গরাদের ফাঁকে অনর্গল চুম্বন প্রেমিকার, দর্শক স্বামী
বাব্বাঃ, একেবারে গরাদভাঙা চুম্বন!
আগমার্কা ভালবাসা বলে কথা, কোনও আড়ালই রেয়াত করে না। লক-আপের মধ্যে খানকতক ছিঁচকে চোরের ফিচেল হাসি, খাকি উর্দির অনর্গল আনাগোনা, মাঝে পড়ে থাকল পুরু লোহার গরাদ। থাক না। তা বলে কি চুমু খাওয়া যাবে না!
ঘন লাল ওড়না সমেত হাতটা গরাদের ফাঁক গলে সটান পৌঁছে যায় যুবকের কপালে। ঘাম মুছে দেওয়ার ফাঁকে তরুণী বলেন, “সোনা আমার, গরমে বড্ড কষ্ট হচ্ছে না, আর একটু ক্ষণ। দেখো, জামিন নিয়ে ঠিক বেরিয়ে যাব আমরা।” তারপরেই স্নেহ আর প্রেম মিশিয়ে চকাম করে যুবকের গালে চুমু খেয়ে বসেন। পাল্টা চুম্বন ফিরিয়ে দিতে যুবকের ঠোঁটও ছুঁচলো হয়ে এগিয়ে এসেছিল, খাকি উর্দি বলে ওঠে, ‘উঁহু’।
সে ধমকে আর কতক্ষণ? সোমবার দুপুর থেকে রাত, ঘণ্টা ছয়েক ধরে লক আপের ফাঁকফোঁকর গলে ঘন ঘন চুম্বনে মুখর হল বসিরহাট থানা। যা দেখে ডিউটিতে থাকা পুলিশ শুকনো ঠোঁট মুছে বললেন, “ওপারে তুমি এ পারে ‘হামি’, কী পিরিত মাইরি!”
গরাদের ভিতরে পেটে কিল মেরে খানকতক চুমুতেই পেট ভরিয়ে গুম হয়ে থাকলেন নস্যি রঙা গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট পরা প্রেমিক-প্রবর।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
আর, বিয়ে করা বউয়ের এমন উত্তুঙ্গ ভালবাসা দেখে লকআপের এক কোণে ম্লান মুখে বসে থাকলেন আটপৌরে এক যুবক। অন্য যুবকের গালে নিজের স্ত্রীর পুনঃ পুনঃ চুমু এঁকে দেওয়া দেখে ঘন ঘন ঘাড় নেড়ে যিনি শুধু ফেললেন ঘন দীর্ঘশ্বাস। মানে?
ঘটনাটা তা হলে আর একটু খুলেই বলি।
সোমবার বেলা দেড়টা নাগাদ বসিরহাট বাসস্ট্যান্ডে হুশ করে এসে দাঁড়ায় তেল চুকচুকে একটি মোটরবাইক। বছর পঁচিশের যুবক মাটিতে পা ঠেকিয়ে বাইক ঈষৎ কাত করতেই তাঁকে জাপ্টে ধরে পিছনে বসে থাকা আঁটোসাঁটো লেগিংস আর কুর্তি পরা তরুণী খিলখিলিয়ে হেসে ওঠেন। যুগলের ঘনিষ্ঠতার মাঝে আচমকাই এসে দাঁড়ান দোহারা চেহারার অন্য এক যুবক।
তরুণীর স্বামী। হাতে তাঁর উপচে পড়া লিচুর থোকা, তালশাঁস।
‘কী ব্যাপার? এ বার যে হাতেনাতে ধরে ফেললাম!’ মেয়েটির দিকে বাঁকা প্রশ্ন করতেই নিমেষে শুরু হয় যায় চুলোচুলি। লিচু-তালশাঁস সামলে তরুণীর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে তাঁকে বাসে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। মরিয়া তরুণী তাঁর হাত কামড়ে ধরেন। ভরদুপুরে এমন কাণ্ড-কারখানা দেখে লোক জড়ো হয়ে যায়। তবে ঠিক কোন পক্ষ নেবেন বোঝার আগেই রটে যায়, তরুণীকে অপহরণের চেষ্টা হচ্ছে। লিচু হাতে যুবক বলার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি মেয়েটির স্বামী। কিন্তু সে কথা শুনলে তো! জনতার কিল-চড়-ঘুঁষির শাসনের পরে তিন জনকেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানেই পুলিশের জেরায় জানা যায়, প্রহৃত যুবকের বাড়ি বাসন্তীতে। পেশায় সেনাকর্মী। এবং বাস্তবিকই কিছু দিন আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ওই তরুণীর। মেয়েটিও কবুল করে, বসিরহাটের বাসিন্দা ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিয়ের আগে থেকেই। কিন্তু বাড়ির লোক বিয়েতে মত দেয়নি। কিন্তু পুরনো প্রেম কি ভোলা যায়? ইটিন্ডায় মামা বাড়ি যাতায়াতের সুবাদে স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ চলতেই থাকে।
বাড়ি ফিরে সে কথা কানে এসেছিল স্বামীর। হাতেনাতে স্ত্রীকে ধরবেন বলে ওই দিন তিনি সটান চলে এসেছিলেন বসিরহাট বাসস্ট্যান্ডে। ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে বাসস্ট্যান্ডে স্ত্রীকে ছাড়তে নির্ঘাৎ আসবে তার প্রেমিক। তাই ফলমূল কিনে একেবারেই আটপৌরে চেহারায় ওৎ পেতে ছিলেন তিনি। পুলিশের কাছে তিনি জানান, যদি স্ত্রীর অভিসারের ব্যাপারটা রটনাই হয়, তবে সে সব নিয়ে আর কথা বাড়াবেন না। বলবেন, স্ত্রীকে চমকে দিতে নিজেই চলে এসেছেন ফলমূল হাতে।
রাতে জামিন পেয়ে তিন জনেই মাথা নিচু করে বেরিয়ে যান থানা থেকে। যাওয়ার সময়, হাপুস চোখে তরুণী বলেন, “সোনা ছাড়া আমি ব্লাইন্ড, আমি বাঁচতেই পারব না।” প্রেমিক প্রবর তার দ্বি-চক্রযানে স্টার্ট দেওয়ার আগে কাঁধ ঝাঁকিয়ে ছুড়ে দেন মোক্ষম বোমা, “ওকে দিল দিয়েছি, ঠিক ছিনিয়ে আনব।”
আর, শুকনো লিচু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তরুণীর স্বামী কবুল করে যান: “ওদের প্রেম-পিরিতের যা বহর দেখলাম, মনটাই শুকিয়ে গেছে ভাই!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.