নিজেদের অবস্থানে অনড়ই রাজ্য
নিরাপত্তা, প্রশাসনের ভার নিয়েই প্রশ্ন
ঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা দেখার ভার কাদের হাতে থাকবে এবং রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের কে নিয়ন্ত্রণ করবে এই প্রশ্নের নিষ্পত্তি চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
আজ, সোমবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে তাঁরা বিষয়টি তুলবেন বলে কমিশন সূত্রে রবিবার জানানো হয়েছে।
রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট শেষ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তখনই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা কোনও সম্মতি দেয়নি। ওই নির্দেশের সংশোধন চেয়ে ওই ডিভিশন বেঞ্চের কাছেই আবেদন জানিয়েছিল তারা। এ ছাড়াও পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে দাবি করে নির্দেশের সেই অংশেরও বদল চেয়েছিল কমিশন।
কিন্তু ওই আর্জি জানানোর পরেই হাইকোর্টে গরমের ছুটি পড়ে যায়। আজ আদালত খুলছে। প্রথম দিনেই প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের দ্বারস্থ হতে চলেছে কমিশন। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সে কথা আদালতকে জানাবে তারা। বুথ-ভিত্তিক এবং ভোটগ্রহণ কেন্দ্র-ভিত্তিক সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজনীয় বাহিনী জোগাড় করে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার ও কয়েকটি রাজ্যের কাছে বাহিনী চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব মেলেনি। ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। বাহিনী না-পাওয়ার দায় কমিশনের কাঁধেই চাপিয়েছে রাজ্য সরকার।
শনিবার কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে তারা বলেছে, ভোটের দিন ঘোষণা হতে দেরি হওয়ার জন্যই বাহিনী পেতে সমস্যা হচ্ছে। এর দায় রাজ্যের নয় কমিশনের। কমিশন নালিশ জানালে আজ সেই কথাই আদালতকে জানানো হবে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের দেওয়া নির্দেশ কী ভাবে মানা সম্ভব, তা আদালতের কাছেই জানতে চাইবে কমিশন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বার্থে নতুন নির্দেশিকা জারি করার জন্যও ডিভিশন বেঞ্চকে আর্জি জানানো হতে পারে বলে কমিশন সূত্রের খবর। পাশাপাশি, নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিনে রাজ্য ও কমিশনের মধ্যে যে চিঠি চালাচালি হয়েছে তা-ও আদালতের গোচরে আনা হবে।
রাজ্যের পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে রবিবার বলেন, “রাজ্যের চিঠিতে নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা নেই। নিরাপত্তার ব্যবস্থা কী হবে আমরা তা বিস্তারিত জানতে চাই।” কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করে দেওয়া হলেও রাজ্য সরকারের তরফে মোটেই সহযোগিতা করা হচ্ছে না। সে কথা আদালতকে জানিয়ে বলা হবে, তা সত্ত্বেও ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভোটপর্ব শেষ করতে কমিশন আগ্রহী।
রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার প্রসঙ্গে কোন কোন বিষয় সোমবার কমিশন হাইকোর্টে তুলবে তা-ও মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছে। বলা হবে, হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও পর্যাপ্ত বাহিনীর ব্যবস্থা করেনি রাজ্য। তা ছাড়া, সংবিধানের ২৪৩কে ধারা অনুযায়ী পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না-হওয়া পর্যন্ত পঞ্চায়েত এলাকার সব প্রশাসনিক অফিসার (ওসি থেকে ডিজি) কাজ করবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু রাজ্য তা মানতে নারাজ। এর মধ্যেই শনিবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকে ডাকেন নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু অন্য কাজ আছে জানিয়ে বৈঠকে আসেননি স্বরাষ্ট্রসচিব। কমিশন মনে করছে, এর মধ্যে দিয়ে রাজ্য ইচ্ছে করে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে।
রাজ্য সরকারের অবশ্য বক্তব্য, কমিশনই যে রাজ্যের প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ করবে এমন কোনও কথা ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত আইনে লেখা নেই। সেই কথাই হাইকোর্টকে জানানো হবে বলে ঠিক করে রেখেছে মহাকরণ।
এ দিকে, মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় সংঘর্ষ চলছেই। সংঘর্ষের যে সব অভিযোগ এসেছে, সে ব্যাপারে একটি রিপোর্টও তৈরি করেছে কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে গণ্ডগোলের জেরেই যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা-ও হাইকোর্টকে জানাবে কমিশন। শনিবার পর্যন্ত ৩৫টি ব্লকে এই ব্যবস্থা চালু ছিল। রবিবার তার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার আরও ২৪টি ব্লক যোগ হয়েছে বলে কমিশনের সচিব তাপস রায় জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সেই সব ব্লকের তালিকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কমিশনের নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন পেশের সময় বিডিও অফিসের ১০০ মিটারের মধ্যে মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য জেলাশাসকদের কাছে কমিশনের তরফে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানানোর জন্য তৈরি হলেও আজ আদালতে কমিশনের মূল লড়াই কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধেই। কমিশন মনে করে, বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার যে রায় দিয়েছিলেন তাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক মর্যাদাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায়কে খারিজ করে দিয়ে বলেছে, বিচারপতি সমাদ্দারের ওই রায় এই সংক্রান্ত অন্য কোনও মামলার ক্ষেত্রে আর প্রয়োজ্য হবে না। ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশও সংশোধন করার আর্জি জানিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রের খবর, গত তিন দিনে তাদের প্রধান আইনজীবী সমরাদিত্য পালের সঙ্গে মীরা পাণ্ডের বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে। কেন কমিশন এই আর্জি জানাচ্ছে, আজ সমরাদিত্যবাবু আদালতে তার ব্যাখ্যা দেবেন।
কমিশন সূত্রের খবর, ডিভিশন বেঞ্চ আগেকার নির্দেশ সংশোধন না-করলে, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। তবে আইনি এই টানাপোড়েনে পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে ব্যাহত না-হয় সে দিকে নজর রাখা হবে বলেও কমিশনের সূত্রটির দাবি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.