এসেছিলেন ‘নিশব্দে’। চলেও গেলেন স্বেচ্ছায়, নীরবে।
আঠেরো বছর বয়সে প্রথম ছবি, তা-ও একেবারে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে। বলিউডে আর ক’জন নায়িকার এমন সৌভাগ্য হয়েছে, ক্যুইজের প্রশ্ন হতে পারে। জিয়া খান সেই বিরল সৌভাগ্যবতী ছিলেন।
২০০৭ সাল। মুক্তি পেল রামগোপাল বর্মার ‘নিশব্দ’। ছবিটা বাজারে চলেনি তেমন ঠিকই। কিন্তু সাহসী গল্পের সাহসী নায়িকা হিসেবে নজর কাড়লেন জিয়া। হইচই ফেলে দিল অমিতাভর সঙ্গে তাঁর চুম্বনদৃশ্য।
আঠেরো থেকে পঁচিশে এসে
সেই জিয়া খানই শেষমেশ
অবসাদে আত্মঘাতী হলেন? চমকে গিয়েছে বলিউড।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অবসাদের জেরেই এই আত্মহত্যা। সম্প্রতি অভিনেতা আদিত্য পঞ্চোলির ছেলে সুরজ পঞ্চোলির সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেছিল জিয়ার। তার সঙ্গে পেশাগত হতাশা মিলেমিশেই জিয়া এই চরম পথ বেছে নিলেন বলে মনে করছে পুলিশ। মঙ্গলবার সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে আদিত্য এবং সুরজকে জেরা করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বলছে, জুহুর সাগর-সঙ্গীত অ্যাপার্টমেন্টের ঘরে সোমবার রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে আত্মঘাতী হন জিয়া। সে সময় তাঁর মা রাজিয়া খান বাড়ি ছিলেন না। যখন ফিরলেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেই দেখতে পেলেন, মেয়ের ঝুলন্ত দেহ। পুলিশের দাবি, আত্মহত্যার আগে রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে জিয়া মোবাইল থেকে শেষ ফোনটি করেছিলেন সুরজকে। মিনিট দুয়েক কথা হয়েছিল। সোমবার সারা দিনই তাঁদের দু’জনের বেশ কয়েক বার কথা হয়, টেক্সট মেসেজ চালাচালি হয়। জানা যাচ্ছে, সুরজের জীবনে নতুন প্রেমিকার অনুপ্রবেশ মেনে নিতে পারেননি জিয়া। সোমবার সুরজ তাঁকে একটি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন, জিয়া গ্রহণ করেননি। তবে শুধুমাত্র সুরজের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই এই আত্মহত্যা কি না, নিশ্চিত নয় পুলিশ। ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোটও মেলেনি।
বলিউডে নিজের কেরিয়ার নিয়েও যথেষ্ট হতাশ ছিলেন জিয়া। ‘নিশব্দ’ বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। পরের ছবি, আমির খানের সঙ্গে ‘গজনী’। নেহাতই পার্শ্বচরিত্র। এ ছবি জনপ্রিয়তার রেকর্ড গড়লেও জিয়ার জন্য আলাদা করে লাভদায়ক হয়নি। একই কথা প্রযোজ্য সাজিদ খানের ‘হাউসফুল’ সম্পর্কেও। ছবি হিট! কিন্তু জিয়া সামনের সারিতে নেই! তার পর যেন বড় পর্দা থেকে এক রকম উধাও হয়ে গেলেন জিয়া। মুম্বই চলচ্চিত্র জগতের কারও কারও মতে, বলিউড তাঁকে নির্বাসন দিয়েছিল। কারণটা যদিও অজানা।
|
“কী?? জিয়া খান?? কী হয়েছিল?
খবরটা কি সত্যি? অবিশ্বাস্য!” |
রামগোপাল বর্মা বলছেন, আর কোনও নতুন মেয়ের মধ্যে ওই প্রাণশক্তি দেখিনি, যা জিয়ার মধ্যে ছিল। অথচ সেই জিয়াই শেষের দিকে বলতেন, “আমার আশপাশের সবাই সব সময় বোঝাতে চায়, আমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।” গত তিন বছর তাঁর হাতে কোনও ছবি ছিল না। এই হতাশার পরিণতিই আত্মহনন, ধারণা রামগোপালের। এই রকম মৃত্যু এর আগেও বহু বার দেখেছে বলিউড। যেমন গুরু দত্ত। বলিউডের একাংশের ধারণা, স্ত্রী গীতা দত্তের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতির জেরেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন এই পরিচালক-অভিনেতা। কিংবা পরভিন বাবি। তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর পিছনে একাকীত্বকে দায়ী করেছেন অনেকে। বা অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। মাত্র উনিশ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যু হয় তাঁর।
এ ছাড়াও রয়েছেন পরিচালক মনমোহন দেশাই, দক্ষিণের জনপ্রিয় নায়িকা সিল্ক স্মিতা, মডেল নাফিসা জোসেফ...। তালিকাটা নেহাত ছোট নয়। গ্ল্যামার দুনিয়ার ঝাঁ-চকচকে জীবনটা এঁরা প্রত্যেকেই দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে। তার পর হঠাৎই হারিয়ে যাওয়া।
যদিও গত কিছু দিন যাবৎ জিয়া অভিনয়ে ফেরার চেষ্টাই করছিলেন। বেশ কিছু চুক্তি সই করেছিলেন বলে খবর। সংবাদমাধ্যমে নিজেই দাবি করেছিলেন, অভিনয়টাকে আরও ঘষামাজা করবেন বলে লন্ডনে পড়তে গিয়েছিলেন। এ বার আবার নিয়মিত কাজ করবেন। জিয়ার বদলে ‘নাফিসা’ নামটা ব্যবহার করতে চান বলেও জানিয়েছিলেন। সে সব কিছুই হল না।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আসতে শুরু করেছে একের পর এক প্রতিক্রিয়া। টুইট করেছেন স্তম্ভিত বিগ বি! অনুপম খের, শাহিদ কপূর, বিপাশা বসু, শ্রেয়া ঘোষাল, সোনম কপূর, ফারহা খান...কে নেই এই তালিকায়! রামগোপাল হাহুতাশ করছেন, “নিশব্দ ছবির দর্শনটা যে কেন জীবনে প্রয়োগ করতে পারলেন না জিয়া!”
সে ছবিতে জিয়ার নাম জিয়াই ছিল। জিয়াকে হারিয়ে, সংসার-সন্তান হারিয়ে অমিতাভও মরতেই যাচ্ছিলেন পাহাড় চুড়োয়। ফিরে এলেন। শুধু জিয়ার স্মৃতির সঙ্গে আরও কিছু দিন কাটাবেন বলে। ‘সায়ান ব্লু’ টোনে সেই জিয়াকে দেখে মজেছিলেন দর্শকরাও। জিয়া আজ শুধুই কতকগুলো ফ্রেম।
বলিউড তাঁকে তিন বছর আগেই মুছেছিল। সোমবার তিনি নিজেকে মুছলেন।
নিঃশব্দে। |