সম্পাদকীয় ২...
শুকসারী সম্বাদ
ম্প্রতি এক সমীক্ষায় প্রকাশিত হইয়াছে, ফেসবুক-এ সৌদি আরব ও ভারতের নাগরিকরা নিজেদের কথা সর্বাধিক ‘শেয়ার’ করেন। প্রথম সৌদি আরব, দ্বিতীয় ভারত। শুনিয়া প্রথমে কিঞ্চিত্‌ বিস্ময় জাগ্রত হওয়া স্বাভাবিক। মেধা তালিকার মতোই, এ ধরনের ক্রমাঙ্কনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু এই সূত্রে একটি সামাজিক সত্যের আভাস হয়তো পাওয়া যায়। কী ভাবে ও কোথায় নিজের মনের কথা ব্যক্ত করিবেন, তাহা মূল্যবান প্রশ্ন। আরব্যরজনী হউক অথবা বঙ্গদেশীয় রূপকথা এমন ঘটনা প্রায়শই দৃষ্টিগোচর হয় যে, সামাজিক পরিবেশে যে কথা বলা সম্ভব নহে, তাহা শুকসারী, লতাগুল্ম, অরণ্যপর্বতাদিকে বলিতে হইল। প্রাচ্যে ব্যক্তিগত কথা, একান্ত নিজের কথা বিনিময় করিবার স্বাধীন পরিসর হয়তো তুলনায় কম ছিল। তাই পরিবার ও সমাজের বাহিরে এই সকল নিভৃত প্রাকৃতিক শক্তির নিকট নিরুপায় হইয়া মনের কথা বলা, বলিয়া অন্তত মন কিছু হালকা হইত।
ইদানীং সমাজের চেহারা চরিত্র বদলাইয়াছে। প্রকৃতির নিভৃতির পরিবর্তে প্রযুক্তি নানা নিজস্ব পরিসরের জন্ম দিয়াছে। সোশাল নেটওয়ার্কে এক্ষণে অনেকেই সচল। এই ‘ভার্চুয়াল’ পরিসরগুলিতে দেশ-কাল-পরিবার তেমন করিয়া হানা দিতে পারে না, নজরদারি শিথিল। নিজস্ব পাসওয়ার্ড দিয়া একান্ত আলিবাবার গুহায় ঢুকিয়া বন্ধুদের সহিত মত বিনিময় করা যায়। নির্বাচিত নিজস্ব বন্ধু, সামাজিক বা পারিবারিক ভাবে চাপাইয়া দেওয়া প্রতিবেশী বা স্বজন নহেন। সামাজিক ও পারিবারিক নিষেধ অগ্রাহ্য করিয়া ‘শেয়ার’ করা যায় আপনাপন স্বাধীন চিন্তা। ইংরাজি শেয়ার শব্দটি ইদানীং বহুব্যবহৃত। শেয়ার করা মানে কেবল বিনিময় করা নহে, সমমর্মী দুটি মন যেন একসঙ্গে একই পরিসরে অবস্থান করিতেছে। যে সমাজে সরাসরি, মুখোমুখি স্বাধীন মতামত বিনিময়ের জায়গা কম, ফেসবুক জাতীয় পরিসর সেখানে অভাব পূরণ করিয়াছে, মন খুলিতেছে, কথা ফুটিতেছে, ভাবের মোক্ষণ হইতেছে।
বিষয়টি আর এক দিক দিয়াও বিচার করা চলে। পূর্বে ভারতে এক ধরনের যৌথ সামাজিকতা ছিল। সেখানে যেমন যৌথতার দাপটে অনেক কথা বলা চলিত না, তেমনই যৌথতার নিজস্ব কিছু সুবিধাও ছিল। বিশেষ করিয়া যৌথ পরিবারের মহিলাদের মধ্যে সখ্য গড়িয়া উঠিত। এই সখ্য অনেক সময়েই সামাজিক বর্গের গণ্ডি অতিক্রম করিত, বাড়ির গৃহিণীর সহিত আদরের দাসীর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সুলভ ছিল। আবার পুরুষদের মধ্যে যাঁহারা ঠিক কর্মী নহেন, তাঁহারাও অনেক সময় এই ‘মেয়েলি’ কথার পরিসরে ঢুকিয়া পড়িতেন, বউঠানের সহিত দেবরের সাহচর্য নিছক সাহিত্যসম্ভব ছিল না। এই চেহারাটি অস্তমিত। পরিবার এবং সমাজের কাঠামো বদলাইয়া গিয়াছে, দৈনন্দিন যোগাযোগের রূপটিও বহুলাংশে পরিবর্তিত হইয়াছে। অনেক পুরানো জানালা বন্ধ হইয়াছে। খুলিয়াছে নিজস্ব ফেসবুক কথা বলিবার জন্য, মন খুলিবার জন্য। যুগ বদলায়, উপায় বদলায়, সাহচর্যের প্রয়োজন বদলায় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.