রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
মারি তো ডাইনো
ই যে শ্রীসন্থ, এক দিনে, গার্লফ্রেন্ডকে তিন লাখের তিনটে জিনিস কিনে দিল, সে তো আমির-নগরের জুনিয়রমোস্ট ব্যাকটিরিয়া। ওরই যদি অত ঠাট-বাট, তবে আসল রাঘব বোয়ালদের লাইফস্টাইল কীরকম? সে এক্কেবারে অন্য ফর্মুলা! এই যেমন বিলিয়নেয়ার গোষ্ঠীর তাজা লায়ন ডিশন স্টিভেনসন। যখন তাঁর ক্যাশ দরকার, টাকা তুলতে আবার কষ্ট করে বাইরে বেরোতে হবে? যদি বৃষ্টি নামে? কিংবা যদি লাইন পড়ে? সব তানানানাকেই এক ঢিসুমে উড়িয়ে, তিনি নিজের রান্নাঘরেই একটা স্পেশাল এটিএম বসিয়ে রেখেছেন। আমেরিকার ধনকুবেররা আরও ক’মাইল সরেস! অসুখ হলে ডাক্তার ডাকা, তাঁর জন্য অপেক্ষা করা, রিপোর্ট নিতে দাঁড়িয়ে থাকা— ও পোষায় না। যদিও অনেক নার্সিং হোমই রিচি রিচ মহাশয়দের জন্য ওয়ান্ডারল্যান্ড-সম লাক্সারি কেবিন বানিয়ে দিচ্ছে, তা-ও। এখন তাঁরা নিজেদের অট্টালিকাতেই আস্ত ইমার্জেন্সি ইউনিট বসিয়ে রাখছেন। থরে থরে সাজানো ওষুধ, চিকিত্‌সা-সরঞ্জাম। শুধু অসুখটা হলেই রুগি ঢুকে পড়বেন!
আমাদের বাঙালি পূর্বজরা এই সাবজেক্টে প্রচুর সাজেশন দিতে পারেন। হুতোম প্যাঁচার বর্ণনাতে লুকিয়ে আছে হাটখোলার রামতনু দত্তের কথা। বাবু তো বাবু তনু বাবু। বাবুয়ানির দেব্তা। রোজ ঢাকা থেকে পঞ্চাশ টাকার (সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দী, তখনকার পঞ্চাশ টাকা এখন কত? অজ্ঞান হতে হয়!) নতুন কাপড় কিনে আনতেন, সেটাকে ধোয়াতেন ও তার পর সেই মহামূল্য কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে পরতেন, যাতে তাঁর কোমরে কাপড়ের দাগ না লাগে। এবং, এক বার পরেই ফেলে দিতেন। তাঁর সমসাময়িকরা পায়রা-কুকুরের বিয়েতেই লাখ রুপাইয়া খরচ করতেন।
ইদানীং কালে, তাঁদেরই মান রেখেছেন লিয়োনা হেমসলে। হোটেল রিয়েল এস্টেট-এর বেসাতি করে দিব্যি মহারানি হয়ে বসেছিলেন, তবে দুষ্টুলোকে কেন জানি তাঁকে শয়তান বুড়ি বলে ডাকত। বয়স সন্ধের দিকে গড়াতেই, পরিবারকে লবডঙ্কা দিলেন। প্রায় সমস্ত সম্পত্তি, হবে সাতষট্টি কোটি টাকার মতো, উইল করে লিখে দিলেন পেয়ারের ‘ট্রাব্ল’-এর নামে। সে তাঁর আদরের মালটিজ কুকুর। তিনি তো চক্ষু বুজলেন, কিন্তু সেই পুঁচকে কুকুর (রাম রাম, কুকুর বললেই একটি খিটখিটে পেত্নি নেমে ঘাড় মটকাতে পারে, প্রিন্সেস বলে ডাকবার হুকুম দিয়ে গেছেন) রোজ কিডন্যাপের হুমকি ফোন পেত। কেউ কেউ তাকে বাড়ির সারমেয়-খোকার বউও করে নিয়ে যেতে চাইত। কিন্তু এক বেরসিক জজ তার সম্পত্তির খানিকটা কমিয়ে দিয়েছিলেন। সেই অভিমানেই কি না কে জানে, গত বছরই ট্রাব্ল মালকিনের কোলে ফিরে গিয়েছে। ডাক্তাররা বলেছেন, বয়স হয়েছিল ঠিকই কথা, কিন্তু ওই রকম মোটকা কুকুরও দেখা যায় না! হবে না, ওর সসেজের জন্যই খরচ হয়েছিল এগারো কোটি টাকা!
