বয়স মাত্র পাঁচ। কিন্তু এই বয়সেই তার কাঁধে পাঁচটি ‘অনাথ’ শিশুর দেখভালের দায়িত্ব! মায়ের মতোই তাদের আগলে রেখেছে ‘জখলা’—কাজিরাঙা পশু উদ্ধার এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের ছোট্ট সেই হাতি।
ওই কেন্দ্রের কর্মীরা জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে তার ‘পরিজন’দের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল জখলা। বনকর্মীরা সেটিকে উদ্ধার করে। কিন্তু মানুষের ছোঁয়া লেগে যাওয়া শাবককে ফের নিজেদের পালে ঢোকায়নি অন্য হাতিরা। ওই দিন থেকেই অনাথ শিশুটির ঠিকানা হয় পুনর্বাসন কেন্দ্রই। |
পাল থেকে বিতাড়িত শিশুরা যেন কোনওভাবেই মায়ের অভাব বুঝতে পারে নাসে দিকে তাই সতর্ক নজর থাকে জখলার। বর্তমানে ওই কেন্দ্রে রয়েছে দুটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী হস্তিশাবক। পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মীরা জানিয়েছেন, মাস তিনেক আগে ধেমাজি জেলায় ব্রহ্মপুত্রের চর থেকে উদ্ধার করা হয় সর্বকনিষ্ঠ শাবকটিকে। অসুস্থ শিশুটিকে ফেলে রেখেই চলে গিয়েছিল সেটির আত্মীয়রা। ভয়ে, খিদেয় প্রায় আধমরা শাবকটিকে উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মানুষ দেখে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ওই হস্তিশাবকটি। এগিয়ে আসে জখলা। দুর্বল শিশুটিকে তারপর থেকেই শুঁড়ে আগলে রেখেছে সে। অন্য কাউকে ছোট্ট ওই শাবকটির সঙ্গে খুনসুটিও করতে দেয় না। তার সঙ্গে দুষ্টুমি করলে বকা দেয় অন্য চার ‘সন্তান’কেও।
ওই কেন্দ্রের চিকিত্সক অঞ্জন তালুকদার বলেন, “জখলার ভূমিকায় আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত। এখানে সদ্য নিয়ে আসা শাবকটির দেখভালে জখলা খুব যত্নশীল। সবসময় ওকে আড়াল করে রাখে। মায়ের অভাবও তাতে খানিকটা ভুলেছে শাবকটি।” উদ্ধার কেন্দ্রের ম্যানেজার রথীন বর্মন বলেন, “হাতি খুবই সামাজিক প্রাণী। কিন্তু, দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে কোনও হাতি মানুষের সংস্পর্শে এলে, অন্য হাতিরা তাকে আর দলে ফেরত নেয় না। তবে গত কয়েক বছরে পুনর্বাসন কেন্দের থেকে কয়েকটি হাতি মানসের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছে। এই কেন্দ্রে এখন যে কটি ছোট হাতি রয়েছে, সে গুলি নিজেদের মধ্যে দল গঠন করে ফেললে জঙ্গলের জীবনে একসঙ্গে চলতে সুবিধা হবে।” |