রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
রাতের শিয়ালদা স্টেশন
কিছু লাগবে?’
‘কিছু বলতে?’
‘না, অনেক ক্ষণ ঘোরাঘুরি করছেন।’
‘ট্রেন মিস হয়ে গেছে। মারামারি দেখছিলাম।’
‘ও রোজের ব্যাপার। যা জ্বালায় না ওই তিনটে।’
ঢ্যাঙা লোকটার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। স্টেশন চত্বর থেকে নেমে দু’দিকে সস্তার খাবার দোকান আর ডাল-মশলার দোকান পেরিয়ে যে ঢালু জায়গাটা, সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা তিন জন। ঢ্যাঙা, আমি আর আমার বন্ধু দীপক। রাত তখন বারোটা পেরিয়ে গেছে। ঢ্যাঙা জানাল, ‘ভাল জিনিসও আছে।’
শেষ ট্রেন ফেল করার পর ট্যাক্সিতে যাব না ঠিক করে, বাড়িতে খবর দিয়ে, শিয়ালদা স্টেশনে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়ে গেছে। আমি আর দীপক স্টেশনের চৌহদ্দিকে বেড় দিয়ে হাঁটছিলাম। সাবওয়েতে বন্ধ শাটারের সামনে দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছি। উলটো দিকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের সামনের রেলিংয়ে ঠেসান দিয়ে তিন জন বৃহন্নলা। নারীসুলভ পোশাক, কৃত্রিম ভাবে উঁচিয়ে রাখা বুক সত্ত্বেও তাদের চিনতে অসুবিধে হচ্ছে না। দূরে জনা পাঁচেক পুরুষ। তাদের সঙ্গে একটু উচ্চগ্রামে কথা হচ্ছে। পাশ দিয়ে আমরা আরও একটু নীচের দিকে গেলাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে।
সারা গেল না, কারণ রেলিংয়ের গা-বরাবর শ্রীশ্রীশনিবাবার মন্দির, হরেকৃষ্ণ পানীয় জল, পাথরের খোপে লোকনাথবাবা, বজরংবলী, সাঁইবাবার পাথুরে মূর্তি। সেখান থেকেই টের পাচ্ছি চিৎকারটা বাড়ছে। ফিরতেই দেখি, এক জন বৃহন্নলার হাত টানাটানি, দু-তিন জনের ঘুষোঘুষি, শ-কার ব-কার ছাড়িয়ে গালাগালি, বিভিন্ন কায়দায় প্রতিপক্ষের পরিবারের বিভিন্ন জনের সঙ্গে রমণেচ্ছা প্রকাশ। এগিয়ে, ঢ্যাঙার মুখোমুখি, শেষমেশ যে জানাল ‘ভাল জিনিসও আছে।’
ভাল জিনিসে আমাদের রুচি না থাকায় পিছন ফিরে স্টেশনের দিকে চললাম। সেখানে প্রথম গন্তব্য প্রস্রাবখানা। সেটায় তালা লাগানোর উদ্যোগ চলছে। পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে কাজ সারার সময় চোখে পড়ল ছোট মাপের চৌকোনা কাগজে বিজ্ঞাপন ‘স্মার্ট বয়েজ, মেল টু মেল, ফুল বডি মাসাজ।’ তলায় মোবাইল নম্বর। সাধে কি স্টেশন থেকে নীচে নামার পৈঠেয় দাঁড়িয়ে ‘খবরের কাগজ’ বিক্রেতাদের এক জন একেবারে দার্শনিক ভঙ্গিতে জানিয়েছিল, ‘এখানে সব রকম মালই আছে। সঅব। যেমনটা চাইবেন, অর্ডার সাপ্লাই হবে।’
ছবি: সুমন চৌধুরী
