প্রবন্ধ ৩...
থেকে থেকেই হাততালি পড়ছে
র্দা তখনও ওঠেনি। থার্ড বেল পড়েছে। আবহে বেজে উঠল ‘তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন...’। ‘আনন্দ আশ্রম’-এর সেই হিট শ্যামল মিত্র! নাটক শুরু হল, ব্রাত্য বসুর ‘সিনেমার মতো’।
শেষ কবে গ্রুপ থিয়েটারে এমন প্রবল সমারোহে জনপ্রিয় সিনেমা ঢুকে পড়েছে, মনে করতে পারছি না। সিনেমা, এবং সিনেমার দর্শক। যে দর্শক তেমন তেমন দৃশ্যে হাততালি দিয়ে ওঠেন, উচ্চ হাসি চেপে রাখেন না, ঠোঁটে আঙুল দিয়ে নিজেদের দীক্ষিত নাট্যরসিক দেখানোর দায় তাঁদের নেই।
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে সংস্কৃতিকে এলিটগ্রাস থেকে মুক্ত করার একটা ঘোষিত উদ্যোগ চলছে। রবীন্দ্র জন্মোত্‌সব, ফিল্ম ফেস্টিভালকে নন্দন চত্বর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জনস্থানে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকের সেই উদ্যোগের ফলেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা তথাকথিত আর্ট ফিল্ম গণসংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠেনি। উঠতে পারে না, কারণ গ্রামে তাঁবু খাটিয়ে বুনুয়েল দেখালেই যে সেই চলচ্চিত্রের প্রসার ঘটবে জনতার আরও বড় একটা অংশে, এমন ভাবাটা নেহাত শহুরে বোকামি।
নন্দনে বা মিনার-বিজলি-ছবিঘরে, অ্যাকাডেমিতে বা গ্রামের কোনও খোলা যাত্রামঞ্চে, শেষ পর্যন্ত জনগণেশের কাছে পৌঁছনোর উপাদানটা থাকে শিল্পের মধ্যেই, এবং সেখানে কমার্শিয়াল, গ্রুপ কিংবা আর্ট এমন ধারাবিচারের মানেই হয় না। গ্রুপ থিয়েটারের একটা নিজস্ব দর্শক আছে, কমার্শিয়াল থিয়েটারের একটা দর্শক ছিল এ ভাবে ভাবার কোনও দরকার আছে কি না, সেই প্রশ্নটা তুলে দিয়েছে এই নতুন নাটক। আর এই জরুরি কাজটা করল থিয়েটারের একটি তথাকথিত গ্রুপই, কালিন্দী ব্রাত্যজন।
বাংলা সাহিত্যের এক জন প্রায়-বিস্মৃত বিশিষ্ট ঐতিহাসিক তারাপদ ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে নতুন এক ভাবে ভাগ করেছিলেন: গোষ্ঠীসাহিত্য, জনসাহিত্য, সভাসাহিত্য আর ব্যক্তিসাহিত্য। সাহিত্যের মাপকাঠিতে থিয়েটারের বিচার চলে না, কিন্তু ওই নামগুলোকে তুলে নেওয়া যায়। গ্রুপ থিয়েটার বললেই কেমন যেন গোষ্ঠী-নাটক বলতে ইচ্ছে করে। যে নাটক একটা বিশেষ শ্রেণির দর্শক দেখেন, সাধারণত অ্যাকাডেমিতে যে নাটক দেখতে যাওয়া একটা বিশেষ ধরনের স্টেটাস সিম্বল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং যে নাটকের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন কুশীলবরা বিশেষ ধরনের শিল্পসেবকের মর্যাদা পেয়ে থাকেন। এই ধারণাটা একটু একটু করে ভাঙছে, গ্রুপ থিয়েটারের দলতন্ত্রটা শিথিল হয়েছে, গ্রুপ থিয়েটারের একক অভিনেতাও এখন দলের বাইরেও অভিনেতা হিসেবেই ‘হিরো’ হয়ে উঠছেন। সিনেমার মতো।
‘হিরো’ শব্দটা হয়তো প্রচলিত গ্রুপ-সংস্কৃতিতে অসংস্কৃত বলে মনে হবে, শব্দটাকে আমরা একটু নিচু নজরে দেখি, পপুলিজমের সঙ্গে আপাদমস্তক জড়িয়ে রাখি। সে ধারণা ভেঙে দিয়ে এই নতুন নাটকে বাংলা সিনেমা প্রযোজক জয়জিত্‌ দত্তগুপ্তের ছেলে অভিজিত্‌ দত্তগুপ্ত মদ্যপ হয়ে মঞ্চে আসেন, উত্তমকুমারকে গুরু বলে সম্বোধন করে চোখা চোখা সংলাপ বলেন আর হাততালিতে হল ফেটে পড়ে। তখন ওই নাটকে ‘হিরো’ই হয়ে ওঠেন অভিজিত্‌। এই দর্শক ‘আমাদের’ দর্শক নন, ‘ওদের’ দর্শক নন, এক বড় জনসভার দর্শক, কোনও শ্রেণিতে যাঁদের বেঁধে ফেলা যায় না, সিনেমার মতো।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.