দিনকাল যা, খান কয় ব্যাট-বল বা গাড়িদৌড়ের টিম কিনলেও মোটে ইজ্জত মিলছে না। প্রাইভেট জেট তো আরবি তেল ব্যাপারীরা সের দরে কিনে সাজিয়ে গুছিয়ে গুদামে ডাঁই করে ফেলে রাখেন। নিউ এজ ধনীরা এখন তুমুল খরচা করে প্রমোদতরণী নিয়ে ঘুরছেন। তাঁদের মন রাখতেই এখন একটা ঝিংচ্যাক সুপারনৌকো তৈরি চলছে। বলুন তো তাতে কী আছে? হেলিপ্যাড? হল না, হল না। একশো বছর আগেকার খবর। ওতে আছে একখানা আস্ত আগ্নেয়গিরি! রীতিমত জ্যান্ত। বোতাম টিপলেই আগুন বিশ্বস্ত পোষ্যের মতো জিভ বের করে ছুটে আসবে। এ নৌকোর প্রাইস-ট্যাগ প্রায় ৭,১৫৪ কোটি টাকা।
কেনার লোক? প্রচুউউর। কত লোকেই দুবাই গিয়ে তিন লাখ তেত্রিশ হাজারের ককটেল কিনে খাচ্ছেন। তাতে নাকি যে কনিয়াক-টা মেশানো সেটা ১৭৭৮-এর ফ্রান্সে বোতলবন্দি করা হয়েছিল, লিকারটা ১৭৭০-এর। বাকি উপকরণের জন্ম ১৮৬০-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে। এক পাত্তরেই মারি আঁতোয়ানেত-এর পাশে গিয়ে উপস্থিত হবেন। আর সারা বিশ্বে এক মাত্র দুবাই ও তার আশেপাশের মার্কেটে দেখতে পাবেন আর্সেলাইন এক্সটেন। কোনও সুপারহিরো নয়, এটা একটা অতি আরামদায়ক অফিস-চেয়ার। যার দাম আট কোটি টাকারও বেশি। ক্যাডিলাক ফেরারির সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট যে কোম্পানির, তারাই বানিয়েছে। কিন্তু শেখদের মুলুক ছাড়া কোথাও বিক্রি করে না। কারণটা বলব না। বরং আলাপ করিয়ে দিই ক্যাসিনো মালিক স্ট্যানলি হোপ-এর সঙ্গে। এক কোটি তিরাশি লাখ টাকা দাম দিয়েছেন খান দুই হোয়াইট ট্রাফ্ল কিনতে। নিলামে। জিনিসটা হচ্ছে সাদাটে মাশরুমের খুব ভাল কচুরি মতো। অর্থাত্‌ ওটুকু তাঁর কাছে জলখাবারের খরচা। রাশিয়ায় আছেন ও দেশের মার্ক জুকেরবার্গ পাভেল ডিউরভ। স্থানীয় সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের প্রতিষ্ঠাতা। কম বয়সেই টাকার এভারেস্টে। গত বছর হঠাত্‌ বেরিয়ে এলেন তাঁর সেন্ট পিটার্সবার্গের অফিসের চকচকে জানলায়। পথচারীদের দিকে ছুড়ে ছুড়ে দিতে থাকলেন রাশি রাশি রুব্ল। সবে হাজার দুই