|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
কিউবিকলের সাজগোজ
হাওয়ায় ভ্যাপসা ভাব। মাঝেমাঝে বৃষ্টিও। অফিসে ফ্যাশন কী ভাবে? জানাচ্ছেন সুচন্দ্রা ঘটক |
পহলে দর্শনধারী, ফির গুণ বিচারী। এ কথা আজকাল সব চেয়ে বেশি খাটে কাজের জায়গায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকে আবহাওয়া। যত সমস্যা তো সেটা নিয়েই।
কলকাতার গরমে আর্দ্রতা বরাবরই ফ্যাশনের সব চেয়ে বড় শত্রু। তার উপরে আবার যখন-তখন বৃষ্টি। অথচ কাজের দিনের সাজ হতেই হবে মার্জিত। এ দিকে এমন ভ্যাপসা, প্যাচপ্যাচে মরসুমে গোটা দিনটা নিজের ফ্রেশ এবং কনফিডেন্ট লুকটা ধরে রাখা কি সহজ নাকি! দিনভর ফুরফুরে রাখতে পরতে হবে সুতি, লিনেন অথবা মলমলের তৈরি ফর্মাল। মত দিলেন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। ভারী কাপড় বা গাঢ় রঙে এ সময়ে ভেস্তে যেতে পারে কাজের মুডটা। মনে করাচ্ছেন আর এক ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত।
ব্যস্ত দিনের পশ্চিমী ফ্যাশন
সুতির পেনসিল স্কার্ট হোক বা ফর্মাল কটন ট্রাউজার, সঙ্গে পরতে হবে বেজ, হাল্কা গোলাপি অথবা লাইট অ্যাপেল গ্রিন লিনেন শার্ট। অভিষেক জানাচ্ছেন, কর্পোরেট দুনিয়ায় এখন হাঁটু পর্যন্ত ঝুলের স্কার্টও বেশ চলছে। তা যেমন পেনসিল কাটের হতে পারে, তেমনই আবার বক্স প্লিট করা মিড-লেংথ্ স্কার্টও বেশ ট্রেন্ডি। উপরে পরে নেওয়া যায় মানানসই রঙের খাদির কাপড়ের তৈরি কোনও গোলগলা, স্লিভলেস টপও। সে সাজে স্টেটমেন্টটা তৈরি করতে সঙ্গে অবশ্যই চাই বেশ উঁচু একটা বক্স হিল দেওয়া জুতো। বিশেষ কোনও মিটিং অথবা কনফারেন্সের জন্য পরে নেওয়া যায় ওয়েদার ফ্রেন্ডলি কোনও সিল্কের শার্ট অথবা নানা রকম কাটের গলা দেওয়া টপও।
শহরের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত নিবেদিতা মল্লিক জানান, যখন-তখন বৃষ্টি আর গরমের মরসুমে পশ্চিমী সাজ পছন্দ না হলেও মাঝেমধ্যে তো পরতেই হয়। তাই বিশেষ ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিংয়ের দিনগুলোর জন্য মরসুমের শুরুতেই কিনে নেন বেশ কিছু সাদা এবং অফহোয়াইট সেমি ফর্মাল টপ। মিটিংয়ে বসার আগে গলায় ঝুলিয়ে নেন খুব ব্রাইট কোনও রঙের হ্যান্ডলুমের স্কার্ফ।
সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় আবার অফিসে পুরোদস্তুর ফর্মাল লুকটাই পছন্দ করেন। বিশেষ করে রকমারি রঙের স্লিভলেস শার্ট আর হাঁটু পর্যন্ত ঝুলের প্লিটেড স্কার্ট। পছন্দের রং বলতে কমলা, পিচ, লেমন, অ্যাপেল গ্রিন।
|
‘কর্পোরেট’ বিপাশা বসু |
এথ্নিকেও ফুটিয়ে তোলা যায় ব্যক্তিত্ব
আবার এই মরসুমের জন্য ভারতীয় পোশাক খুব মানানসই। শাড়ি বা সালোয়ারেও দিব্যি ফুটিয়ে তোলা যায় নিজের কর্পোরেট মেজাজটা। চাইনিজ কলার দেওয়া একটা সুতির সালোয়ারে যেমন আরাম থাকে তেমন তৈরি হয় ফর্মাল লুকটা। সঙ্গে যদি টানটান করে প্লিট দেওয়া একটা ওড়না নেওয়া যায়, তবে তো কথাই নেই। মত অগ্নিমিত্রার।
আইটি-কর্মী সুদীপ্তা জানালেন, বিশেষ কোনও মিটিংয়ের জন্য উনি তুলে রাখেন সাদা কুর্তা আর পাতিয়ালা। বললেন, “এটা যেমন এলিগেন্ট, তেমনই আরামদায়কও। সঙ্গে হাল্কা গয়না।”
লেগিংসের সঙ্গে মিক্স এন’ ম্যাচ করে কুর্তি আর একটা স্মার্ট দেখতে দোপাট্টাও অফিসের জন্য বেশ আরামদায়ক। বললেন শহরের এক কলেজের শিক্ষিকা মল্লিকা। ওই পোশাকে সারা দিন নিজেকে ফিটফাট রাখাও সহজ।
