ভুল চিকিত্সার অভিযোগ তুলে এক হাতুড়ে চিকিত্সকের বাড়িতে ঢুকে হামলার ঘটনা ঘটল। অভিযুক্ত এক রোগিণীর পরিবারের লোকেরা। অভিযোগ উঠেছে, চিকিত্সকের মায়ের হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপও মারা হয়। তাতে তাঁর একটি আঙুল কেটে গিয়েছে। ঘটনার পরে ওই চিকিত্সকের বাড়ির লোকেরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার নাজিরগঞ্জে।
ওই চিকিত্সক এলাকার সিপিএমের শাখা সম্পাদক। রবিবার হাওড়ার ওই এলাকায় উপনির্বাচন ছিল। সে দিনও ভোটের কাজে তিনি নিযুক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। নির্বাচনের পরদিনই তাঁর বাড়িতে হামলা হওয়ায় স্বভাবতই ঘটনাটি রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের তরফে অভিযোগ উঠেছে, এই আক্রমণের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং তার সঙ্গে তৃণমূলের মদত পাওয়া দুষ্কৃতীরা জড়িত আছে। স্থানীয় সিপিএম কর্মী, সমর্থকেরা থানায় বিক্ষোভও দেখান এ দিন। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। |
হামিদা বিবি।—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নাজিরগঞ্জের লিচুবাগান পঞ্চাননতলার বাসিন্দা মহম্মদ শাহিদ স্কুল শিক্ষকতার পাশাপাশি অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সাও করেন। যদিও তাঁর ডিগ্রিটি আরএমপি। যা কার্যত হাতুড়ে বলেই পরিচিত। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত শনিবার স্থানীয় এক মহিলাকে শাহিদের কাছে চিকিত্সার জন্য নিয়ে আসা হয়। অভিযোগ, ওষুধ খেয়ে ওই রোগিণীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। এর পরেই রবিবার ওই মহিলার পরিজনেরা শাহিদের চেম্বারে তালা দিয়ে যান। ওই দিন অবশ্য নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন শাহিদ।
অভিযোগ, সোমবার সকালে শাহিদ যখন বাড়ি ছিলেন না তখন তাঁর বাড়িতে ওই রোগিণীর পরিবারের লোকজন-সহ আরও কয়েক জন চড়াও হন। বাড়িতে একাই ছিলেন শাহিদের মা হামিদা বিবি। তিনি বলেন, “ওরা ঘরে ঢুকে ছেলের খোঁজ করছিল। ওকে না পেয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙতে গেল। বাধা দেওয়ায় চপার দিয়ে আমার হাতে মারল।” ধারালো ওই অস্ত্রের আঘাতে হামিদা বিবির বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গিয়েছে।
স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর স্বপ্না ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছিল। সিপিএম পাল্টা কিছু করলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও হুমকি দিচ্ছিল। শাহিদ সিপিএম নেতা বলেই তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা চালিয়েছে।”
স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের আরও অভিযোগ, এলাকার তৃণমূল নেতা মাসুদ আলম খান ওরফে গুড্ডুর মদতেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “গুড্ডু ঘটনার সময়ে ছিল না। ও হলদিয়ার রয়েছে। আর এটি কোনও রাজনৈতিক ঘটনা নয়। চিকিত্সক ও রোগিণীর পরিবারের ঝামেলা।”
অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দাও অবশ্য বিষয়টিকে রাজনৈতিক ঘটনা বলে মনে করছেন না। যেমন ওই এলাকার বাসিন্দা শেখ শাহাজাদা বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই ওঁর চিকিত্সা নিয়ে অভিযোগ ছিল। ভুল চিকিত্সার জন্যই এই ঝামেলা হয়েছে।”
|