ডলার মতো বিলিয়েছেন, থামতে হল। তাঁর নিজের জবানিতে, রাস্তার মানুষগুলো জন্তুর মতো আচরণ শুরু করল! তবে কথা দিয়েছেন, এমন অনেক কিছু তিনি পরেও করে দেখাবেন। ভারতীয় গপ্পোও আছে। এক ধনীর দুলালকে স্কুল থেকে হোমওয়ার্ক দিয়েছিল, স্ক্র্যাপবুক-এ মহাত্মা গাঁধীর মুখ চিপকে আনবে। সে পাঁচশো টাকার নোট থেকে গাঁধীবাবার ছবি কাঁচি দিয়ে কেটে, সেঁটে নিয়ে চলে গেল।
করিনা কপূর খান কীসে কম যান? ফেভারিট ডেস্টিনেশন বললেই স্বভাবসিদ্ধ মুচকিতে বলবেন জয়পুরের ‘দ্য ওবেরয় রাজভিলা’। তার পর রহস্য করে বলবেন, ওদের বাথটাবটা না দুর্দান্ত। ইতালিয়ান মার্বলের। শুয়ে শুয়ে দেখা যায় লাগোয়া একটা অপূর্ব বাগান। ওখানে একটা ‘মহারানি স্পা’ করাই আমি, তাই ঘন ঘন ছুটে যাই। কী মনে হতে, খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেগমসাহেবার ওই আরাম-প্রোজেক্টের এক রাত বুকিংয়েরই খরচ আড়াই লাখের মতো। স্পা অতিরিক্ত!
দ্বীপ কেনা, আকাশের একটা তারা কিনে নিয়ে সেটার নাম নিজের নামে দেওয়া— আকছার হচ্ছে। বরং বুকের পাটা দেখিয়ে এগিয়ে আছেন কুখ্যাত বলে বিখ্যাত রিচার্ড ব্র্যানসন। রামবাবু টমবাবুদের মতো এয়ারলাইন্স কিনে কি আর তাঁর মন ভরে? একটা স্পেস টুুরিজ্ম কোম্পানি চালু করেছেন। ভার্জিন গ্যালাক্টিক। স্পেসক্রাফট, স্পেসশিপ লঞ্চার তো নস্যি। তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে মানুষদের মহাকাশে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। তবে সেই স্পেস-ফ্লাইটের টিকিটের দামটা বেশিই রেখেছেন, একশো চল্লিশ কোটির মতো। ওই যাতে বাজে ক্রাউড না ঢুকে পড়ে। ব্র্যাড পিট, অ্যাস্টন কুচার, টম হ্যাঙ্ক্সরা সর্বাগ্রে সিট বুক করে রেখেছেন। কেটি পেরি প্রথমে তাঁর বয়ফ্রেন্ড রাসেল ব্র্যান্ড-কে একটি টিকিট প্রেজেন্ট করেন, ক’দিন বাদেই ‘ও কেন একা যাবে, একা মহাকাশে ছাড়া কি উচিত?’ ভেবে নিজের জন্যও একটা সিট নিয়ে রাখলেন। তার পর ব্র্যান্ড-এর সঙ্গে তাঁর এনগেজমেন্ট বিয়ে ডিভোর্স সব হয়ে গেল, শুধু স্পেস ফ্লাইটটা এখনও ছাড়ল না!
