কোচবিহারে তৃণমূল কর্মী মানিক রায় খুনের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ জড়িতদের কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। এমনকী মানিকবাবু যে বাইক নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সেটির হদিসও মেলেনি। মানিকবাবু মোবাইল টাওয়ারের অপারেটর ছিলেন। তিনি কোচবিহার শহর লাগোয়া রাশিডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। গোসানিমারির পাহাড়গঞ্জ থেকে কাজ সেরে বাইক চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে, তাকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি ছোঁড়ে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেখান থেকে তাঁর বাড়ি মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে। সেখানেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে এলে মানিকবাবুর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। জেলার পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তে সমস্ত সূত্রই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের সন্ধানে খোঁজ চলছে।”
অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা মনিকবাবুর একটি সোনার আংটিও খুলে নিয়ে যায়। তবে মনিকবাবুর মোবাইলটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ তার কললিস্ট খতিয়ে দেখছে। শনিবার সকালে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক আবদুল জলিল আহমেদ মনিকবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকেদের সমবেদনা জানান। তৃণমূলের অভিযোগ, ফরওয়ার্ড ব্লক আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূলকর্মী মানিক রায়কে খুন করেছে। যদিও ফরওয়ার্ড ব্লক ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে দুষ্কৃতীরা একাধিক বাইকে চেপে মনিকবাবুর পিছু নিয়েছিল। ঘটনার পরে দুষ্কৃতীদের একটি বাইক কোচবিহারের দিকে, অন্যটি গোসানিমারির দিকে পালিয়ে যায়। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে মানিকবাবুর ব্যবসার লেনদেন সংক্রান্ত গোলমালের তথ্যও উঠে এসেছে। দলীয়কর্মী খুনের ঘটনায় আগামী ৩ জুন পসারীরহাটে প্রতিবাদসভার ডাক দিয়েছে তৃণমূল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মানিকবাবুরা তিন ভাই। তার মধ্যে বড়দাদা নান্টু রায়। রাশিডাঙ্গা বুথ কমিটির নেতা নান্টুবাবুর স্ত্রী মমতা রায় কোচবিহার ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য। কাজের ফাঁকে মনিকবাবু দাদার সঙ্গে তৃণমূলের নানা কর্মসূচিতে যোগ দিতেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগ, “ফরওয়ার্ড ব্লক ওই এলাকায় আমাদের পুরনো দলীয় কর্মী বলে যে সব পরিবার আছে, তাঁদের মধ্যে মনিকবাবুরা অন্যতম। ওঁর বৌদি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও ছিলেন। পুরনো আক্রোশ থেকে ভীতি সঞ্চার করতেই ফরওয়ার্ড ব্লক মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা ওঁকে খুন করেছে।” এ দিকে রাজ্য তৃণমূল সম্পাদক আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “পুরো ঘটনা নিয়ে দলের নেতা মুকুল রায়কে রিপোর্ট দিয়েছি। ওই পরিবারকে দলের তরফে সব রকম সাহায্য করা হবে।”
অন্য দিকে, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ পাল্টা দাবি, “তৃণমূলের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। ভোটের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ফরওয়ার্ড ব্লককে জড়িয়ে দিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করলেই আমাদের কেউ যে জড়িত নন, তা স্পষ্ট হবে। আমরাও চাই প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়ুক।” পুলিশ জানায়, মানিকবাবু একটি বেসরকারি সংস্থার দু’টি এলাকার মোবাইল টাওয়ারের অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে অংশীদারিতে কাঠের ব্যবসা শুরু করেছিলেন মানিকবাবু। |