলে দেখা উচিত যাতে, এমন ঘটনা আর না ঘটে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে থেকে কঠোর মন্তব্য পাব আশা করেছিলাম। পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা হয়েও প্রশাসনকে ব্যবহার করে এ রাজ্যকে নারী নির্যাতনে প্রথম করার চেষ্টা করছেন দেখে বিস্মিত হচ্ছি।”
এ দিন কামদুনি এলাকায় অনেক কচিকাঁচা সাদা কাগজে প্যাস্টেল রং দিয়ে পোস্টার তৈরি করে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘রাজনীতি চাই না, বিচার চাই,’ ‘দিদির দাহ চাই না’।
ছাত্রীর যে-ব্যাগ পুলিশ উদ্ধার করেছে, তার মধ্যে একটি খাতার উপর তাঁর নিজের হাতে লেখা ছিল, ‘ভগবান সহায়’। শুক্রবার অবশ্য ভগবান তাঁর সহায় হননি। |
পুরনো খবর: কলেজ-ফেরত ছাত্রীর দেহ উদ্ধার, আক্রান্ত পুলিশ |
|
|
|
|
|