কিয়েরা নাইট্লি বিয়ে করেছিলেন খুব সাধারণ পোশাকে। দেখে মনে হচ্ছিল অফিসে এসেছেন। তবে হানিমুন-ফেরতই চমকে দিলেন সবাইকে। তাঁদের খামারবাড়ির পিছনের জমিতে নাকি তাঁর নতুন স্বামী ওয়েডিং গিফ্ট পুঁতে রেখেছেন। দাম কমই। পঁচিশ হাজার। কিন্তু উপহারটা এসেছে ডিরেক্ট আরব্য রজনী থেকে। শতবর্ষ পার হওয়া অলিভ গাছ! একই রকম গাছ অ্যাঞ্জেলিনা জোলিও ব্র্যাড পিটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরটার দাম পড়েছে দশ লাখের একটু ওপরে। কারণ ওটা দু’শো বছরের পুরনো অ্যান্টিক অলিভ ট্রি। তবে আইডিয়ার দৌড়ে এগিয়ে মাই ডিয়ার ওয়াটসন জুড ল। এক কালে গার্লফ্রেন্ডকে একটা বেবি পিয়ানো দিয়েছিলেন। এক কোটি বারো লাখের। তাতে বাজনা তেমন কিছু হয় না। তবে বাক্সটা খোলা যায়। আর খুললে জ্বলে উঠবে হিরে আর স্যাফায়ার বসানো রত্ন-অঙ্গুরীয়। কিন্তু দু’মাস বাদেই তাঁর গার্লফ্রেন্ডটি পালিয়ে গিয়েছিল। তবে, দামী গিফ্ট-এর রাজসিংহাসনে এখনও টেলর-বার্টন ডায়মন্ড জাঁকিয়ে বসে। পৃথিবীর প্রথম মিলিয়ন ডলার পার করা হীরকখণ্ড। রিচার্ড বার্টন নিলামে কিনে এলিজাবেথ টেলরকে পরিয়েছিলেন। তখন তাঁরা পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত দম্পতি, আর হিরেও সর্বক্ষণ লিজ-এর আঙুল ছুঁয়ে থাকতে থাকতেই চির-সেলেব্রিটি! বিচ্ছেদের পর, লিজ হিরে আবার নিলাম করে, একটা হাসপাতাল বানিয়ে গিয়েছেন।
তবে গিফট এপিসোডে তুলকালামটা করেছেন স্কট আলেকজান্ডার। ২০০৬ সালে। এক সুন্হেরি বিকেলে লোকজন ডেকে বললেন, দেখুন বুলগেরিয়ার একটা শহর কিনছি আমি, কিন্তু যা আইন-কানুন আপনাদের, শুধুমুধু রাজা হয়ে বসা যাবে না, তো আপনাদের কথাও থাক, আমার ইচ্ছেও থাক, আমি একটা রিসর্ট-ই নাহয় বানিয়ে রাখব ওখানে। শুধু শহরটার নাম পালটে নিজের নামে রাখব। আলেকজান্ডার। শুনেই সবার চোয়াল ঝুলে পড়ল। একবিংশের পৃথিবীতে এমন মধ্যযুগীয় খেয়াল কেন? আলেকজান্ডার বললেন, আরে, এত খেটেছি, কুবের বনেছি, নেশা-টেশা করিনা, ইতনা অ্যাচিভমেন্ট! তাই এটা জাস্ট নিজেকে একটু উপহার দিচ্ছিলাম।
নির্বোধ আকাট আইন। কিছুতে গোটা শহর কিনতে দিল না তাঁকে! তিনিও দমবার পাত্র নন। নতুন খেয়াল মনে আনলেন। একটা হরমোন প্রোগ্রাম নিয়ে মাতলেন। সাড়ে আট কোটি টাকার প্রোজেক্ট। এতে তিনি অন্তত ১৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচবেন। নিজেকে এই গিফ্টটা দিয়েই ছাড়বেন, পণ ধরে আছেন এখনও।