রাত সোয়া একটায় খবরের কাগজ বিক্রেতার কথা শুনে ধাঁধা লাগল? আসলে, সকাল থেকে সারা দিন যে খবরের কাগজগুলো বিক্রি হয় না, অথচ কাগজ মোটা করতে অনেক ক্রোড়পত্র জোড়া, সেগুলোরই মাঝরাত্রে ভরা বাজার। বসবার জন্য কেনে লোকে, উঠতে না উঠতেই বে-পেছন হয়ে যায় সেগুলো, ছোট বাচ্চা কিংবা মাঝবয়সি পৃথুলা মহিলা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। এই কাগজগুলোর দাম তিন টাকা, যে দাম ছাপা থাকে প্রথম পাতায়। আর বিক্রি হয় নানা রঙা ছোপ-ছোপওয়ালা পলিথিন শিট, কোনও দরাদরি নেই, তিরিশ টাকা। জুতো খুলে রেখে, ছড়ানো পলিথিন শিটের ওপর নিজের ব্যাগটা মাথায় দিয়ে আয়েশ করে চোখ বুজলে কিন্তু আপনার জুতো কিংবা চটি মুহূর্তে পাতাখোরদের দায়িত্বে! আরপিএফ-রা তাড়া করে ঠিকই, কিন্তু তারা ন্যালব্যাল করতে করতে পগার পার। শিয়ালদহ স্টেশনে দিন-রাত পাতাখোররা ঘোরে। স্টেশন থেকে একটু দূরে তাদের চুরি করা মাল জলের দরে গস্ত করার লোক আছে, সেখানে হাতবদল করা, পাতা খাওয়া, ঘোলাটে চোখে আবার নতুন শিকার ধরতে ফিরে আসা।
সে যাক, আপাতত আমরা ‘স্মার্ট বয়েজ...’-এর সামনে। যেখান থেকে উঁচু গলায় ‘তাড়াতাড়ি সারুন, তাড়াতাড়ি সারুন, দরজায় তালা দেওয়া হবে, আরে ও-দিকের বাথরুমটা তো খোলা থাকে’, শুনতে শুনতে আমরা এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে ডান দিকের চত্বরে নেমে এলাম। আলোকিত সেন্ট জন’স চার্চ পেরিয়ে আর একটু এগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। শবদেহের খাট বিক্রির দোকান। তিন জন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। তাঁদের কাছাকাছি জায়গায় খাটের ওপর শোওয়া এক জন। না, মৃতদেহ নয়। অধের্র্ক চোখ বুজিয়ে ইনি খদ্দেরদের সঙ্গে দরদস্তুর করছেন। সংলাপ:
‘জেন্টস না লেডিজ?’
‘ভদ্দরলোক।’
‘বডির ওজন কত?’
‘ভাল চেহারা।’
‘লম্বাই? কত দূরে নিয়ে যাবেন?’
এ বার খরিদ্দাররা বিরক্ত, উসখুস। সেটা দোকানের একটু ভিতর থেকে টের পেলেন আর এক জন। মহিলা কণ্ঠ জানালেন, ‘সাতশো, ন’শো, ষোলোশো। সবচেয়ে ভালটা বাইশশো।’ বলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাইরে শোওয়া মানুষটার আঙুল ঘুরে গেল।
ফিরলাম। স্টেশনে তখন শেষ বারের মতো খানিকটা অংশ মেশিন-গাড়ি দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সত্যি, স্টেশনটা রাতে একেবারে ঝাঁ-চকচকে। অথচ ঠিক এ রকমই সময়ে, অর্থাৎ রাত একটার এ পাশ-ও পাশে এই স্টেশনই নরকতুল্য মনে হয়েছিল, ’৭৮-এ। রবীন্দ্র সদনে সুচিত্রা মিত্রের গান শুনে বাইরে এসে দেখি তুমুল বৃষ্টি। বহু চেষ্টা করে যখন শিয়ালদা স্টেশন পৌঁছলাম, শেষ গাড়ি চলে গেছে। কাদা-জলে প্যাচপেচে স্টেশন চত্বরে বহু লোক। তাদের কথাবার্তার সঙ্গেই মিশে যাচ্ছে পালে পালে ওপরে উঠে আসা কুকুরদের চিৎকার, আশপাশে তখনকার ‘ভাল জিনিস’দের বিস্তর আনাগোনা ও ইশারা। সে দিনের কথা হঠাৎ-ওঠা হেঁচকির মতো মনে পড়ে গেল।
