গুরু-শিষ্যের সংঘাত
লোকসভা ভোটে মোদীই নেতা, অপেক্ষা ঘোষণার
রেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই যে দল ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়বে, সেই সিদ্ধান্ত আজ প্রায় নিয়েই নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। এখন বাকি ঘোষণাটুকুই। দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর অনুপস্থিতিতেই কর্মসমিতির বৈঠকের শেষ দিনে প্রচার কমিটির প্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণা করার ব্যাপারে মরিয়া আরএসএস নেতৃত্ব। বড় কোনও ঘটনা না ঘটলে আগামিকালই বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ তাঁর সমাপ্তি বক্তৃতায় মোদীর নাম প্রচার কমিটির প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে দিতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আরএসএস নেতা সুরেশ সোনি শনিবার রাতে গোয়া পৌঁছে যান। রাতেই তাঁর সঙ্গে কথা হয় রাজনাথের। আরএসএসের বক্তব্য, গোয়ার কর্মসমিতি থেকে যদি মোদীর ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা না হয়, তা হলে দেশ জুড়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে শুধু নয়, তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে হিন্দু সমাজের অন্দরেও। এই পরিস্থিতিতে মোদীকে নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার পাশাপাশি আডবাণীকেও বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা চলছে। বিজেপির অন্দরের খবর, তাঁকে নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা হয়ে গেলে মোদী নিজেই তাঁর একদা ‘গুরু’ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন।
দিল্লিতে আডবাণীর বাড়ির সামনে নরেন্দ্র মোদী আর্মির বিক্ষোভ।
মোদী-আডবাণীর এই টানাপোড়েনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা রাজনাথ সিংহের সমস্যা আসলে একাধিক। গোয়ায় আসার আগেই মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করার বিষয়টি নিয়ে রাজনাথ কথা বলেছিলেন আডবাণীর সঙ্গে। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রচার কমিটির প্রধান হিসেবে মোদীকে নিয়োগ করার ব্যাপারে আডবাণীর আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি লোকসভার প্রচার কমিটির পাশাপাশি বিধানসভা ভোটের জন্যও একটি পৃথক কমিটি ঘোষণা করার পক্ষপাতী। অথচ সেই প্রস্তাব মানতে এখনও নারাজ সঙ্ঘ।
ফলে এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব উভয়সঙ্কটে। দলের এক নেতার কথায়, “জোসেফ হেলারের ‘ক্যাচ-২২’ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে দলকে। এক দিকে কর্মী ও নেতাদের মধ্যে মোদীকে ঘিরে প্রবল প্রত্যাশা। অন্য দিকে আডবাণী ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের পাল্টা দাবি।” পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে আজ আডবাণীর বাড়ির সামনে মোদীর সমর্থনে বিক্ষোভের ঘটনায়। বিজেপি অবশ্য এই ঘটনার নিন্দা করে দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীরা কেউই দলের সদস্য নন। তবে এই ঘটনার পর আডবাণীর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন সুষমা স্বরাজ। বৈঠকে তিনি বলেন, “আডবাণী শুধু আমাদের অভিভাবক, পথদ্রষ্টা নন, এই দল গড়ার অন্যতম কারিগরও। ফলে তাঁকে বাদ দিয়ে কোনও ঘোষণা করা উচিত নয়।” কিন্তু আডবাণীর অনুপস্থিতিতে কাল কোনও ঘোষণা ছাড়াই খালি হাতে গোয়া থেকে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকিও নিতে পারছেন না রাজনাথ। এর মধ্যেই বেঙ্কাইয়া নায়ডু জানান, অনেকে এই ঘোষণার সঙ্গে মোদীকে একবারে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সেই ঘোষণাও আডবাণীর সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে দিল্লি ফিরে সকলের সঙ্গে কথা বলেই অন্য কোনও বড় মঞ্চ থেকে সেই ঘোষণা করতে হবে। রাজনাথের সঙ্গে আজ আডবাণীর টেলিফোনে কথা হলেও প্রচার কমিটি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।
শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত চেষ্টা চলেছে, যাতে মোদীকে নিয়ে আডবাণী শিবির এমন কোনও তীব্র প্রতিক্রিয়া না জানায়, যাতে ভোটের মুখে দলের অন্তর্কলহ বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান না করে আহ্বায়ক করার একটা প্রস্তাব রেখে মধ্যপন্থা খোঁজারও চেষ্টা হচ্ছে। তখন একটাই পার্থক্য হবে। মোদী প্রচার কমিটির আহ্বায়ক হলে দলের সভাপতি হিসেবে রাজনাথই সব বৈঠকে পৌরোহিত্য করবেন। রাজনাথ শিবিরের দাবি, আডবাণী এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।