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু উপহারটা দিতে চান তাঁর নিজেরই মাতৃভূমিকে। এত বার হোয়াইট হাউসে এসেছেন, খুব খুব খারাপ লেগেছে তাঁর। কী হতচ্ছাড়া অবস্থা! এ দেশ সে দেশের ভাল ভাল পজিশনের লোকেরা আসছে, তাদের কিনা যুগের পর যুগ একই রকম পেন্ট করা শুকনোমার্কা দেখতে ঘরে বসাচ্ছে! মিস্টার ট্রাম্প সিধে হোয়াইট হাউসকে প্রস্তাবটা দিলেন। এই তোমরা একটা ভাল দেখে বলরুম বানাও তো। সেরা আর্কিটেক্ট আনো, কমিটি বসাও, প্রেস্টিজটা বাঁচাও। যা খরচ হবে আ-আ-মি দেব। কিন্তু এ কথা শোনার পর ওবামারা কেউ নাকি তাঁর ফোনই তুলছেন না।
বিখ্যাত সিনে-পরিচালক জেমস ক্যামেরন অবশ্য ছিমছাম টাইপ। একটা অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ কিনে রেখেছেন। ওই মাঝেসাঝে সমুদ্রের তলাটা থেকে ঘুরে আসবেন। জায়গাটা ভাল, নিরিবিলি আছে, কেউ বেশি একটা যায়-টায় না, পিয়োর আনডিস্টার্বড নেচার। নতুন ফিল্ম-প্লট ভাবতে বিলক্ষণ সুবিধা।
আর এক জন অতীব পরিচিত মানুষের কথা বলি। বিল গেট্স। দীর্ঘদিন পৃথিবীর প্রথম তিন ধনকুবেরদের মধ্যে আসা-যাওয়া করছেন। বছর কুড়ি আগে, এক সন্ধেয় বাড়ি ফিরে, সহধর্মিণীকে বললেন, একটা নোটবুক কিনতে হবে, বুঝলে। শ্রীমতী খুশি হলেন, সত্যি তো, সব সময় কি আর কম্পিউটারে লিখেপড়ে কাজ করতে ভাল্লাগে! বিল বললেন, ঠিকই, তবে একটু বিশেষ ধরনের নোটবই লাগবে আমার। তা, সেই নোটবই কিনতে, খরচা হল সাড়ে একাত্তর কোটি টাকার একটু বেশি। সেটা এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে দামি বই। কোডেক্স লেস্টা। হলদেটে ভঙ্গুর পাতা। তাতে প্রায় তিনশো বছর আগে, মহাবিজ্ঞানী লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চি আবিষ্কারের হিরে ফলিয়ে গেছেন। আসছে যুগগুলোয় এরোপ্লেন কেমন হবে, চাঁদের অবস্থাটা কেমন ও কেন, ইলেকট্রিসিটি নিয়ে কী কী করা যায়, এই সব বাঘা তত্ত্ব ছবি এঁকে লিখেজুখে ট্রিমেন্ডাস কাণ্ড করে রেখেছেন। আর সেটাই বিল গেট্স-এর পছন্দ হল। এ ডায়েরি পড়ে তো শুধু নতুন প্রযুক্তির রসদ পাওয়া যাবে তাই নয়, ও নোটবুকে রয়ে গেছে ভিঞ্চির দিনরাত, সত্যি বলতে কী তাঁর কোহিনুর মগজখানাই কাগজে-কলমে সংরক্ষিত ওখানে। আর গেট্স সেটাই কিনে ফেললেন!
সময়, যুগান্ত পর্যন্ত কিনে ফেলা যায়! দাম পড়বে প্রায় দু’শো চৌত্রিশ কোটি টাকার কাছাকাছি। ওই খরচেই আমাজনের সিইও জেফ বিজোস পশ্চিম টেক্সাসের পাহাড়ের নীচে পুঁতে রাখছেন অতিকায় এক ঘড়ি। ভবিষ্য-মানুষের জন্য। যখন আশেপাশে কেউ থাকবে না, তখনও এই ঘড়ি টিকটিকটিক করেই যাবে, প্রকৃতি থেকে শুষে নেওয়া শক্তির জোরে। শুধু কেউ সামনে এলেই দেখাবে সময়, আর এক-একটি মিলেনিয়াম সাঙ্গ হলে ঘড়ির মধ্য থেকে দম দেওয়া কোকিল বেরিয়ে এসে গান ধরবে। প্রতিটি মিলেনিয়ামের জন্য নতুন নতুন সুর। এ রকম আরও কয়েকটা ঘড়ি কিছু দুর্গম জায়গায় গুপ্তধন বানিয়ে রাখবেন বলে প্ল্যান করেছেন তিনি।
