স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গ্যারাজ সামলান সুদীপ্তা
তিনি রাঁধেন, চুল বাঁধেন। আবার গাড়িও সারান। স্বামীর গ্যারাজের কার্যত এখন তিনিই কর্ত্রী। সংসারের দায়িত্ব সামলানোর সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িতে নতুন চাকা লাগানো, গাড়ি সারানোর কাজও তিনি করেন নিপুণভাবে। মহিলারা যে ভারী কাজে পুরুষদের সমান পারদর্শী হতে পারেন, এক কথায় সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন বাঁকুড়া শহর লাগোয়া বিকনা গ্রামের সুদীপ্তা সিংহ।
২০০৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আর পড়ার সুযোগ পাননি সুদীপ্তা। বিয়ের পর স্বামীর সাইকেলের গ্যারাজে সাহায্য করতেন। গাড়ি সারানোর প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও শেখার ইচ্ছা ও তাগিদে কয়েকদিনের মধ্যেই কাজ শিখে নেন তিনি। স্বামীর পরিশ্রম ভাগ করে নেওয়ার জন্য যে কাজে হাত লাগিয়েছিলেন সেই কাজে এখন তিনি রীতিমতো দক্ষ। তাই স্ত্রীর হাতে গ্যারাজের দায়িত্ব দিয়ে মাসের অনেক সময়ই নিশ্চিন্তে বাইরে কাজে যেতে পারেন সুদীপ্তার স্বামী সৌমেন সিংহ।
গাড়ি সারাতে ব্যস্ত সুদীপ্তা। —নিজস্ব চিত্র।
সুদীপ্তাদেবীর কথায়, “বিয়ের পর বাড়িতে রান্না তো করতেই হবে। কিন্তু স্বামীকে সহযোগিতা করাটাও কর্তব্য বলেই ভেবেছিলাম। প্রথম প্রথম যখন আমি একা গ্যারাজ খুলতাম তখন সবাই অবাক হয়ে যেত।” আর এখন? লাজুক হেসে বলেন, “ না না। এখন আর কেউ অবাক হয় না। বরং সকলে আমার কাজের প্রশংসাই করে।” কী কী কাজ করতে হয় তাঁকে? সুদীপ্তাদেবী বলেন, “সব কাজ। গাড়ির চাকাতে হাওয়া দেওয়া, গাড়ির চাকা বদলানো, এমনকী গাড়ি সারাইয়ের পর তা ঠিক চলছে কি না গাড়ি চালিয়ে তা দেখেও নিতে হয়।”
বাঁকুড়ার সতীঘাট সংলগ্ন এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দা মৌসুমী নন্দী সুদীপ্তাদেবীর দোকানেই গাড়ি সারান। তিনি বলেন, “প্রথমে বউদিকে (সুদীপ্তাদেবীকে সকলে এই নামেই ডাকেন) গাড়ির কাজ করতে দেখে অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু ওঁর কাজ এতটাই নিখুঁত যে আর অন্য কারও কাজ পছন্দই হয় না।” বাঁকুড়ার নতূনচটির বাসিন্দা রণদীপ গরাইও একই সুরে জানান, “খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন উনি।”
যিনি সুদীপ্তাদেবীকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছিলেন তিনি খুশি ছাত্রীর কাজে?
সুদীপ্তাদেবীর স্বামী সৌমেন সিংহ বলেন, “ব্যবসার কাজে প্রায়ই আমাকে বাইরে যেতে হয়। তখন ও পুরোপুরি একাই গ্যারাজ সামলায়। আমি যে দিন থাকি সেই দিনগুলো এক সঙ্গে কাজে লাগি।’’ স্ত্রীর কাজের বিশ্লেষণে বলেন, “প্রথম প্রথম একটু আধটু কাজে ভুল হত। তবে এখন ও-ই আমার কাজের ভুল ধরিয়ে দেয়। ভাবতেই পারিনি এত ভাল কাজ শিখে যাবে”
স্বামীর পাশ থেকে সুদীপ্তাদেবী বলে ওঠেন, “ভুল তো সবারই হয়, কিন্তু তাগিদ থাকলে অন্য রকম কাজে মেয়েরাও যে ছেলেদের থেকে পিছিয়ে নেই তার প্রমাণ পেয়েছি। কিছু করতে চেয়েছিলাম, তা যে পেরেছি সেটা ভেবেই ভাল লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.