আডবাণী গত কালই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে শনিবার গোয়ায় আসা সম্ভব হবে না। অরুণ জেটলি, প্রকাশ জাভড়েকরের মতো মোদী সমর্থকরা চাইছিলেন, আডবাণীর ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেল’-এর ফাঁদে পা না দিয়ে বরং দ্রুত ঘোষণা করে দেওয়াটাই ঠিক হবে। তাতে আডবাণীকেও একটা বার্তা দেওয়া হবে যে, আপনি বাদ সাধার চেষ্টা করলেও দলের মুড কিন্তু আপনারই বিপক্ষে! আজ সকালে রাজনাথ আডবাণীকে ফোন করেন। আডবাণীর তাঁর অসুস্থতার কথা জানালে রাজনাথ তাঁকে বলেন, “চিকিৎসকের পরামর্শ শোনা উচিত। আমরা চেয়েছিলাম আপনি আসুন। কিন্তু আপনি যখন আসতে পারছেন না, তখন আপনাকে আসতে হবে না। আমরা বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নিলাম, তা জানাতে আপনারই কাছে আসব।” বার্তা খুব স্পষ্ট। গত কাল রাত পর্যন্ত আডবাণীকে নরম করার চেষ্টা যখন ব্যর্থ হল, তখন তাঁকে বাদ দিয়েই এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন রাজনাথ। এবং সেটি শুধু মোদীর কথা শুনে নয়। বরং নাগপুরের ইশারায়।
গোয়ায় দলীয় বৈঠকের ফাঁকে চায়ের কাপে তৃপ্ত চুমুক মোদীর।
সকালে গোয়ায় যখন রাজনাথ বক্তৃতা শুরু করলেন, ঠিক তখন দিল্লিতে ৩০ পৃথ্বীরাজ রোডে আডবাণীর বাড়ির সামনে ‘নরেন্দ্র মোদী আর্মি’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা মোদীকে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিজেপি সূত্র বলছে, অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে এই বিক্ষোভের মূল হোতা আসলে মোদী-সমর্থকরাই। ‘নরেন্দ্র মোদী আর্মি’র নামে বিক্ষোভ দেখানোর মাধ্যমে মোদী সমর্থকরা দলের অন্দরে রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা করছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আডবাণী-ঘনিষ্ঠ উমা ভারতী আজ রাজনাথকে ফের একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে জানিয়েছেন, সভাপতি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি তা সমর্থন করবেন। গত কয়েক বছরে বিজেপির যে কোনও কর্মসমিতির বৈঠকে সমাপ্তি বক্তৃতা সাধারণত আডবাণীই দেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে আগামিকাল এই কাজটি করবেন রাজনাথ। তার আগে নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, আগামিকাল কর্মসমিতির বৈঠকের সমাপ্তি বক্তৃতায় মোদী সম্পর্কে ঘোষণা করবেন রাজনাথই। গোয়ায় বৃষ্টি হচ্ছে বলে বৈঠকের পর কোনও প্রকাশ্য সভা না রেখে কর্মী সম্মেলন করা হবে। সেখানেও মোদী বক্তৃতা দেবেন।
তবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হলে শরিকদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটিও দেখার। বিশেষ করে নীতীশ কুমারের। তাই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে শরিক দলগুলির সঙ্গেও আলোচনা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অরুণ জেটলির মাধ্যমে নীতীশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন রাজনাথ। নীতীশকে বোঝানো হচ্ছে, এর আগে প্রচার কমিটির দায়িত্বে আডবাণী, জেটলি, প্রমোদ মহাজনের মতো নেতারা ছিলেন। যদিও নীতীশ সেই যুক্তি মানবেন কি না, তা নিয়ে বিজেপি সংশয়ে। তবে দলের একাংশের মতে, জোট ছাড়লে নীতীশেরও যে খুব লাভ হবে না, বিহারের গত উপ-নির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ। এই অবস্থায় শরিকদের নিয়ে ঝুঁকি থাকলেও দলের মনোভাব বুঝে মোদীর নাম ঘোষণা করে দিতে চাইছেন রাজনাথও।
এই মনোভাবের রেশ ধরেই প্রকাশ জাভড়েকর আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “রাজনাথ আজ বলেই দিয়েছেন, কাল যখন দলের নেতারা নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে যাবেন, তাঁরা যথেষ্ট উৎসাহ, আশা, উদ্দীপনা সম্বল করে যাবেন।” এই উদ্দীপনার অর্থ কী? জাভড়েকরের জবাব, “অপেক্ষা করুন কাল পর্যন্ত। যা ঘোষণা হবে, সকলের সম্মতি নিয়েই হবে।” কিন্তু আডবাণী-সহ তাঁর শিবিরেরই যশোবন্ত সিংহ, উমা ভারতী, শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো নেতারা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেন? আডবাণী ঘনিষ্ঠ যশবন্ত সিন্হা বলেছেন, তিনি সুস্থ। তবু ‘অন্য কারণে’ গোয়ায় আসবেন না। কেন এমন হচ্ছে? জাভড়েকরের অর্থবহ জবাব, “ঋতুর পরিবর্তন হলে এ ভাবে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন!”

ছবি: পিটিআই


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.