খ্যাপা ষাঁড়ের দল দাপাচ্ছিল রাস্তায়
রাতের খাওয়া শেষ করে সবে বিছানায় শুয়েছি। তন্দ্রাটা কেটে গেল একটা গোলমালের আওয়াজে। জানলার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, এক দল ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অটো, মোটরবাইকগুলো বাড়ি মেরে ভাঙছে। কখনও মোটরবাইকের ফাইবারের খোলে আগুন লাগিয়ে ছুড়ে দিচ্ছে বাড়ির দিকে।
ব্যারাকপুরে তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ অভিযুক্ত।
আমাদের মোটরবাইকটাও বাইরে ছিল। দেখলাম, সেটাকেও দুমড়ে-মুচড়ে ভাঙা হচ্ছে। আর কয়েক জনের একটা দল চড়াও হয়েছে আমাদের প্রতিবেশী লাল্টুর বাড়িতে। লাল্টুকে বহু দিন ধরেই চিনি। বালির ব্যবসায়ী লাল্টু আগে সিপিএম করত। এখন তৃণমূল করে। দমাদ্দম লাঠি-রডের ঘা পড়ছিল তার বাড়িতে। চলছিল গালিগালাজও। এর মধ্যেই কানে এল, লাল্টু নাকি কাকে একটা খুন করেছে! সে কারণেই ওরা নাকি লাল্টুকে মারতে এসেছে!
আর সাহস পেলাম না। বাড়িতে স্ত্রী-বাচ্চারা আতঙ্কে কাঁপছে। জানলার কপাট বন্ধ করে সবাই একটা ঘরে সিঁটিয়ে রইলাম। ভোরের দিকে বেরিয়ে দেখি, গোটা রাস্তাটার উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গিয়েছে! এখানে সেখানে ভাঙা মোটরবাইক, অটো পড়ে। সাইকেল-ভ্যানগুলি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে রয়েছে। দোকানপাটগুলোর দরজা টেনে-হিঁচড়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিছুটা ভয়-ভয় লাগছিল। তবু মনকে সাহস দিলাম, যা হওয়ার রাতেই হয়ে গিয়েছে। আর হয়তো কিছু হবে না। এবং সে কারণেই সাতসকালে নতুনবাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও নিস্তার পেলাম না!
তাণ্ডবের পর। ব্যারাকপুরের বাকার মহলে।
হঠাৎ দেখি, রাতের সেই গুন্ডারাই ধেয়ে আসছে বাজারের দিকে। আসতে আসতে ওরা একের পর এক দোকান, গাড়ি ভাঙতে লাগল। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন এক দল খ্যাপা ষাঁড়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একে মারছে, তাকে ধরছে। একের পর এক দোকান থেকে মাছ, সব্জি রাস্তায় উল্টে ফেলে দিচ্ছে। হঠাৎই সামনে পড়লেন এক বৃদ্ধ। তাঁকেও রেহাই দিল না ওরা! এক বছর কুড়ির যুবক সপাটে লাঠির বাড়ি বসিয়ে দিল তাঁর গায়ে। তার পরেই ধেয়ে গেল বাজারের একটি মুরগির দোকানের দিকে। গুন্ডা বাহিনীর রণমূর্তি দেখে মুরগির দোকানদার তখন দোকান ছেড়ে পালিয়েছেন। গুন্ডাদের এক জন মুরগি-ভর্তি খাঁচাটাকে রাস্তায় আছড়ে ফেলল। তার পর দোকানের ভিতরের বালতি, গামলাগুলোকে ছুড়ে ছুড়ে নর্দমায় ফেলতে লাগল। আমিও তখন প্রাণের ভয়ে বাড়ির দিকে দৌড়োচ্ছি। পিছনে তাণ্ডব চলছে। চার পাশে কোথাও কোনও পুলিশের দেখা নেই।
ছুটতে ছুটতে কোনও মতে বাড়িতে পৌঁছলাম। পরিবারের লোকজন আমায় দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। বুঝলাম, লোকমুখে খবর পেয়ে গিয়েছিল ওরাও।
এত দিন ব্যারাকপুরে রয়েছি। এমনটা আগে দেখিনি!

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.