তা হলে ডাকসাইটে বড়লোক হলে বিয়ে জন্মদিন অ্যানিভার্সারির পার্টিতে ঠিক কী করতে হয়? এক, বলিউড হলিউড স্টারদের প্রায় তাঁর সিনেমার সমান পারিশ্রমিক দিয়ে, বর বা বউয়ের বন্ধু সাজিয়ে আনতে হয়। দুই, আর এ নেক্সট হিড়িক পড়েছে নোয়ার নৌকাটা কেনার। সৌজন্যে গত বছরের সেই মেগাহিট একুশে ডিসেম্বর আতঙ্ক। দাঁড়ান, কেসটা খোলসা করি। ধরুন শহরটাকে টেররিস্ট অ্যাটাক করল। বা সুনামি এল, কিংবা উল্কা পড়ল, না হয় কলেরা-গুটিবসন্তরাই হঠাত্‌ খুনে মেজাজে ফিরে এল। উত্তাল বিদেশি সিনেমা। শহর উজড়ে মানুষ পালাচ্ছে, প্রেমিকা মরছে, প্রেমিক ফ্রাস্ট্রু খেয়ে চড়চড় করে বাড়তে থাকা খাদে ঝাঁপ দিচ্ছে। আর রইস আদমিরা সোফায় পা তুলে গ্ল্যাডিয়েটর-যুদ্ধে রাজার ভূমিকা পালন করছে। লাস্ট সিনটা নিয্যস বাস্তব। আমেরিকার কান্সাস বলে একটা জায়গায় মাটির নীচে মিসাইল রাখার ভাণ্ডার মতো ছিল। সেটাকেই বিল্ডার ল্যারি হল আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার বানিয়ে দিয়েছেন। যে কোনও ভাবে প্রলয় এলেই এলিভেটরে চড়ে স্যাট করে সেঁধিয়ে গেলেই হল। নীচে রয়েছে নোয়ার নৌকোর সেই আধুনিকতম সংস্করণ! সে জিনিস শুধু প্রলয়-প্রুফ অ্যাপার্টমেন্ট নয়। মাটির অন্দরে বিলাসে থইথই ‘অল্টার-পৃথিবী’। খানাপিনাগানাবাজানা মাল্টিপ্লেক্স সুইমিং পুল রাজাধিরাজ-টাইপ বন্দোবস্ত তো বটেই, সঙ্গে আছে পোষ্যকে নিয়ে বেড়াবার একটা গ্র্যান্ড গার্ডেন, এবং তিষ্ঠ, একটি শস্যশ্যামলাং তৃণভূমি। ওপরের মানুষ খাবার না পেয়ে যখন খাবি খাবে, নীচে তখন এঁরা হাতপা ছড়িয়ে কৃষকের জীবনটাও গো অ্যাজ ইউ লাইক মেজাজে চাখিয়া দেখিবেন। শোনা গেছে, এই সমস্ত অ্যাপার্টমেন্ট নাকি বুক্ড হয়ে আছে। এখনও মালিকরা মাঝেমধ্যে এখানে ছুটি কাটাতে আসছেন আর অপেক্ষা করছেন কবে সত্যি আসে সেই শেষের সময়। কিন্তু আসল দিনে যদি একটাও হেল্প সিস্টেম কাজে না দেয়, ফেল মারে সব রকমের সিকিয়োরিটি, তখন? তখন তো মাটির ওপরে ফোন করলে বেজেই যাওয়ার কথা? অর্থাত্‌, প্রোমোটার ফ্ল্যাটটা গছিয়ে দিয়ে দুনিয়া ছেড়ে কেটে পড়ল তো! টাকা জলে। ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে এগারো কোটি গচ্চা। ধুস! সুপার করোড়পতিদের তাতে ঘণ্টা। এমনিতে ওটা জলের দরেই মিলেছে, ওই গ্যারান্টি নেই বলেই তো। ডলার তো আজ যাবে, কাল আবার কত্ত গজাবে। তখন সগ্গে গিয়ে ভগবান, সে ক্রুশবিদ্ধ বা বাঘের-ছাল-পরা, যাকে আগে পাবেন তার সঙ্গেই ম্যাচ ফিক্সিং করে ফের ব্যাক করে আসবেন! বেটিং-এর রেট কত চলছে ওটার? কেউ জানেন?

ছবি: সুমন চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.