বোল্ডার সরবরাহের বরাত নিয়ে দুদলের মধ্যে সংঘর্ষে তিন জন তৃণমূল কংগ্রেস ও এক জন কংগ্রেস সমর্থকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধের কাজ শুরুর জন্য পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি পাঠানোর পরেও মালদহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিহারিটোলা ও আতারটোলায় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় জানানোয় হতাশ ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার অরুণকুমার সিংহ জানিয়েছেন, “২-৪ দিনের মধ্যে ভাঙন রোধের কাজ শুরু না করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় ভাঙন রোধের কাজ শেষ করা যাবে না। বর্ষায় ভাঙন রোধের কাজ করা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় যা অবস্থা তাতে পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া আমাদের প্রকল্পের কোনও ইঞ্জিনিয়ার এবং ঠিকাদার কাজ করতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। জেলা প্রশাসন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করা পর্যন্ত ভাঙন রোধে কাজ করা অসম্ভব।”
মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার জানান, শনিবার দু’দলের সর্ংঘষে চার জন মারা যাওয়ার পরে বিহারিটোলা ও আতারটোলার গ্রামের যা পরিস্থিতি তাতে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে এখনই ভাঙন রোধের কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। সমস্ত রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওযার পরই সেখানে পুলিশি নিরাপত্তায় ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা হবে।” এ দিকে আজকে জেলাশাসক বিহারিটোলা ও আতারটোলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্লক স্তরের বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু বৈঠকে সমস্ত রাজনৈতিক দল আসতে রাজি না হওয়ায় এ দিন বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য হন জেলাশাসক।
ভাঙন রোধের কাজ না হওয়ায় আতঙ্কিত লক্ষীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষ। পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান ফেরাজুল হক বলেন, “ভাঙন রোধের কাজ যদি না হয়। তবে বর্ষায় লক্ষীপুর পঞ্চায়েতের দু-তিনটি গ্রাম গঙ্গায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বীরনগর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে। বর্ষার সময়ে এই ভাঙন রোধে কাজ হলে কাজের বদলে শুধু চুরিই হবে, কাজ কিছুই হবে না।”
ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, শিমূলটোলার কাছে ৪ ভাগে ৩১০ মিটার এলাকা বোল্ডার দিয়ে ভাঙন রোধের কাজের টেন্ডার হয়। চার জন ঠিকাদার প্রায় ৫ কোটি টাকার কাজের বরাত পান। কিন্তু, ঠিকাদাররা কাজ শুরু করার আগেই বোল্ডার সরবরাহ নিয়ে বিহারিটোলা কংগ্রেস সমর্থকদের সঙ্গে ও আতারটোলার তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ শুরু। সেই বিরোধের জেরে শনিবার দুদলের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থক ও একজন কংগ্রেস সমর্থকের মৃত্যু হয়। ১০ জন জখম হয়। পুলিশ দু’দলের ১৫ জনকে গ্রেফতার করে।
যারা ওই এলাকায় ভাঙন রোধের কাজে বরাত পেয়েছেন, তাঁদেরই এক ঠিকাদার বলদেব সিংহ বলেন, “আমার ভাগে ৯০ মিটার ভাঙন রোধের কাজ পড়েছে। ওই এলাকায় যা পরিস্থিতি তাতে এখন ওখানে কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছি না। ইঞ্জিনিয়াররাও যেতে চাইছেন না। ২-৪ দিনের মধ্যে যদি ভাঙন রোধের কাজ শুরু করতে না পারি বর্ষার আগে কাজ শেষ করতে পারব না। কারণ, ভাঙন রোধের যে কাজ আছে তা করতে দুমাস সময় লাগবে। পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া কাজ করতে গেলে আবার ওখানে গোলমাল হবে। এক ঠিকাদার মহম্মদ পিনারুদ্দিন বলেন, “পুলিশ প্রশাসন সাহায্য না করলে আমরা ওখানে ভাঙন রোধের কোনও কাজ করতে যাব না।”
|