খানিকটা হেঁটে কাগজওয়ালার কাছে কাগজ কিনতে গেলাম। একটু দূরে দেখি, পলিথিন শিটের ওপর চাদর বিছিয়ে বালিশ ফুলিয়ে শোওয়ার আয়োজন করছেন কয়েক জন মাছের ব্যবসায়ী। বর্ষার দিনগুলো ছাড়া যাঁরা শীতকালেও খোলা আকাশের নীচে ঘণ্টা তিনেক শুয়ে-ঘুমিয়ে থাকেন। এঁরা আসেন নৈহাটি শান্তিপুর ইত্যাদি থেকে। ভোরবেলা বৈঠকখানা বাজারে মাছ কিনে, এলাকায় ফিরে গিয়ে ব্যবসা। এঁরা জানালেন, আরপিএফ তাঁদের কাছে কখনও পয়সা চায়নি, তবে দিন কয়েক আগের একটা গল্প আছে। বাংলাদেশ থেকে আসা একটি ছেলে, তার এখানকার আত্মীয়দের বাড়ির কোনও অনুষ্ঠানের জন্যে মাছ কিনতে এসেছিল। রাতের বেলায় স্টেশন চত্বরেই একটু অ-জায়গায় প্রস্রাব করতে গিয়ে আরপিএফ-এর হাতে ধরা পড়ে। নিজেকে বাংলাদেশি বলেই পরিচয় দেয়। আরপিএফ ‘শাহবাগ’ বোঝে না, অতএব তার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। পরে দয়া করে হাজার ফেরত দেয়। এঁদের মত, বাংলাদেশি কবুল না করলে দু-একশো টাকায় ব্যাপারটা মিটে যেত।
আবার হাঁটা। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছাকাছি একটা জায়গায় হঠাৎ দেখি, একটু দূরের আলো-আঁধারিতে অন্তত জনা দশেক কমবয়সি ছেলে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে। ভাবলাম পেচ্ছাপ করছে, পরে বুঝলাম, আরে তা নয় তো, অন্য কিছু। মিথ্যে বলব না, একটু ঘেন্না করছিল, কিন্তু মনে পড়ল জয় গোস্বামীর লাইনগুলো,
যদি আমার গান হত শীত তাড়ানোর জন্য, যদি আমার গান হত
শীত তাড়ানোর জন্য ভিখিরিদের সমবেত হস্তমৈথুনের উল্লাস
যে মিলন তারা কখনও পায়নি কল্পনা করেনি কখনও, যদি
আমার গান হত সেই মিলনের সমস্ত সম্ভব অসম্ভব চূড়া, যদি হত

... দীপক বলল, ‘ধুর, চল নন্দনের কাছটায় ঘুরে আসি।’ ‘নন্দন’ মানে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের সোজাসুজি যে নামার জায়গা, সেখান থেকে নেমে একটা বেড় দিলেই একটা ঘেরা জায়গা, গোল, শান-বাঁধানো। এই রাত দুটোতেও সেখানে কেউ কেউ আমিষগন্ধী জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। এরা কি ট্রেন মিস করা পাবলিক?
সেখান থেকে বেরিয়েই দেখি দুজন ট্যাক্সি-ড্রাইভার ‘হ্যায় হ্যায়’ করে গরু তাড়ানোর ভঙ্গিতে তিন-চার জন মহিলাকে তাড়াচ্ছে। একটু দূরে পুলিশ বুথ। আর একটু উঁচুতে দাঁড়িয়ে দুই দর্শকের হো-হো খ্যাঁকখ্যাঁক হাসি।
‘কারা ঢুকছিল? চোর?’ খ্যাঁকখ্যাঁক-কে পাকড়াও করি।
সে হিন্দি মেশানো বাংলায় জানায়: এরা ঘরহীন বারবণিতা। কাস্টমার ধরার জন্য মাঝে মাঝে উপরে আসে। কারওকে পেলে, ফ্লাইওভারের তলার চত্বরে নিয়ে যায়। সেখানে তক্তপোশ আছে, প্রয়োজনে মাটিতে পাতার পলিথিন শিট আছে, দু’দিকে গার্ড দেওয়ার লোক আছে। কিন্তু ঘর নেই। পুরো কাজটা হবে আলো-আঁধারিতে। এই সমস্ত মেয়েরা বেশি রাতে ট্রেনে কলকাতায় আসে, ভোরবেলার ট্রেন ধরে চলে যায়।
‘তা আপনারা তাড়াচ্ছেন কেন?’ দীপকের প্রশ্নে তিনি পালটা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা জানতে চাইছেন কেন, আপনাদের দরকার?’