কাজের জায়গায় শাড়ির ফ্যাশনও চলতে পারে বেশ। হাল্কা রঙের টাঙাইল হোক বা হাল ফ্যাশনের রংবেরঙের হ্যান্ডলুম কটন সঙ্গে শুধু একটা উজ্জ্বল রঙের প্রিন্টেড অথবা চেকস্ দেওয়া ব্লাউজ। বিভিন্ন রঙের মলমলের শাড়ির সাজেও কাজের জায়গায় দিব্যি ফুটিয়ে তোলা যায় নিজের ব্যক্তিত্ব। তবে অফিস-সাজে যত হাল্কা হবে গয়নাগাঁটি, ততই খুলবে ব্যক্তিত্বটা। বরং হয় কানে নয় তো গলায় একটা গয়না পরলেই সাজ যথেষ্ট সম্ভ্রান্ত দেখায়। মনে করছেন ডিজাইনারেরা।
কাজের দিনে ছেলেরা
যতই ফ্যাশনে টাইট ফিটেড ফর্মাল আসুক, বছরের এ সময়টায় একটু ঢোলা শার্ট বা ট্রাউজার পরা ভাল বলেই মনে করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, “কাজের সময়ে সাজটা কমফর্টেবল না হলে খুব মুশকিল। একটু লুজ-ফিট পোশাকই বেশি মানানসই এমন প্যাচ-প্যাচে মরসুমে।” বেছে নেওয়া ভাল সুতির জামা। যে কোনও প্যাস্টেল শেডের শার্টে নজর কাড়া যায় চারপাশটার। চলতে পারে কোরাল, পিচ, বেজ বা আকাশি রংও। এ মরসুমে যত দূরে থাকা যায় ফর্মালওয়্যারের পরিচিত কালো, ব্রাউন, গ্রে রঙের জগত থেকে, লুক ততই হবে ট্রেন্ডি। মত অভিষেকের।
বিশেষ মিটিং বা পার্টির জন্য তৈরি করে রাখা যায় হাল্কা ব্লেজার বা সামার জ্যাকেটও। তবে তা হতে হবে লিনেনের। মনে করেন অগ্নিমিত্রা। ভারী সুতি, পলিয়েস্টার, সিন্থেটিক এ সময়ে ভেস্তে দিতে পারে গোটা সাজটাই। ব্যাঙ্ককর্মী অর্ক জানান, খুব গরমের দিনে ঘিচা কটনের শার্টে অফিস গেলে কিছুটা হলেও ফর্মাল পরার কষ্টটা কম হয়। সঙ্গে দেখতেও স্মার্ট লাগে। অর্কর সহকর্মী ঋতম আবার সপ্তাহের শেষে ক্যাজুয়াল ওয়্যারের দিনটা নিয়ে বেশি চিন্তায় থাকেন। কারণ তাঁর কথায়, “এ ধরনের ওয়েদারে জিনস্টা পরা যায় না।” তাই খুব নরম সুতির ট্রাউজার বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে কোনও সলিড রঙের টি শার্টে সাজটা খোলে দিব্যি।
ওয়েদার যা-ই হোক, অফিসে ফ্যাশন-দুরস্ত হওয়াটা কঠিন নয়। |
ওয়ার্ড্রোবে মাস্ট |
লুকটা ঠিক কেমন হবে |
• হাল্কা নীল, সাদা সুতির ট্রাউজার
• বেজ রঙের পেনসিল স্কার্ট
• কাঁচা হলুদ, হাল্কা সবুজ, উজ্জ্বল নীল খাদির শার্ট
• সি গ্রিন, আকাশি রঙের লিনেনের কুর্তি
• গোলাপি, কমলা, বাদামির স্ট্রাইপড্ বা চেকসের ওড়না
• কিছু উজ্জ্বল রঙের লেগিংস
• সাদার উপরে কাজ করা তাঁতের শাড়ি
• প্রিন্টেড বা স্ট্রাইপড প্যাস্টেল শেডের কাপড়ে তৈরি কলার দেওয়া স্লিভলেস ব্লাউজ |
• এ সময়ে চুলের অবস্থা কিছুটা খারাপই থাকে। তার উপরে প্যাচ-প্যাচে আবহাওয়া। এর মধ্যে চুলটা টেনে পিছনে বেঁধে রাখাই ভাল। পরিষ্কার এবং ফর্মাল মেজাজ। টিপস্ দিচ্ছেন মেক-আপ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ চাকলাদার
• হঠাৎ বৃষ্টি বা ঘামে ঘেঁটে যেতে পারে মেক-আপ। তাই এমন দিনে ফাউন্ডেশন এক্কেবারে ‘নো নো’। জেল জাতীয় সান-স্ক্রিন-এর সঙ্গে কম্প্যাক্ট দিয়েই বেস মেক-আপ সারুন
• অফিসে কাজলের জায়গায় আই-লাইনার ব্যবহার করাই ভাল। লুকটা গোছানো থাকে। কারণ এই সময়ে কাজল ধেবড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি
• আর ব্যবহার করুন ওয়েদারের সঙ্গে মানানসই সুগন্ধী। চলতে পারে কোলোন বা লাইম ধরনের কোনও পারফিউম। বললেন অনিরুদ্ধ |
|
|
|
|
|
|