সরকারি প্রকল্পে ব্যাঙ্কঋণ দেওয়ায় পিছিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলা
বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাঙ্কঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের সাতটি জেলা। তুলনায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি এগিয়ে। রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী জেলাগুলির ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার হার (ক্রেডিট-ডিপোজিট বা সিডি রেশিও) সাধারণত ৪০ শতাংশের উপরে থাকার কথা। অর্থাৎ ব্যাঙ্কে ১০০ টাকা জমা থাকলে অন্তত ৪০ টাকা ঋণ দিতে হবে। কিন্তু বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা এই সাত জেলায় সিডি রেশিও ৪০ শতাংশের কম। সবচেয়ে কম উত্তর ২৪ পরগনায় ২৪ শতাংশ। সবচেয়ে এগিয়ে কলকাতা ৯৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে রাজ্যের ১৯টি জেলার গড় সিডি রেশিও ৬৫ শতাংশ। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে তা ছিল ৬৩ শতাংশ। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “ওই জেলাগুলির কাজ আশানুরূপ নয়। সিডি রেশিও বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
যে সব জেলার সিডি রেশিও ন্যূনতম সীমা অর্থাৎ ৪০ শতাংশের উপরে রয়েছে, সেখানেও যে গ্রাহকেরা ঋণ নিয়ে সন্তুষ্ট তা নয়। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুরের কথাই ধরা যাক। জেলার ব্যাঙ্কগুলিতে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩৩৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা জমা রয়েছে। আর গত আর্থিক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ সিডি রেশিও ৪৫ শতাংশের কিছু বেশি। পরিস্থিতি অবশ্য শেষ ছ’মাসে কিছুটা ভাল হয়েছে।
কিন্তু আবেদন করেও ঋণ পাননি, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। খড়্গপুরের লক্ষ্মীকান্ত সিংহের অনুযোগ, “ধান ভাঙা যন্ত্র কেনার জন্য ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। এখনও পাইনি।” সিমেন্টের খুঁটি তৈরি করার প্রকল্পের ঋণ চেয়েও পাননি আক্ষেপ নবকুমার নাগের। মেদিনীপুর সদর ব্লকে শালপাতার থালা তৈরি করে মা মনসা স্বসহায়ক দল। তাদের সদস্য মায়া সামন্ত বলেন, “ব্যাঙ্কে দরবার করেও প্রকল্পে ঋণ মিলছে না। ফলে কাজও এগোনো যাচ্ছে না।” স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে বিভিন্ন সময়ে জনস্বাস্থ্য বা বৃক্ষরোপণের মতো নানা কাজ দেওয়া হয় ডেবরা ব্লকের মহাপ্রভু স্বসহায়ক দলকে। তাদের সদস্য মানসী পালের কথায়, “আমরা পঞ্চায়েতের দেওয়া কাজ করি। স্বাধীন ভাবে কিছু করার ইচ্ছে। ব্যাঙ্কের ঋণ পেলে একটা প্রকল্প করব।”
প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, কোনও জেলায় ৩০টি ব্যাঙ্ক কাজ করে, কোনও জেলায় তারও বেশি। সব ব্যাঙ্কের সমান ভূমিকা থাকে না। থাকলে সিডি রেশিও আরও বাড়ত।” পশ্চিম মেদিনীপুরে যেমন তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিডি রেশিও যথাক্রমে ৪৬.৭২, ৪০.২২ ও ৩৩.৩৫। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের একাংশের পাল্টা দাবি, বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হলেও তা শোধের হার আশানুরূপ নয়। সে কারণে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দেওয়ায় আগ্রহ হারায়। অথচ সময়ে শোধ করলে ফের ঋণ পেতে সুবিধে হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) সমরেন্দ্র ষণ্ণিগ্রাহী বলেন, “আমরা বিভিন্ন প্রকল্প ধরে-ধরে পর্যালোচনা করছি। সিডি রেশিও বেড়েছে, আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে ঋণ শোধের হার বাড়ানোও ভীষণ জরুরি।’’
ব্যাঙ্কগুলোর কাজকর্ম পর্যালোচনা করতে প্রতি জেলায় ‘ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেটিভ কমিটি’ (ডিসিসি) রয়েছে। তবে তাদের নির্দেশ অনেক সময়ে মানা হয় না বলেও অভিযোগ। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের বলেন, “যে সাতটি জেলায় সিডি রেশিও-র হার ৪০ শতাংশের নীচে, সেগুলির পরিস্থিতি বুঝতে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.