আমরাও ক্লান্ত হয়েছিলাম। ফের বাথরুম পেয়েছে। পায়ে-পায়ে হাজির হই সারা রাত খোলা থাকা একমাত্র টয়লেটে। সেখানে নবদ্বীপের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস লোকেদের পায়খানা করতে দিয়ে পয়সা কালেক্ট করেন। রোজ বারো ঘণ্টা ডিউটি। গত দশ বছর ধরে এই কাজ করছেন। তার আগে নবদ্বীপে তাঁত বুনতেন। নিজের ছোট তাঁত, নিজেই বুনতেন, নিজেই বিক্রি করতেন। চালাতে পারলেন না। তাঁত উঠে গেল। তার পর এক জনের দৌলতে রেলওয়ে কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে আলাপ। ব্যস, ‘এই বিশ্বাসের কাজ’ করতে চলে এলেন।
‘বিশ্বাসের কাজ?’ আমি ভ্রু কোঁচকাই।
‘কাঁচা পয়সা তো।’ তিনি জানান।
‘শুধু পয়সা নেওয়া, না মাঝে মাঝে জল ঢালা-ও?’
‘ওর জন্যে লোক আছে, তবে করতেও হয়। যখন কাস্টমারের তাড়া থাকে। কেউ হয়তো নোংরা করে বেরিয়ে গেছে, আমাদের লোকটা বাইরে তখন...’
‘আচ্ছা, বালুচরি বোনা হাতে অচেনা লোকের পায়খানায় জল ঢালতে ভাল লাগে?’
‘বালুচরি বুনিনি কখনও, তবে টাঙ্গাইল ধনেখালি হরদম বুনেছি। নাম ছিল, জানেন তো!’ মধ্য-পঞ্চাশের চিত্তরঞ্জন উদাস হন। তার পরেই হঠাৎ দূরে তাকিয়ে হইহই করে ওঠেন।
‘এই আবার, আবার নেশা করছিস?’
দেখি, ন্যাকড়ার পুঁটলি হাতে নিয়ে দুটো বছর এগারো-বারোর ছেলে দুদ্দাড় দৌড়ল।
‘কীসের নেশা?’
