গগনে গরজে মেঘ। তাই খোঁজ পড়েছে ছাদের।
যেমন সাতসকালে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় জনাকয়েক নেতাকে দরজার সামনে বেশ বিনয়ের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাকই হয়ে যান তেহট্টের বাথানপাড়ার স্বপন বিশ্বাস। এত সকালে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার? অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ওই নেতারা স্বপনবাবুকে তখন বলেন, “বুঝতেই পারছেন, বর্ষার মধ্যে ভোট। ছাদ ছাড়া ভেসে যাব। সভা-বৈঠক করার জন্য আপনার রাস্তার ধারের ঘরটায় যদি এই ক’দিন একটু বসতে দেন, তো উপকার হয়।”
যখন তখন বৃষ্টি নামছে। অথবা কাঠফাটা রোদ। ফাঁকা জায়গায় মিটিং করার জো নেই। কিন্তু গ্রামে ছাদ পাওয়া শক্ত। তাই কোথাও ছাউনি দেওয়া মাচা, কোথাও চণ্ডীমণ্ডপ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের দখলে। জায়গা ‘বুক’ করার লড়াইও জমে গিয়েছে। যেমন স্বপনবাবুই সামান্য ক্ষোভের আঁচে পড়েছিলেন। তাঁর সোজা উত্তর, “আগে এলে আগে পাবেএই নীতি নিয়েই ঘর ছেড়েছি আমি।” |
গোপালেরপাড়ার শাহাজ মোল্লা, সইফু্ল শেখ কিংবা হোগলবেড়িয়ার ফটিক মণ্ডল, বিমল সরকারদের কারও বাড়ি নির্মীয়মাণ, কারও বাড়ির রোয়াক বেশ প্রশস্ত, কারও ত্রিপল টাঙানো মাচা, কারও আবার দরমার বেড়া দিয়ে ঘেরা বারান্দা ইতিমধ্যেই ‘বুক’ করে ফেলেছেন বিভিন্ন দলের লোকজন। শাহাজ মোল্লা বলেন, “আগে দেওয়াল লেখার অনুমতি চাইতে আসত। এখন তো আস্ত ঘর চাইছে।”
তবে সকলেই যে ভয়ে-ভক্তিতে শুধু মুখের কথায় জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন তা নয়। হাওয়ার গতি বুঝে গোপালপুরের সরিফুল সেখ বাইরের এক ফালি বারান্দা থেকে ধানের বস্তা, পাটকাঠি সরিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে রেখেছেন। তাঁর কথায়, “যে দলই আসুক দিয়ে দেব। কিন্তু শুধু মুখের কথায় হবে না। ভাড়া নেব।” কোনও রাজনৈতিক দলের পরিচিত নেতাকর্মীদের নিজেদের বাড়িতে তেমন জায়গা থাকলে, তাঁরা অবশ্য ভাড়ার কথা মুখে আনছেন না।
জায়গা ‘বুক’ করার কাজে তৃণমূলই নেমেছে আগে। তৃণমূলের তেহট্ট-১ ব্লক সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে ছোট বৈঠক এই মুহূর্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোজ ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে বলে আমরা আগে থেকেই বেশ কিছু এমন জায়গা দেখে রেখেছি যেখানে ছাদ রয়েছে। মালিকদের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হচ্ছে।” কংগ্রেসের নজর বারোয়ারি চণ্ডীমণ্ডপ বা ক্লাব ঘরের দিকে। করিমপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তারক সরখেল বলেন, ‘‘সব জায়গায় তো আর চণ্ডীমণ্ডপ বা ক্লাবঘর নেই। তাই কারও বাড়ির রোয়াক বা বসার ঘরে মিটিং সারতে হচ্ছে।” সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য আশাদুল খাঁ-র কথায়, ‘‘আমাদেরও ভরসা রাখতে হচ্ছে ছাউনি দেওয়া মাচা, কিংবা কারও বাড়ির ঘেরা বারান্দার উপরেই। অনুমতিও নিয়ে নিয়েছি আমরা।”
প্রশাসনও জানিয়ে দিয়েছে, অনুমতি নিয়ে যদি কোনও রাজনৈতিক দল কারও বারান্দা, বৈঠকখানা বা মাচা ব্যবহার করেন, তাহলে অসুবিধা নেই। তেহট্টের মহকুমাশাসক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “কিন্তু যদি এমন অভিযোগ আসে যে, ভয় দেখিয়ে কিংবা জোর করে জায়গা দখল করে কোনও দল মিটিং করছে, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যার হাতে যত বেশি ছাদ, এলাকায় তার পায়ের চলার মাটি তত বেশি পোক্ত, এমন কথাও উড়ছে সীমান্তের এই মহকুমার হাওয়ায়। |