|
|
|
|
ঐক্য-সন্ধানে মরিয়া রাজনাথ |
অসুস্থদের ধাক্কায় থমকে মোদী-বরণ
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • পানজিম |
আরএসএসের সবুজ সঙ্কেত মেলার পর বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ চেয়েছিলেন, গোয়ায় বৈঠকের শেষ দিনে, অর্থাৎ রবিবার, নরেন্দ্র মোদীকে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কমিটির প্রধান ঘোষণা করে দিতে। আগামিকাল কর্মসমিতির বৈঠক শুরুর আগে আজ সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে বিষয়টিতে প্রশ্নচিহ্ন ফেলে দিয়েছেন অসুস্থ লালকৃষ্ণ আডবাণী। চাপ বাড়িয়ে সুষমা স্বরাজও জানিয়ে দিয়েছেন, আডবাণীর উপস্থিতিতেই এই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হোক। রাজনাথ নিজেও তা-ই চান।
কিন্তু আডবাণী আগামিকালও গোয়ায় আসবেন কি না, তা অনিশ্চিত। এই অবস্থায় আডবাণীকে যে কোনও ভাবে গোয়ায় আনার জন্য একটি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। বস্তুত মোদী ও তাঁর অনুগামীরা যে ভাবে চাপ দিচ্ছেন, তাতে গোয়ার বৈঠকেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে চান রাজনাথ। যাতে লোকসভা নির্বাচনে কোন দিশায়, কার নেতৃত্বে দল এগোতে চাইছে, তার একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে যায় গোটা দেশে।
|
বিজেপি জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পথে মোদী। ছবি: পিটিআই। |
আডবাণী ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের মনোভাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপন্থা হিসেবে লোকসভার পরিবর্তে মোদীকে আপাতত শুধু মাত্র আগামী বিধানসভা নির্বাচনগুলির প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। এবং এই বিষয়ে আডবাণীর সম্মতি নিয়ে দলের মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজনাথ। মোদী শিবির সে প্রস্তাবে কতটা রাজি হবে, তাতে সংশয় রয়েছে। তাঁরা চাইছেন, বিধানসভা নয়, মোদীর কাঁধে এখনই লোকসভার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল দলের শীর্ষ নেতারা আলাদা করে বৈঠকে বসে রণকৌশল চূড়ান্ত করতে চাইছেন।
কর্মসমিতির বৈঠকের একদিন আগে দেশের সব রাজ্যের সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু এ বারে মোদীকে নিয়ে আলোচনার জন্য রাজনাথ সমস্ত পদাধিকারী ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের ডেকে নিয়েছিলেন। সে কারণে সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, নরেন্দ্র মোদীরা আজ দুপুরেই পৌঁছে যান গোয়ায়। খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে গোয়া সফর বাতিল করেছেন আডবাণী। তার আগে, গত কালই আডবাণী-ঘনিষ্ঠ উমা ভারতী রাজনাথকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে তিনি গোয়ার বৈঠকে আসছেন না। যশোবন্ত সিংহ আজ জানান, তিনি গোয়ার বৈঠকে নয়, অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন! আডবাণী না আসায় সুষমা তাঁর অসন্তোষ গোপন করেননি। গোয়ায় দুপুরে পৌঁছলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হন সুষমা। বিজেপি সূত্রের খবর, সুষমাও চাইছিলেন, যতক্ষণ না আডবাণীর সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ কোনও আলোচনা যেন শুরু করা না হয়। এই সব মিলিয়ে আজ বৈঠক অনেক দেরিতে শুরু হয়।
কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই কাণ্ডকারখানায় বেজায় খুশি। দলের নেতা রশিদ আলভি বলেন, “মোদীর ভয়ে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বিজেপি নেতারা! যাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা রইল!” |
বিস্তারিত... |
মোদীপন্থী নেতারা গতকাল থেকেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর অভিষেকের জন্য সুর চড়াতে শুরু করেন। মোদী আজ গোয়ায় পা রাখার পর থেকে তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা আরও বেড়েছে। মোদীও সমর্থকদের ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে বৈঠকে ঢোকেন। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, বৈঠকের অন্দরে তত অন্য রকম সুর শুনেছেন মোদী-পন্থীরা। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “লালকৃষ্ণ আডবাণীই প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য।” বৈঠক দীর্ঘ ক্ষণ চললেও মোদী নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সরাসরি না হলেও কিছু নেতা অবশ্য ইঙ্গিত দেন যে, লোকসভা ভোটে দল কোন দিশায় এগোবে, এই বৈঠকেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা উচিত। কিন্তু আডবাণীর সম্মতি ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না রাজনাথ। দলের এক নেতার কথায়, “এর আগে মুম্বইয়ে কর্মসমিতির বৈঠকে যখন নিতিন গডকড়ীর কথা মাথায় রেখে সভাপতি পদের মেয়াদ বাড়ানোর ধারা সংশোধন হচ্ছিল, তখনও আডবাণী বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। নিজেকে বিষয়টি থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আডবাণীর জন্যই গডকড়ীকে সভাপতি পদ থেকে সরতে হয়। এ বারেও আডবাণী অনুপস্থিত থেকে মোদী প্রশ্নে যে দূরত্ব রাখছেন, তাতে রাজনাথের পক্ষে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব কঠিন।”
যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই নরেন্দ্র মোদী আজ বৈঠকে সবথেকে পিছনের সারিতে গিয়ে বসেন। বিজেপি সূত্রের খবর, আডবাণীর বিরোধিতায় মোদী নিজেও ক্ষুব্ধ। বিধানসভার প্রচারের দায়িত্ব দেওয়ার যে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে, তাতেও ঝুঁকি রয়েছে মোদীর। যদি সেই নির্বাচনে দিল্লি জয় না করা যায় বা ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হয়, তা হলে লোকসভার আগে মুখ পুড়বে মোদীরই। আবার এখনই লোকসভার প্রচারের দায়িত্ব তড়িঘড়ি দিয়ে দিলেও সমস্যা রয়েছে। কারণ, বিধানসভায় বিজেপির ফল ভাল না হলে তার দায় পরোক্ষে চাপবে মোদীর ঘাড়েই। ফলে সব দিক বিবেচনা করেই রাজনাথকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গত কাল আরএসএস নেতা সুরেশ সোনির সঙ্গে বৈঠকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েও রাজনাথকে তাই সব দিক বিবেচনা করতে হচ্ছে। তিনি কি রবিবারই কোনও ঘোষণা করবেন না কি শুধু মাত্র ইঙ্গিত দিয়ে এ যাত্রায় থামবেন, তা নির্ভর করবে আগামিকাল আরও আলোচনার পরেই।
|
পুরনো খবর: মোদী -প্রসঙ্গে তুঙ্গে টানাপোড়েন |
|
|
|
|
|