‘ন্যাকড়ায় ডেনড্রাইট ফেলে তার গন্ধ শোঁকা। জব্বর নেশা হয়। কড়া নেশা।’
বেশ কয়েক পা হেঁটে সারা রাত খোলা আরএমএস-এর একটা ট্রলিতে পেছন ঠেকিয়েছি কি ঠেকাইনি, দেখি একটু দূরে এক জন যুবক অন্য এক যুবকের গায়ের ওপর ঘুমের ঘোরে পা তুলে দিয়েছে। যায় কোথায়, যার গায়ে পা তুলে দেওয়া, সে উঠে বসে ক্যাঁত-ক্যাঁত লাথি। এও উঠে বসল। তার পর দাঁড়িয়ে, সলমন খান স্টাইলে জামাটা খুলে ফেলল। ফাইট দেখব বলে অপেক্ষা করছি, ও মা, লোকটাকে কিছু বলল না। টলমল পায়ে উঠে হাঁটতে হাঁটতে ট্রলির পাশ দিয়ে ধা।ঁ
বেশ খানিকটা হেঁটে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মকে পিছনে রেখে বসবার চেষ্টা করলাম। যেখানে অনেকে বসে-শুয়ে। দুজন বৃহন্নলা, তাদের পেছনে কমবয়সি কয়েকটা ছেলে, লোকজন দেখতে দেখতে হেঁটে যাচ্ছে। তৃতীয় জন নেই। তখনও এনকোয়ারি কাউন্টার খোলা, এমনকী কালো কোটের টিকিট চেকার দাঁড়িয়ে। আড়াইটে বেজে গেছে। পাশে বসা দু-তিন জনের সঙ্গে আলাপ হল। এক জন পলাশি-র জব্বর শেখ, হাওড়ায় চেন্নাই মেলে ক’জনকে তুলে দিয়ে শিয়ালদহে ফিরে এসেছেন ভোরের ট্রেন ধরবেন বলে। কমবয়সি বাবলু শেখ এসেছে নদিয়ার করিমপুর থেকে রাতটা এখানে কাটিয়ে সল্ট লেকের হোমিয়োপ্যাথিক রিসার্চ সেন্টারে লাইন দিতে যাবে। সদলবলে বৃদ্ধ গিয়াসউদ্দিন এসেছেন মুর্শিদাবাদ থেকে। রোগী ভর্তি আছে এনআরএস-এ। প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই ঝাঁ-চকচকে খাবারের দোকান সারা রাত্তির খোলা। আর ভেতরে আলো জ্বালানো একের পর এক বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম।
একটু পরে হঠাৎ মহিলা কণ্ঠের তীক্ষ্ন কান্নার আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘এখনই যাব, এখনই যাব।’ জনা তিনেক পুরুষের সঙ্গে তিনি উঠে চলতে শুরু করলেন। বুঝলাম, হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছিল, কেউ মারা গেছেন। একটু মনখারাপ আর কিছুটা ক্লান্তিতে, দুজনেই জুতো খুলে পা ছড়িয়ে বসলাম। বাবলু শেখ বলল, ‘জুতো সামলে রাখুন।’ সামনের দিকে ইশারা করল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে দড়ি-পাকানো চেহারা, ময়লা পুরো-হাতা গেঞ্জি ফুলপ্যান্ট পরা ঘোলাটে চোখের লোক। অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখি, বছর দশেকের বাচ্চা ছেলের সঙ্গে মধ্যবয়সি মহিলার খবরের কাগজ নিয়ে টানাটানি। যাঁরা এইমাত্র হাসপাতালে গেলেন, তাঁরা ওই কাগজগুলোতে বসে ছিলেন।
রাত শেষ হচ্ছে। টাটকা খবরের কাগজের বান্ডিল ডাঁই করা অবস্থায় ট্রলারে চেপে প্ল্যাটফর্মের দিকে যাচ্ছে। দূরের ফ্লাইওভারে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। অনেক আগে টিকিট কাউন্টারগুলো খুলে গেছে। ভোরের ট্রেনগুলোর ভোঁ বাজিয়ে চলা শুরু, আমরা উঠে দাঁড়ালাম। সাউথ স্টেশনের দিকটায় হাঁটতে আরম্ভ করলাম। বহু লোক শুয়ে-ঘুমিয়ে-বসে। এক দিকে হাঁটুর ওপর শাড়ি উঠে যাওয়া, বোজানো চোখে ধেবড়ে যাওয়া কাজল, হনু-ওঠা-গালে সস্তা লালের প্রলেপ, শাড়ি-জামার তলায় কোনওক্রমে জানান দেওয়া ‘শুকনো শহিদ স্তন’ নিয়ে ঘুমিয়ে এক মহিলা। একটু দূরে লাল স্ট্র্যাপ দেওয়া পাতলা চটিজোড়া পড়ে আছে, পাতাখোররা ছুঁয়েও দেখেনি।
মনে দুম করে একটা ভোরের পিচুটির মতো বিশ্রী প্রলেপ পড়ে গেল। কে বলতে পারে, ইনি হয়তো সেই ভাল জিনিসের কেউ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.